১) বিবিসি তথ্যচিত্রে রাজরোষ
জানুয়ারি মাসে বিবিসি-টু টেলিভিশনের তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’এ ২০০২সালে গুজরাট গণহত্যায় তদানীন্তন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ভূমিকা সামনে আনা হয়। গুজরাট দাঙ্গা নিয়ে ব্রিটিশ সরকারের করা তদন্তের রিপোর্ট ছিল এর অন্যতম উপাদান। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে এই তথ্যচিত্রের সম্প্রচার ভারতে বন্ধ করে দেওয়া হয়। জেএনইউ, প্রেসিডেন্সি প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সেই তথ্যচিত্র একসঙ্গে বসে দেখার চেষ্টা করলে বাধা দেওয়া হয়। তৃণমূল শাসিত বাংলাতেও বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। পরের মাসেই দিল্লি ও মুম্বাইয়ে বিবিসি’র অফিসে হানা দেয় আয়কর দপ্তর। মে মাসে রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার সূচক প্রকাশ করে। সেই সূচকে ১১ ধাপ পিছিয়ে যায় ভারত। মোট ১৮০ টি দেশের তালিকায় ভারত নেমে আসে ১৬১ নম্বরে।
২) বিবস্ত্র করে থানায় মার নন্দকুমারের বধূকে
২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বর সিপিআই(এম)’র ডাকে নন্দকুমার ব্লক অফিস অভিযানে শামিল হয়েছিলেন গৃহবধূ আরজুনা বিবি। নতুন বছরের শুরুতেই সেই অপরাধে সারা রাত থানার লকআপে ভয়াবহ অত্যাচার চালানো হয় তাঁর উপর। আরজুনা বিবির বিবরণ অনুযায়ী, রাতভর চলেছে বিবস্ত্র করে মারধর করা হয়েছে তাঁকে। ব্রিটিশ পুলিশ, আধা ফ্যাসিস্ত সন্ত্রাসের রাজত্বের পুলিশি বর্বরতাকে মনে করিয়ে দিয়েছে মমতা ব্যানার্জির পুলিশ প্রশাসন, প্রতিবাদ হয়েছে রাজ্যে।
৩) ভয়াবহ মাত্রায় স্কুলছুট, তথ্য সরকারি সমীক্ষাতেই
২০২৩ সালে ফরম ফিল-আপ করেও মাধ্যমিকে বসেনি ২লক্ষ পড়ুয়া। এক শিক্ষাবর্ষে শুধু মাধ্যমিকেই কমে যায় ৪০ শতাংশ পরীক্ষার্থী! পশ্চিমবঙ্গ সরকারের করা সমীক্ষা অনুযায়ী, কোভিড পরবর্তী সময়ে ২৫ হাজারের ওপর প্রাথমিক পড়ুয়া ছিটকে গেছে শিক্ষার আঙিনা থেকে। ফেব্রুয়ারির শুরুতে রাজ্যের তরফে স্কুলছুট পড়ুয়াদের তথ্য তালাশ করতে এই নমুনা সমীক্ষা করা হয়েছিল। সমীক্ষা অনুযায়ী, অতিমারী আসার আগে প্রাক প্রাথমিক স্তর থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত এরাজ্যে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির সংখ্যা ছিল প্রায় ৮০ লক্ষ। সেই সংখ্যা প্রায় ৭২লক্ষে নেমে গেছে।
৪) রামনবমীর সশস্ত্র মিছিলে তৃণমূল-বিজেপি একাকার
রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে রাজ্যের নানা এলাকায় বিজেপি এবং তৃণমূল মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। দুই দলের সাংসদ, বিধায়ক, নেতা, কর্মীরা জায়গায় জায়গায় একসঙ্গে মিছিল করেছে, উত্তেজনা তৈরির চেষ্টাও চালিয়েছে। আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও অধিকাংশ জায়গায় দুই শাসক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে সশস্ত্র মিছিল করা হয়েছে। হাওড়ার শিবপুর এবং উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় উত্তেজনা চরমে ওঠে। উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণে আনতে শিবপুরে পুলিশকে কাঁদানে গ্যাস ছুঁড়তে হয়। অন্যদিকে ডালখোলায় উত্তেজিত জনতা পুলিশের গাড়িতেই আগুন লাগিয়ে দেয়। ভাটপাড়া, জগদ্দল, বর্ধমান শহর, চুঁচুড়া প্রভৃতি জায়গাতেও একযোগে উত্তেজনা ছড়িয়েছে তৃণমূল-বিজেপি।
