OMR SHEET SCANDAL

সদ্যসমাপ্ত টেটের ওএমআর সেই কুন্তলের বাড়িতে

রাজ্য কলকাতা

CPIM west bengal panchayat election TMC  BJP BENGALI NEWS

মাত্র দেড় মাস আগে, গত ১১ ডিসেম্বর ছিল পরীক্ষা। সেই টেটের ওএমআর শিট, একাধিক টেট পরীক্ষার্থীর অ্যাডমিট কার্ডও মিলেছে নিয়োগকাণ্ডে ধৃত যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষের ফ্ল্যাটে। ইডি’র তল্লাশিতেই তা মেলে। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি, সদ্য শেষ হওয়া টেটের ১৮৯টি ওএমআর শিট মিলেছে তল্লাশিতে।

সোমবার এই তথ্য আদালতে জানানোর পরই বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন আপাতত ইডি’র হেপাজতে থাকা কুন্তল ঘোষকে আরেক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই হেপাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে।

এদিন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের আইনজীবীর তরফে যদিও আদালতকে জানিয়েছেন এই ওএমআর শিট এবং অ্যাডমিট কার্ডের ব্যাপারে পর্ষদের কোনও গাফিলতি নেই। স্বচ্ছতা বজায় রেখে পর্ষদ টেট পরিচালনা করেছে। প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ১১ডিসেম্বর টেট হয়েছিল। অল্প সময়ের ব্যবধানেই সেই টেটের ওএমআর এবং অ্যাডমিট কার্ডও তৃণমূলের নেতা কুন্তল ঘোষের বাড়িতে পৌঁছে গেছে। ২০১৪ সালের টেট থেকে শুরু করে এখনও পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি কান্ডে কুন্তল ঘোষের নাম জড়িয়ে আছে। পাওয়া গেছে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য। 

কুন্তল ঘোষকে গত নভেম্বরে যুব তৃণমূল অন্যতম রাজ্য সম্পাদক পদে বসানো হয়। তার দিন পনেরোর মধ্যেই প্রাথমিক নিয়োগের এই পরীক্ষা হয়েছিল রাজ্যে। পর্ষদের তরফে সদ্য শেষ হওয়া টেট নিয়ে বিস্তর দাবি করা হলেও সেই পরীক্ষার ওএমএর শিটের কপি যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদকের বাড়িতে মেলায় স্বাভাবিকভাবেই ফের টেট দুর্নীতির প্রশ্ন সামনে এসেছে।

এদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় ইডি সূত্রে জানতে পেরেছেন নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে একজন অভিনেত্রীর প্রসঙ্গেও। বিচারপতি তদন্তকারী সংস্থা ইডি-কে নির্দেশ দিয়েছেন ওই অভিনেত্রীর নাম জানিয়ে দ্রুততার সঙ্গে আদালতে হলফনামা জমা দিতে হবে। আদালত বলেছে ওই অভিনেত্রীর সম্পদের বিষয় হলফনামায় উল্লেখ করতে হবে। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘নিয়োগ দুর্নীতিতে কোনও অভিনেত্রী জড়িত? নিয়োগ দুর্নীতির তদন্তে এক অভিনেত্রীর নাম উঠে এসেছে শুনেছি। তিনি নাকি তিনটি ফ্ল্যাট ভেঙে একটা বড় ফ্ল্যাট পেয়েছেন। জানতে চাই কে তিনি? এই অভিনেত্রীকে দেখতে চাই। তাঁর সিনেমাও দেখতে চাই।’

বিচারপতি বলেন, ‘‘কিছু দালাল চাকরি বিক্রি করছেন। আর কিছু দালাল তাদের আড়াল করছেন।’’ এদিন আদালত বলেছে কুন্তল ঘোষের বাড়ি থেকে তদন্তকারী সংস্থার তল্লাশিতে ২০২২ সালের টেটের যে সমস্ত ওএমআর শিট এবং অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া গেছে তার যাবতীয় তথ্য আদালতে জমা দিতে হবে। এই সমস্ত প্রার্থীদের নাম ঠিকানা জানাতে হবে। এঁরা যাতে আর কোনও দিন পরীক্ষায় বসতে না পারেন তার ব্যবস্থা করতে হবে। যাঁদের অ্যাডমিট কার্ড পাওয়া গেছে তাঁদের আন্দামানে পাঠাতে হবে। এদিকে পর্ষদের আইনজীবী আদালতকে বলেছে, আমরা স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করছি। কেউ কেউ আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার চেষ্টা করছে। 

