‘এভাবে চলতে পারে না, সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে!’ কলকাতা হাইকোর্টে বেনজির বিক্ষোভের আর বয়কটে ক্ষুব্ধ বিচাপতি রাজশেখর মানথা শুক্রবার এমনটাই মন্তব্য করেছেন। এদিনও বিচারপতি মানথার এজলাসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছিলেন আইনজীবীদের একাংশ। পরে তাঁর এজলাস বয়কটের জন্য বেনামি পোস্টারও পড়ে।
বারেবারে এইভাবে বিচার ব্যবস্থার ওপর আঘাত নেমে আসায় আগেই ক্ষোভপ্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব। এবার এজলাস বয়কটের ঘটনা নিয়ে সরব হলেন বিচারপতি রাজাশেখর মানথা। শুক্রবার তিনি বলেন, ‘এ ভাবে চলতে পারে না! এটা সরকারের জন্যই ক্ষতি! সাংবিধানিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে। সমাজের জন্য এটা সুস্থ ব্যবস্থা নয়।’
বিচারপতি মান্থার এজলাসে এখনও সরকারি আইনজীবীদের একাংশের অনুপস্থিতি থাকছেন। এই প্রসঙ্গে বিচারপতি মানথা আরও বলেন, ‘‘এখনও যেভাবে অনেক মামলায় সরকারি আইনজীবীরা গরহাজির থাকছেন তাতে ক্ষতি হচ্ছে। আইনজীবীর অভাবে পুলিশ অফিসাররা হাজিরা দিয়ে নিজেদের বক্তব্য বলার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এ তো চলতে পারে না! এটা প্রশাসনের জন্যই ক্ষতির।’’
প্রসঙ্গত, গত ৯ জানুয়ারি থেকেই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজাশেখর মানথার এজলাসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন আইনজীবীদের একাংশ। পরে বিচারপতি মান্থা’র এজলাস বয়কটের প্রস্তাবও আনেন বার কাউন্সিলের কলকাতা শাখার জনা কয়েক সদস্য। চলতে থাকে এজলাসের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ। আর এর জেরেই থমকে যায় বহু মামলার শুনানি। বিশৃঙ্খলাকারী আইনজীবীদের চিহ্নিত করে তাঁদের বিচার করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। তবুও তৃণমূলপন্থী আইনজীবীদের একাংশ এখনও বিচারপতি মানথার এজলাস বয়কট চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ।
এদিকে, বিচারপতি রাজাশেখর মানথার এজলাসের সামনে দরজা বন্ধ করে তাণ্ডব ও বিচারপ্রার্থীদের প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টের ৯ জন আইনজীবীকে সাসপেন্ড করার সুপারিশ করল বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়া। ঘটনার তদন্তে কলকাতা সফরের পর বার কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার ৩ সদস্যের দলের পেশ করা রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সুপারিশ করা হয়েছে। তবে ওই ৯ আইনজীবী কারা তা এখনও অস্পষ্ট। কলকাতা হাইকোর্টে বিষয়টি বিচারাধীন থাকায় এই সুপারিশের তাৎপর্য এখনও স্পষ্ট নয়। ওই ঘটনায় পরিপ্রেক্ষিতে ইতিমধ্যে আদালত অবমাননার রুল জারি করেছেন বিচারপতি রাজশেখর মানথা। সেই মামলার শুনানির জন্য ৩ বিচারপতির বেঞ্চ গঠন করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব।
এরই মধ্যে শুক্রবার আদালত অবমাননায় কলকাতা পুলিশের এক কর্তার হাজিরার মামলায় বিচারপতি মানথার এজলাসে উপস্থিত হন অ্যাডভোকেট জেনারেল (এজি) সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়। তিনি আদালতের কাছে আরজি জানিয়ে বলেন, ‘বিষয়টি জেনে স্বেচ্ছায় এই মামলায় যুক্ত হয়েছি। আমাকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হোক। আশা করি, তার মধ্যে আদালতের নির্দেশ কার্যকর হয়ে যাবে।’
অন্যদিকে, আইআইটি খড়্গপুরে এক ছাত্রের রহস্য মৃত্যুতে কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করছেন বিচারপতি রাজাশেখর মানথা। তাঁর পর্যবেক্ষণ, ওই ছাত্রের মৃত্যুকে কোনও গুরুত্বই দিতে চাইছেন না সংস্থার অধিকর্তা। আদালতের নির্দেশ মতো ২৪ জানুয়ারি তাঁর হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি হাজিরা দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন। বিষয়টি আদালতের নজরে আসতেই বৃহস্পতিবার আইআইটি খড়্গপুরের অধিকর্তা ভি কে তেওয়ারি’কে হাজির হতে বলা হয়। এদিন আদালতে হাজিরা দেন অধিকর্তা। মামলাটির পরবর্তী শুনানি ৬ ফেব্রুয়ারি।
Comments :0