৫) মন্তব্যের জন্য রাহুল গান্ধীকে শাস্তি
২০১৯ সালে করা মন্তব্যের জন্য কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীকে ২ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দেয় সুরাটের একটি আদালত। পরদিনই রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের বিজ্ঞপ্তি জারি হয় লোকসভা থেকে। আদালতের নির্দেশে পরে অবশ্য সাংসদ পদ ফিরে পেয়েছেন রাহুল গান্ধী
৫) সাগরদিঘিতে বড় ব্যবধানে জয়ী বাম-সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী
মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে তৃণমূল প্রার্থী দেবাশিস ব্যানার্জিকে ২২,৯৬৮ ভোটে হারান বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থী বাইরন বিশ্বাস। ২০২১ সালের নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে থাকা বিজেপি পিছিয়ে চলে যায় তৃতীয় স্থানে। সাগরদিঘির নির্বাচনে জনমতকে রাজ্যের মানুষের ক্ষোভের ব্যাপক প্রকাশ এবং তৃণমূল –বিজেপি মেরুকরণকে নস্যাৎ করা বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
৬) পুলওয়ামার সত্য ফাঁস
জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক ফাঁস করে দিয়েছেন, ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে পুলওয়ামায় সিআরপিএফ’র কনভয়ের ওপর যে সন্ত্রাসবাদী হামলায় ৪০জনের মৃত্যু হয়েছিল, তার পেছনে ছিল মোদী সরকারের অপদার্থতা এবং বড় ধরনের গোয়েন্দা ব্যর্থতা। একইসঙ্গে মালিক জানান যে, এই সমস্ত কথা মোদীকে জানালেও তিনি মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। এমন তথ্য সামনে আসার পর জোরালো দাবি ওঠে, মুখ বন্ধ না করে থেকে সরকার জানাক কেন সেদিন সিআরপিএফ’র জওয়ানদের বিমান দেওয়া হয়নি। সন্ত্রাসবাদী হামলার ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁদের সড়কপথে পাঠানো হয়েছিল।
৭) রাস্তায় নির্দয় মার কুস্তিগিরদের
মে মাসে সাধু সন্ত পরিবেষ্টিত হয়ে নরেন্দ্র মোদী নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করার দিন শ্লীলতাহানি ও যৌন হেনস্থার বিচার চেয়ে পথে নেমে দিল্লি পুলিশের নির্দয় মার খেয়েছেন দেশের পদকজয়ী কুস্তিগীররা। সাক্ষী মালিক, বিনেশ ফোগট, সঙ্গীতা ফোগটদের রাস্তায় ফেলে পেটায় অমিত শাহের পুলিশ। যোগী রাজ্যের বিজেপি সাংসদ, যৌন হেনস্তায় অভিযুক্ত, ভারতের রেসলিং ফেডারেশনের প্রধান ব্রিজভূষণের শরণ সিংয়ের শাস্তির দাবিতে আন্দোলনে শামিল হন কুস্তিগীররা। পদক ও পুরস্কার ফেরানোর ঘোষণাও করেছেন তাঁরা।
৮) মণিপুর জ্বলছে
৩ মে থেকে মণিপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরু হয়। বিজেপির ইন্ধনে শুরু হওয়া সংঘর্ষে কুকি ও মেইতেই সম্প্রদায়ের মোট কয়েকশো মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঘরছাড়া হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন ৫০ হাজারের কাছে মানুষ। মাসের পর মাস পেরোলেও মণিপুরে শান্তি ফেরেনি, এবং দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও মণিপুরে যাওয়ার সময় পাননি নরেন্দ্র মোদী। বিবস্ত্র করে দুই কুকি মহিলাকে নির্যাতনের ছবি সোশাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার পরেই সারা দেশে বিষয়টি নিয়ে হইচই হয়। ১৭ জুন ইম্ফলে কেন্দ্রীয় বিদেশ প্রতিমন্ত্রী রাজকুমার রঞ্জন সিংয়ের বাড়িতে হামলা চালায় উন্মত্ত জনতা। হিংসার জন্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্য বিজেপি’র মুখ্যমন্ত্রীকেই নিশানা করেন।
