10th march strike

রাজ্যে ৬ লক্ষ শূন্যপদ পূরণের দাবি উঠছে ধর্মঘটের প্রচারে

রাজ্য

বেকারির যন্ত্রণা ঘোচাতে রাজ্যে ৬ লক্ষাধিক শূন্যপদে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের দাবিতে ধর্মঘট করবেন সরকারি কর্মচারীরা। 
মহার্ঘভাতার দাবিতেই শুধু নয়, সরকারি শূন্যপদে স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের দাবিতেও ১০ মার্চ ধর্মঘটে যাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগের দাবিতে গান্ধী মূর্তির সামনে ধরনা পড়েছে ৭২১ দিনে। নিয়োগ দুর্নীতির জট কাটাতে ফি দিন কলকাতা হাইকোর্টে নাস্তানাবুদ হতে হচ্ছে রাজ্য সরকারকে। শূন্যপদে নিয়োগের দাবি আসলে এরাজ্যে বেকার যুবক, যুবতীদের আন্দোলনের অন্যতম দাবি। শূন্যপদে নিয়োগের দাবি নিয়ে রাজ্যজুড়ে ইতিমধ্যে আন্দোলন গড়ে তুলেছে ডিওয়াইএফআই সহ বামপন্থী ছাত্র ও যুব সংগঠনগুলি। সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘটের দাবির মধ্যেও যুক্ত হয়েছে রাজ্যের বেকার যুবক, যুবতীদের জীবন যন্ত্রণার দাবিও।
সরকারি কর্মচারীদের ১০ মার্চের ধর্মঘটের শূন্যপদ পূরণের দাবি প্রসঙ্গে ডিওয়াইএফআই পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির সভাপতি মীনাক্ষী মুখার্জির বক্তব্য, ‘‘আগামীদিনে তো কাজটাই সরকার তুলে দিতে চাইছে। কর্মচারীরা অবসর নিচ্ছে আর সরকার পদটাই তুলে দিচ্ছে। ফলে কাজ রক্ষা করাটাই এখন বড় কাজ। আর কাজ থাকলেই ডিএ থাকবে। ফলে এই লড়াই শুধু সরকারি কর্মচারীদের নিজেদের পরিবার প্রতিপালনের লড়াই নয়। আসলে এটা গোটা দেশ ও রাজ্যের কর্মসংস্থানকে বাঁচিয়ে রাখার লড়াই। গ্রামে ১০০ দিনের কাজের দাবিতে লড়াই থেকে সরকারি কর্মচারীদের ধর্মঘট এক সুতোয় বাঁধা। আমরা কর্মচারীদের ধর্মঘটের পাশে আছি।’’ 
এরাজ্যে শুধু শিক্ষাক্ষেত্রেই শূন্যপদের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩ লক্ষ ৫৮ হাজারের ওপর। গত বছর বিধানসভায় প্রশ্নোত্তর পর্বে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর দেওয়া তথ্যেই উল্লেখ করা হয়েছে, রাজ্যে প্রাথমিক শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা ১ লক্ষ ৯০ হাজার। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষকের শূন্যপদের সংখ্যা যথাক্রমে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ২৯৫ ও ২৩ হাজার ৭১১। প্রধান শিক্ষকের শূন্যপদ ৫হাজার ৮২৪। একইসঙ্গে বিদ্যালয়ে ২৯ হাজারের ওপর শিক্ষাকর্মীর শূন্যপদ পড়ে আছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩ লক্ষ ৫৮ হাজার ৯২০টি শূন্যপদ পড়ে আছে শুধু শিক্ষা দপ্তরেই।
এরাজ্যে সরকারি চাকরিতে নিয়োগের অন্যতম সাংবিধানিক সংস্থা পাবলিক সার্ভিস কমিশন। গত এক দশকে মমতা ব্যানার্জির রাজত্বে সরকারি পদে নিয়োগের এই সংস্থাকে ক্রমশ রুগ্‌ণ ও দুর্বল করে দিয়েছে সরকার। অতীতে যেভাবে সরকারি চাকরিতে পিএসএসি মারফত নিয়োগের ব্যবস্থা তা এখন বিলীন। উলটে পিএসসি-কে দিয়ে নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েও সরকারি দপ্তরগুলির নিয়োগের প্যানেল প্রকাশ না করার নজির আছে। সেই সরকারি দপ্তরে রাজ্যে এই মুহূর্তে শূন্যপদ কত?
রাজ্য সরকারের ব্যুরো অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিকস অ্যান্ড স্ট্যাটিটিকস’র তথ্য অনুযায়ী ১৯৯৬ সালে এরাজ্যে সরকারি অনুমোদিত পদের সংখ্যা ছিল ৪লক্ষ ৮৪ হাজার ২৯০টি। ২০১৫সালে রাজ্যে সরকারি দপ্তরে কর্মরত কর্মচারী ছিলেন ৩ লক্ষ ৩১ হাজার ২৪৯। সর্বশেষ ২০২২সালের ৩১ ডিসেম্বরের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যের সরকারি দপ্তরে এখন কাজ করছেন ২লক্ষ ৩১ হাজার। ফলে ২ লক্ষ ৫২ হাজারের ওপর পদ কার্যত বিলোপ হয়ে গেছে। 