পর্ষদের দাবি ওটা ওএমআর শিটের প্রতিলিপি। তা পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছিল। ফলে কোনও পরীক্ষার্থীর মাধ্যমে কারো কাছে পৌঁছালে পর্ষদের দায় নয়। তবে গোটা ঘটনায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি’র দাবি- তাহলে বোঝা যাচ্ছে শেষবারের টেটেও টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়া, পরীক্ষা পাশ করিয়ে দেওয়ার সেই দালালচক্র সক্রিয় ছিল। যাদের ওএমআর শিট মিলেছে তাদের কাছ থেকে হয়তো আগাম টাকা চাওয়া হয়েছিল বা নেওয়া হয়েছিল পরীক্ষায় পাস করিয়ে দেওয়ার শর্তে। ফলে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে ইডি-সিবিআই’র তদন্ত চলাকালীন রাজ্যের চতুর্থবারের মত টেট পরীক্ষাতেও যে আসলে দুর্নীতি, টাকা লেনদেনের বিষয় জড়িত তা অনেকটাই স্পষ্ট হয়েছে যুব তৃণমূল নেতার বাড়িতে অ্যাডমিট কার্ড এবং ওএমআর শিট মেলায়। 

এই প্রতারক কুন্তল যে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার চক্রে যুক্ত তা এখন দিনের আলোর মতই স্পষ্ট। শুধু তাই নয় হুগলীর বলাগড়েরই বাসিন্দা, তৃণমূলের জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ শান্তনু ব্যানার্জির বাড়ি থেকেও টেটের নথি, অ্যাডমিট কার্ড মিলেছিল ইডি’র তল্লাশিতে। শাসক তৃণমূলই যে অবৈধ নিয়োগ চক্র চালাতো রাজ্যজুড় তা তদন্তের গতি প্রকৃতিতেই বারেবারে সামনে আসছে।

এদিকে ইতিমধ্যেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সে লাগাতার দফায় দফায় ইডির জেরার মুখে ধৃত কুন্তল ঘোষ জানিয়েছিল নিয়োগ দুর্নীতির টাকা এক মধ্যস্থকারী মারফত সে আপাতত জেলবন্দি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চ্যাটার্জির কাছেও পৌছে দিয়েছিল। দফায় দফায় সেই টাকা পৌছে দেওয়া হয়েছিল যখন পার্থ চ্যাটার্জি শিক্ষা দপ্তর চালাতেন। এই টাকার পরিমাণ প্রায় ১৫ কোটি। এমনকি তাঁর নাকতলার বাড়িতেও একাধিকবার গিয়েছিল কুন্তল ঘোষ, পার্থ চ্যাটার্জির ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখার্জির সঙ্গেও যোগ ছিল কুন্তল ঘোষের।
যুব তৃণমূলের সভানেত্রীর সঙ্গেও কুন্তল ঘোষের যোগাযোগ ছিল স্বাভাবিকভাবেই।

এরই মধ্যে  কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার একটি সূত্রে দাবি কুন্তল ঘোষ গত দেড়-দু’বছরে একাধিক গাড়ি কেনাবেচা করেছে। নিজের জেলা হুগলীর এক গাড়ি বিক্রেতার পাশাপাশি কলকাতা থেকেও গাড়ি কিনেছে। পুরানো গাড়িও কিনেছে গাড়ি ব্যবসায়ীর কাছ থেকে। এমনকি প্রতারণার কারবারের একাধিক ব্যক্তিকে টাকা ফেরত দিতে না পারায় তার কেনা পুরানো গাড়িও চিনারপার্কের এক ব্যক্তি আটকে রেখেছে এমন ঘটনাও জানা গেছে।  

সেই সূত্রেই এবার তদন্তে সামনে এসেছে যে শাসক তৃণমূলের যুবনেত্রীকে গাড়িও ‘উপহার’ দিয়েছিলেন কুন্তল ঘোষ। কলকাতায় একাধিক সম্পত্তির মালিক বনে যাওয়া এই যুবনেতা বেশ কিছুদিন আগে এই গাড়ি উপহার দেয়। ইতিমধ্যেই তদন্তকারী সংস্থার হাতে এসেছে এই সংক্রান্ত তথ্য। তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ত্রিপুরায় পৌরসভা ভোটে ৫০ লক্ষ টাকার বেশি খরচ করা থেকে শুরু করে দেদার সম্পত্তি, কলকাতায় একাধিক ফ্ল্যাট, দলের শীর্ষমহলেও কুন্তলের নিয়োগ দুর্নীতির টাকায় একাধিক এমন উপহারের তথ্য মিলেছে।


 

Comments :0

Login to leave a comment