CHOPRA TMC ABDUL

চোপড়ায় ফের ফাঁস ভিডিও, তৃণমূলের আরেক দুষ্কৃতীর কুকীর্তি সামনে

জেলা

আপাতত ‘পলাতক’ আবদুল হক। তার বাহিনীর কুকর্মের ভিডিও বেরিয়েছে চোপড়ায়।

জনমতের চাপে জেসিবি হেপাজতে। কিন্তু গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে চোপড়ার আরেক দুষ্কৃতী আবদুল হক। সদ্য একটি ভিডিও বেরিয়ে পড়ায় তৃণমূলের মদতপুষ্ট এই দুষ্কৃতীকে গ্রেপ্তারের দাবি উঠেছে। এই আবদুলের মাথাতেও তৃণমূল বিধায়ক হামিদুর রহমানের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ প্রবল। 
বেরিয়ে পড়া ভিডিও-তে দেখা রক্তাক্ত গিয়েছে এক ব্যক্তি চেয়ারে আসীন অপরজনের পা ধরতে বাধ্য হচ্ছেন। তাঁকে কান ধরে ওঠবোস করতেও বাধ্য করা হচ্ছে। ভিডিও’র সত্যতা ‘গণশক্তি’ যাচাই করেনি। তবে স্থানীয়দের বক্তব্য চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তি আবদুলের ভাই খালেকের। পা ধরছেন তৃণমূলেরই পঞ্চায়েত স্তরের এক নেতা। পঞ্চায়েতে আসন বিলি নিয়ে আলোচনায় বিধায়কের সামনে আবদুলের সঙ্গে পঞ্চায়েত স্তরের ওই নেতার তর্কাতর্কি হয়। পরে আবদুলের বাহিনী তুলে নিয়ে আসে ওই তৃণমূল নেতাকে। 
প্রশ্নের মুখে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুর পুলিশ জেলার সুপার জেবি থমাস বলেছেন, ‘‘আবদুলের বিরুদ্ধে বহু মামলা আছে। সে পুলিশের খাতায় ওয়ান্টেড। তাকে ধরতে একাধিক অভিযান চালানো হয়েছে। নিয়মিত তল্লাশিও চলছে।’’
চোপড়ার লক্ষ্মীপুরে রাস্তায় সালিশী সভা ডেকে যুবক-যুবতীকে নৃশংস মারধরের ভিডিও বেরিয়েছিল গত সপ্তাহে। দেখা গিয়েছিল তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতী তাজিমুল হক ওরফে জেসিবি-কে। চোপড়ায় সিপিআই(এম) কর্মী খুনে অভিযুক্তকে এতদিন ধরেনি পুলিশ। তীব্র ধিক্কারের জেরে আপাতত পুলিশ হেপাজতে বিধায়ক হামিদুরের  সহযোগী বলে পরিচিত জেসিবি। পাশেই সুজালিতে একই ধরনের লুটপাটে অভিযুক্ত আবদুল হক, গা ঢাকা দেয় এরপরই। সেই সময়েই বেরিয়ে পড়েছে তার বাহিনীর কুকর্মের এমন একাধিক ভিডিও। 
আন্তর্জাতিক চোরাচালানে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে আবদুলের বিরুদ্ধে। চোরাকারবারি, খুন, লুটপাট, ছিনতাই, অস্ত্রের কারবার সহ একাধিক অপরাধে নাম উঠে আসে আবদুলের। উত্তরবঙ্গ পুলিশের প্রাক্তন আইজি কুন্দনলাল টামটা দেখামাত্র গুলির নির্দেশ দিয়েছিলেন। গত প্রায় এক দশক তৃণমূলের হয়ে পঞ্চায়েত দখল, প্রকল্পের টাকা লুট থেকে শুরু করে সালিশি সভার নামে জরিমানা বসিয়ে লুটের অভিযোগ ওঠে। লক্ষ্মীপুরে যেমন জেসিবির শাসন কায়েম হয়েছিল, একইভাবে গত এক দশক ধরে সুজালির ত্রাস হয়ে উঠেছিল আবদুল। 
২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের জিয়াগুরি গ্রামে একটি হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে অন্য ধর্মের ছেলের সাথে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করে।আব্দুল বাহিনী স্বতঃস্ফূর্তভাবে সেখানে গিয়ে সালিশি সভা বসায়। তিনলক্ষ টাকা জরিমানা করে। ওই গরিব পরিবার তিন লক্ষ টাকা দেওয়ার ক্ষমতা ছিল না।  ওই পরিবারের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে তাদের বিরুদ্ধে। সুজালি গ্রাম পঞ্চায়েতের ২৭ টি বুথে নানান অজুহাতে সালিশি সভা করে প্রচুর জরিমানা আদায় করে। 
তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, যে আব্দুল এক সময় এলাকায় চুরি ছিনতাই করে বেড়াতো, শুধুমাত্র রাজনীতির ছত্রছায়ায় থেকে আজ কয়েক কোটি টাকার মালিক হয়েছে। সুজালী গ্রাম পঞ্চায়েতে আব্দুলের নেতৃত্বে বধির, রৌশন ,হাফিজ, খালেক, আমিরুলরা প্রতিটি গ্রাম সংসদে নিজস্ব বাহিনীর গড়ে তোলে। যুব সম্প্রদায়কে বিপথগামী হতে বাধ্য করে তাদের হাতে আগ্নেয়াস্ত্র গুঁজে দিয়ে এলাকার ত্রাস তৈরি করে। 
ওই নেতার আরো অভিযোগ, গত পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পর্যন্ত আবদুল চোপড়ার বিধায়ক হামিদুর রহমানের ছত্রছায়ায় থেকে রাজ করত। গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে হামিদুর রহমানের মেয়ে আরজুনা বেগম জেলা পরিষদে নির্দল প্রার্থী হয়ে হেরে যাওয়ার পরে আবদুলের সঙ্গে বিধায়কের দূরত্ব তৈরি হয়। তারপর থেকেই আবদুল ক্রমশ কোণঠাসা হতে থাকে। বর্তমানে সে পলাতক।
সুজালি ইসলামপুর ব্লকের অধীনে হলেও বিধানসভার নিরিখে চোপড়ায় পড়ে। বিধায়কের সঙ্গ ছাড়তেই আবদুলকে দলের সুজালির অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। বর্তমানে যদিও আবদুলের স্ত্রী সুজালি পঞ্চায়েতের প্রধান। ২০২৩’র পঞ্চায়েত ভোটেও সুজালিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতে আবদুল শিবির।
সিপিআই(এম) উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক আনোয়ারুল হক বলেন, ‘‘জেসিবি ও আবদুল মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। তৃণমূল এই দুই সমাজবিরোধীকে কাজে লাগিয়ে এলাকায় তোলাবাজি, জরিমানা, পঞ্চায়েতে লুটপাট সহ সরকারি কর্মীদের কাছ থেকে নানান অজুহাতে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করত। আজ আবদুল পলাতক। সমাজবিরোধীদের এবং সন্ত্রাসের মাথাদের শেষ বিচারে মানুষ মান্যতা দেন না। এই প্রভাব ক্ষণস্থায়ী, তার প্রমাণ আবদুল। একই পরিণতি হবে ইসলামপুর ও চোপড়ার ত্রাস সৃষ্টিকারীদের।’’
আনোয়ারুল হক বলেন, ‘‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে আমাদের দায়িত্ব মানুষকে সঠিক রাস্তা দেখানো। আমরা সে চেষ্টা করছি।’’

Comments :0

Login to leave a comment