Sanitation Workers

নমমি গঙ্গের কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে হত ২ সাফাই কর্মী

জাতীয়

Sanitation Workers


মোদীর গালভরা নমমি গঙ্গে প্রকল্পের নিকাশির কাজ করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে প্রাণ হারালেন দুই সাফাই কর্মী। ছিল না কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম। বিহারে জাকারিয়াপুরের কাছে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডে এই কাজ চলছিল। বেসরকারি ঠিকাদার সংস্থার ঘাড়ে দায় চাপানোর চেষ্টা চললেও নরেন্দ্র মোদী নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রের বিজেপি সরকার কোনোভাবেই দুই যুবকের মৃত্যুর দায় এড়িয়ে যেতে পারে না বলে সোচ্চার হয়েছেন তাঁদের সহকর্মীরা।

বছর ২৪’র রঞ্জন রবিদাস এবং ২৩ বছরের মুন্না রজক কাজ করছিলেন আরও দশ-বারো জনের সঙ্গে। এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যাচ্ছে, ওই কোম্পানির এক মালিক রবিদাস আর রজককে নির্দেশ দেন, ১৫ ফুট গভীর নিকাশি নালা পরিষ্কার করার জন্য নিচে নামতে হবে। সেই মতো রবিদাসরা ঢোকেন নালায়। কিন্তু ১৫-২০ মিনিট হয়ে গেলেও তাঁরা উঠে আসেননি। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিষাক্ত গ্যাস তাঁদের শরীরে ঢুকতে থাকে, বাঁচার তাগিদে চেঁচিয়ে ওঠেন দু’জনে। কাঁদতে থাকেন। কোনও কিছু না ভেবেই তাঁদের বাঁচাতে অন্য সাফাই কর্মীরাও প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে নামেন নিকাশি নালায়। অচৈতন্য অবস্থায় রবিদাস ও রজককে উদ্ধার করে আনেন তাঁরাই। আশঙ্কাজনক অবস্থায় নালন্দা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই প্রাণ হারান দু’জনে। ওইদিন রাতেই শেষকৃত্য হয়ে গিয়েছে। ময়নাতদন্তের পর পুলিশ দু’জনের দেহ তুলে দেন পরিজনদের হাতে।

মৃত একজনের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ এফআইআর দায়ের করেছে বেসরকারি সংস্থার বিরুদ্ধে। ওই সংস্থাকে নিহত দু’জনের পরিবারপিছু ৫ লক্ষ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পুলিশ। একইসঙ্গে জানিয়েছে, তদন্তও চলবে। এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সরকারি আধিকারিকরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আবার উলটোদিকে ঠিকাদার সংস্থা বলে দিয়েছে, তাদের কিছু বলার অনুমতি নেই। 
পাটনা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের সাফাই কর্মী হরিরাম দাস ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ‘‘সাফাইকর্মীদের কোনও সুরক্ষা সরঞ্জাম দেওয়া হয় না। আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে কেউ ভাবে না। আমাদের সঙ্গে পশুর মতো আচরণ করা হয়। কিন্তু পেট চালাতে এই কাজই আমাদের করতে হয়। আর কোনও উপায় নেই।’’ আরেক সাফাইকর্মী যোগেন্দ্র বলেন, ‘‘কর্পোরেশনের আধিকারিক বা কোম্পানির লোকজন কেউ সুরক্ষা বিধির তোয়াক্কা করেন না। বছরের পর বছর ধরে এই এক অবস্থা চলছে। মাঝে মধ্যেই কেউ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ছেন বা মারা যাচ্ছেন। কিন্তু কে ভাবে আমাদের কথা?’’ সাফাই কর্মচারী আন্দোলনের জাতীয় আহ্বায়ক বেজওয়াদা উইলসন বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানা হচ্ছে না। মারাত্মক জরুরি না হলে মানুষ নামিয়ে নিকাশি নালা সাফ করানো চূড়ান্ত অপরাধ।

তার মধ্যে ন্যূনতম সুরক্ষা সরঞ্জামও দেওয়া হয় না।’’ নিকাশি নালা, ম্যানহোলে পরিষ্কার করতে নেমে সাফাই কর্মীদের মৃত্যু নতুন নয়। রাজধানী শহর দিল্লি সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বহু সাফাই কর্মী প্রাণ হারিয়েছেন বিষাক্ত গ্যাসে। তবু তাঁদের সুরক্ষার কথা মাথায় রাখা হয় না। মেলে না পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণও। এবছর বাজেট পেশ করার সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মানুষ নামিয়ে ম্যানহোল পরিষ্কার করানো সম্পূর্ণ বন্ধ করার কথা বলেন। যন্ত্রপাতি দিয়ে ১০০ শতাংশ কাজ করানোর উদ্যোগও জানান তিনি। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্রীয় প্রকল্পেরই এই হাল।

Comments :0

Login to leave a comment