রাজ্যের প্রশাসনিক কর্মীবর্গ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, ফি বছর অবসর, মৃত্যু, দুর্ঘটনা ও অন্যান্য অসুস্থতা মিলিয়ে ৫ শতাংশ করে কর্মচারী কাজ থেকে বিদায় নেন। স্বাভাবিক এই বিদায় প্রক্রিয়ার পরেও এরাজ্যে গত এক দশকে শূন্যপদে নিয়োগ করা হয়নি। এরাজ্যের গ্রাম ও শহরে সাধারণ মানুষকে পরিষেবার প্রদানের সঙ্গে যুক্ত থাকেন ত্রিস্তর পঞ্চায়েত ও পৌরসভার কর্মচারীরা। ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে অনুমোদিত পদ প্রায় ৩০ হাজার ৫৬৩। বর্তমানে কর্মরত আছেন প্রায় ১৯ হাজার কর্মচারী। ফলে সোজাসাপটা হিসাবে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতেই প্রায় ১২ হাজারের কাছাকাছি শূন্যপদ পড়ে আছে। একইভাবে রাজ্যের পৌরসভাগুলিতে প্রায় ৪০ হাজারের ওপর শূন্যপদ। 
ব্যুরো অব অ্যাপ্লায়েড ইকনমিকস অ্যান্ড স্ট্যাটিটিকস’র সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্যে জনসংখ্যার সঙ্গে সরকারি দপ্তরে কর্মচারীর সংখ্যা বৃদ্ধি ঘটানো দরকার। মানুষের কাছে পরিষেবা তুলে দেওয়ার জন্য যা অত্যন্ত জরুরি। ১৯৮০ সালে রাজ্যে জনসংখ্যা ছিল ৫ কোটি ৪১ লক্ষ। ওই সময় রাজ্যে ১ লক্ষ জনসংখ্যা পিছু কর্মচারীর সংখ্যা ছিল ৬৭৬। ২০১৫ সালে রাজ্যের জনসংখ্যা যখন বেড়ে ৯ কোটি ৫০ লক্ষ, তখন কর্মচারীর সংখ্যা কমে ১ লক্ষ ৩৪৮ জন। ২০২২ সালে ১১ কোটি জনসংখ্যা রাজ্য যখন পৌঁছাতে চলেছে তখন ১ লক্ষে কর্মচারীর সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে ২৩২ জনে। ব্যাপক হারে সরকারি পদ অবলুপ্তি প্রসঙ্গে কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন’র সভাপতি শ্যামল মিত্রর বক্তব্য, ‘‘পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হলে যে কর্মীবাহিনী থাকা দরকার তা সরকারের কাছে নেই। অথচ জেলায় গিয়ে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী কাজ না হওয়ার জন্য আধিকারিক থেকে কর্মচারীদের হুমকি, ধমক দেন। শূন্যপদে নিয়োগ না করার দায় সরকার নিজের ওপর না নিয়ে কর্মচারীদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।’’ 
সরকারি পদ বিলোপ করে দিয়ে সেই জায়গায় আনা হয়েছে অস্থায়ী কর্মচারীদের। আগে অস্থায়ী কর্মচারীদের নিয়োগ করতো রাজ্য সরকার। এখন সেই ব্যবস্থা থেকেও সরকার সরছে। সরকার নিজে না থেকে নিয়োগের দায়িত্ব তুলে দিচ্ছে বেসরকারি এজেন্সির ওপর। ফলে অনিয়মিত কর্মচারীদের দায় সরকার নিজের ওপর রাখছে না। গোটা রাজ্যে প্রায় ৩লক্ষ অস্থায়ী কর্মচারীকে স্থায়ীকরণের দাবিও রাখা হয়েছে ১০ মার্চের ধর্মঘটে। ধর্মঘটী সংগঠন রাজ্য কো-অর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ গুপ্ত চৌধুরি জানিয়েছেন, ‘‘স্বচ্ছতার সঙ্গে নিয়োগ ১০ মার্চের ধর্মঘটের অন্যতম দাবি। নিজেদের মহার্ঘভাতার দাবির সঙ্গে ধর্মঘট হবে শূন্যপদে নিয়োগ ও অনিয়মিত কর্মচারীদের নিয়মিতকরণ।’’ 
মাঝে সোমবার ও বৃহস্পতিবার সরকারি দপ্তর খোলা থাকছে। ওই দু’দিন অফিসে, অফিসে তুঙ্গে উঠবে ধর্মঘটের প্রচার। শুক্রবার কর্মচারীদের সঙ্গে জনগণের দাবি নিয়ে অচল হবে সরকারি দপ্তর। ধর্মঘটের অন্যতম আহ্বায়ক সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তাপস চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ‘‘শুধু সরকারি কর্মচারী হিসাবেই নয়, এরাজ্যের বেকার যুবক, যুবতীদের প্রতি আমরা সহানুভূতিশীল। তাই ধর্মঘট হবে স্বচ্ছতার সঙ্গে শূন্যপদ পূরণের জন্য।’’

Comments :0

Login to leave a comment