৯) বিস্ফোরণের পর বিস্ফোরণ
বারুদের স্তূপে বাংলা। ১৬ মে এগরার ১ নং ব্লকের সাহারা গ্রাম পঞ্চায়েতের খাদিকুল গ্রামে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। প্রাণ হারান ১০জন। স্থানীয়দের অভিযোগ, বাজি কারখানার আড়ালে বোমা তৈরি হত ঘটনাস্থলে। তার ফলে ঘটে এই ভয়াবহ ঘটনা। কিন্তু ১০ জনের মৃত্যুকে ‘দুর্ঘটনা’ বলে দাবি করেন মমতা ব্যানার্জি। দত্তপুকুরেও বিস্ফোরণের ঘটনায় ৯ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এখানেও ঘটনার পিছনে বেআইনি বাজি কারখানাকে দায়ী করা হয়েছে সরকারের তরফে।
১০) বিধানসভার ফল
মেরুকরণের রাজনীতিকে ধাক্কা দিয়ে মে মাসে কর্ণাটকে বিজেপিকে পর্যুদস্ত করে ১৩৭টি আসনে জয়ী হয়ে নিরঙ্কুশ ভাবে সরকার গড়েছে কংগ্রেস। ভোট শতাংশের হিসাবে কংগ্রেস গতবারের থেকে অনেকটা বাড়িয়ে ৪৩ শতাংশ মানুষের সমর্থন আদায় করেছে। তবে বছরের শেষে ডিসেম্বরে পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলে বিজেপি তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় ও রাজস্থানে সরকার গড়তে সফল হয়েছে। কংগ্রেস যদিও তেলেঙ্গানায় বিপুল ভোটে জিতে সরকার গড়েছে। পাঁচ রাজ্যের মোট ভোট প্রাপ্তির হারেও বিজেপির থেকে বহুলাংশে এগিয়ে কংগ্রেস।
১১) অধরা বিশ্বকাপ
ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনালে ভারত হেরে গেল অস্ট্রেলিয়ার কাছে। ফাইনালের আগে গোটা টুর্নামেন্টের একমাত্র অপরাজিত দল ছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু ফাইনালে প্রথমে ব্যাট করে ভারত ৫০ ওভারে ২৪০ রান করে। জবাবী ব্যাটিংয়ে ৪৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় অস্ট্রেলিয়া। কাপ না জিতলেও টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ দুই রান স্কোরার হন বিরাট কোহলি এবং রোহিত শর্মা। কোহলি বিশ্বকাপের ১১টি ম্যাচে ৩টি শতরান করেন। সর্বোচ্চ ২৪টি উইকেট নেন মহম্মদ শামি।
১২) লুট বনাম প্রতিরোধের পঞ্চায়েত নির্বাচন
পুলিশ প্রশাসন, বিডিও, রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে সঙ্গে নিয়ে পঞ্চায়েত নির্বাচনে লুট চালিয়েছে তৃণমূল। কিন্তু মানুষও ছিল প্রতিরোধের মেজাজে। ভোটের দিন ব্যাপক সন্ত্রাস, বুথ দখল, ব্যালট লুটের পরেও শাসকদল নিশ্চিত ছিল না তাদের জয় সম্পর্কে। তাই রাজ্যের প্রায় প্রতিটি গণনাকেন্দ্রে পরিকল্পিত সন্ত্রাস ও নজিরবিহীন কারচুপি প্রত্যক্ষ করলেন রাজ্যের মানুষ। প্রতিটি ক্ষেত্রেই পুলিশ ও বিডিও’রা এই কারচুপিতে মদত জুগিয়েছে এমনটাই অভিযোগ করেছেন বিরোধীদলের কাউন্টিং এজেন্টরা। বহু কেন্দ্রে বিরোধী দলের প্রার্থীরা গণনায় জয়ী হলেও তাঁদের সার্টিফিকেট দেওয়া হয়নি।
১৩) স্বপ্নের মৃত্যু
৯ আগস্ট যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে র্যাাগিংয়ের শিকার হয়ে প্রাণ হারান প্রথম বর্ষের এক পড়ুয়া। সেই ঘটনায় নাম জড়ায় যাদবপুরের তৃণমূল ঘনিষ্ঠ স্বাধীন সংগঠনগুলির বর্তমান এবং প্রাক্তন সদস্যরা। নিহতের পরিবারের অভিযোগ, খুন করা হয়েছে ছাত্রকে। ধৃতদের জেরা করে তদন্তকারীরা জানতে পারেন, নিহত ছাত্রকে নির্যাতনের সময় বিবস্ত্র হতে বাধ্য করা হয়েছিল।
Comments :0