‘সম্পন্ন’ নাম দিয়েও হইলো না শেষ!
উদ্ধোধন করে নাম দিয়েছিলেন ‘সম্পন্ন’। কাটমানির দাপটে দু’মাসও পার হলো না। মমতা ব্যানার্জির উদ্বোধন করা আলিপুরের মাল্টি লেবেল কার পার্কিং ছাদে ধরা পড়ল ফাটল! সেই ছাদের ফাটল ভেদ করে চুঁইয়ে পড়ছে জল।
গত ৯ জানুয়ারি আলিপুর এলাকায় মাল্টি লেবেল কার পার্কিং ব্যবস্থার উদ্বোধন করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। নাম দিয়েছিলেন ‘সম্পন্ন’। প্রায় ৫০ কোটি টাকা খরচ করে তৈরি করা হয়েছিল ছয়তলা বিশিষ্ট এই কার পার্কিং ব্যবস্থা। এখন সেই কার পার্কিং ব্যবস্থার ফাটলের মেরামতি করার জন্য হিডকো’র তরফ থেকে অতিরিক্ত জেনারেল ম্যানেজার চিঠি দিয়েছেন পূর্ত দপ্তরের আলিপুর ডিভিসনের এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ারকে। পূর্ত দপ্তরকে লেখা চিঠির বিষয়বস্তুতে উল্লেখ করা হয়েছে, মাল্টি লেভেল কার পার্কিং (সম্পন্ন)-র ছয়তলার ছাদে বেশ কিছু জায়গায় ফাটল ধরা পড়েছে। সেই ফাটল এতটাই যে সেখান থেকে জল চুঁইয়ে পড়ছে। দ্রুত মেরামতি করার জন্য হিডকো’র তরফ থেকে পূর্ত দপ্তরকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
সরকারি পরিকাঠামো গড়ার যে কোনও কাজ এরআগে বহুবার বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে। প্রতিটি ঘটনাতে সমানে এসেছে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ অর্থে কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ। জেলা সফরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে পর্যন্ত প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে তা নিয়ে সরব হতে দেখা গিয়েছে। কিন্তু কলকাতা শহরে নবান্নের অনতিদূরেই মাত্র দু’মাস আগে উদ্বোধন হওয়া কাজের এই পরিণতি রীতিমতো উদ্বেগের। অথচ উদ্বোধনের সময় মুখ্যমন্ত্রী কার পার্কিং’র প্রশংসা করতে গিয়ে উচ্চারণ করেছিলেন তাঁর মন্ত্রীসভার সহকর্মী অরূপ বিশ্বাস ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের নাম। ওইদিন মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, ‘‘উত্তীর্ণ, ধনধান্য’র পাশে এই মাল্টি লেবেল কার পার্কিং’এর নাম দিলাম সম্পন্ন। এখানে ৪০০ বাস, গাড়ি পার্ক করা যাবে। অরূপ বিশ্বাস, ববি ভালো কাজ করেছে।’’
পূর্ত দপ্তরের তরফ থেকে হিডকো’র দেওয়া চিঠির কথা স্বীকার করা হয়েছে। তবে হিডকো কর্তৃপক্ষ যে অভিযোগ করেছে তা পূর্ত দপ্তরের আলিপুর ডিভিসনের ইঞ্জিনিয়াররা মানতে চাননি। তাঁদের বক্তব্য, ‘‘হিডকো কর্তৃপক্ষের চিঠি আমার পেয়েছি। ওঁরা যে ফাটলের অভিযোগ করছে তা ঠিক নয়। ওখানে রুফ টপে কিছু কাজ হচ্ছিল, সেইজন্য সমস্যা দেখা দিয়েছিল। আমরা ঠিক করে দিচ্ছি।’’ যদিও হিডকো’র তরফে পূর্ত দপ্তরকে চিঠি দেওয়ার পাশপাশি মাল্টি লেবেল কার পার্কিং’এর ছয় তলায় ফাটল ও চুঁইয়ে পড়া জলের ছবি পর্যন্ত চিঠির সঙ্গে জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
গত ২০১৭ সালে হাওড়ার আন্দুল রোডে সাময়িক ভবঘুরে আবাসে একটি তিনতলা বাড়ি তৈরি করে পূর্ত দপ্তরের সামাজিক ক্ষেত্র। প্রায় ৪ কোটি টাকা খরচ করে নির্মিত ভবঘুরের জন্য নির্মিত এই ভবন ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে উদ্বোধনও করা হয়ে যায়। উদ্বোধনের পরের মাস থেকে বেহাল হতে শুরু করে ভবঘুরে আবাস। এখন সেই ভবনের হাল ভয়াবহ। রাজ্য সরকারের পরিচালনাধীন পূর্ত দপ্তরের অধীন ভবঘুরে আবাস কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে পরিদর্শন করার পর বেশ কিছু সমস্যা নজরে আসে। নির্মিত ভবনের ভবঘুরের জন্য ব্যবহারযোগ্য শৌচাগারের টাইলসের ফাটলের পাশাপাশি ফুলে উঠেছে। নতুন মেঝের রং এক মাসের মধ্যে উঠে গিয়েছে। এমনকি ঘরের রং, বাইরের দেওয়ালের প্লাস্টার খুলে পড়ে যাচ্ছে। ঘরের দেওয়াল থেকে জল চুঁইয়ে পড়ার ফলে ভিজে থাকছে দেওয়াল। কার্যত নির্মিত ভবনটি প্রায় ৪ বছরের মধ্যেই ভগ্নদশায় পরিণত হয়েছে।
ভবঘুরে আবাসের বর্তমান কন্ট্রোলার পূর্ত দপ্তরের আধিকারিককে চিঠি দিয়ে নতুন ভবনের পরপর এই সমস্যাগুলি লিখে জানিয়েছেন, ‘‘৩ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা খরচ নির্মিত ভবনটি কয়েক মাসের মধ্যে যেভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এটা খুবই দুঃখজনক।’’ নতুন করে ক্ষতি মেরামত করার জন্য একটি পরিদর্শন টিম গিয়ে ভবঘুরে আবাসের চিহ্নিত ক্ষতিগ্রস্ত কাঠামো দেখে আসে। নতুন করে মেরামতি করতে প্রায় ৩১লক্ষ টাকা খরচ ধরা হয়েছে।
রাজ্যে এখন এটাই দস্তুর হয়ে দাঁড়িয়েছে। কাটমানির গ্রাসে পড়ে উদ্বোধনের পরপরই বেরিয়ে আসছে কঙ্কাল।
Comments :0