অনিন্দিতা দত্ত
কর্মসূত্রে সিকিমে গিয়ে আর বাড়ি ফেরা হলো না শিলিগুড়ির যুবকের। সিকিমের ছাঙ্গুতে তুষারধসে মৃত্যু হয়েছে শিলিগুড়ির বাসিন্দা সৌরভ রায় চৌধুরী (২৮)। শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের অন্তর্গত ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের ১১নং রাস্তায় ওই যুবকের বাড়ি।
রায় চৌধুরী দম্পতির একমাত্র সন্তান সৌরভই ছিলো আশা ভরসার জায়গায়। অনেক আর্থিক প্রতিকূলতার মধ্যে দিয়েই একমাত্র ছেলেকে ইংরাজী মাধ্যম স্কুলে পড়িয়েছিলেন বাবা নীলেশ রায় চৌধুরী। পরবর্তীতে শিলিগুড়ির যুবক সৌরভ রায় চৌধুরী ভালো বেসরকারি সংস্থায় কাজও পেয়ে যান। সৌরভের বাবা নীলেশ রায় চৌধুরী কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। মা বেবি রায় চৌধুরী আগে আয়ার কাজ করতেন। ছেলে ভালো বেসরকারি সংস্থায় কাজ পাবার পরে আয়ার কাজ ছেড়ে দিয়ে এখন তিনি পুরোপুরি গৃহবধূ। ঠিকঠাকই চলছিলো সবকিছু। নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের খারাপ সময়ে ছেলের উপার্জনের চলতো বাবা মায়ের। বেসরকারি সংস্থায় কাজের সূত্রেই গত ১ এপ্রিল সিকিমে গিয়েছিলেন সৌরভ। সাথে ছিলো আরো দুইজন সহকর্মী পাপাল সরকার ও রঞ্জিতা দাস।
কর্মসূত্রেই সিকিমে গিয়ে সিকিমের তুষার ধসে শিলিগুড়ি শক্তিগড় নিবাসী যুবকের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছাতেই গোটা এলাকা সহ শহর জুড়ে শোকের আবহ তৈরি হয়েছে। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান সৌরভের অকস্মিত মৃত্যুতে শক্তিগড়ের ১১নং রাস্তায় কান্নার রোল উঠেছে। একমাত্র ছেলেকে এভাবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে হারিয়ে বাবা নিলেশ রায় চৌধুরী ও মা বেবি রায় চৌধুরী সহ গোটা পরিবার কান্নায় ভেঙে পড়েছে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে ছেলের সাথে ফোনে শেষবারের মতো কথা বলেছিলেন বাবা ও মা। পরদিনই এইরকম খারাপ সংবাদ আসবে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি রায় চৌধুরী পরিবার। মঙ্গলবার রাতে শিলিগুড়ি পৌর কর্পোরেশনের ৩১নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিলেশ বাবুর বাড়িতে তাদের একমাত্র সন্তান সৌরভের মৃত্যুর খবর এসে পৌঁছায়। তুষার ধসে সৌরভের সাথে থাকা দুই সহকর্মী গুরুতর জখম হয়েছেন। কাজের সূত্রে সিকিমে গেলেও মঙ্গলবার ছুটি থাকায় প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে দুই সহকর্মীর সাথে সৌরভও ছাঙ্গুর দিকে গিয়েছিলো তুষারপাতের আনন্দ উপভোগ করতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। ১৫ মাইলের কাছে তুষারধসে চাপা পড়ে প্রাণ হারান সৌরভ। এদিকে বুধবার সকালেই সৌরভের দেহ শিলিগুড়িতে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যে পরিবারের দুই সদস্য সিকিমের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছেন।
বুধবার বিকেলে সৌরভের দেহ কফিনবন্দী হয়ে বাড়িতে পৌঁছালে এলাকার মানুষের ভিড় উপছে পড়েছিলো। শক্তিগড় এলাকায় অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন সৌরভ। পাড়ার ছেলেকে শেষবারের মতো চোখের দেখা দেখতে মানুষের ঢল নেমে ছিলো শক্তিগড়ের ১১নং রাস্তায়। সিকিমে ময়নাতদন্তের পরে সিকিম প্রশাসনের তরফ থেকে মরদেহ গাড়ি করে শিলিগুড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। সৌরভের কাকিমা রুনু রায় চৌধুরী বলেন, সৌরভের বৃহস্পতিবার বাড়ি ফিরে আসার কথা ছিলো। কাজের সময় একেবারে দম ফেলতে পারেনা। ওদের ঘুরতে যাবার কথা একেবারেই আমরা জানতাম না।
ছরি রাজু ভট্টাচার্য
Comments :0