সংবিধান নিয়ে, সংরক্ষণ নিয়ে, গণতন্ত্র নিয়ে বিরোধীরা মিথ্যা কথা বলছে, ভয় দেখাচ্ছে। রবিবার রাজস্থানের একাধিক সভা থেকে এই কথা বলে মোদী আশ্বস্ত করার চেষ্টা চালালেন। একইভাবে বিহারের সভা থেকেও অমিত শাহ সংরক্ষণ নিয়ে আশ্বস্ত করার মরিয়া চেষ্টা চালালেন। কিন্তু বিরোধীরা এদিনও জোরের সঙ্গে মোদী সরকারকে আক্রমণ করে বলেছেন, বিজেপি ফের ক্ষমতায় ফিরলে বদলে ফেলবে সংবিধান। ধ্বংস করবে সংরক্ষণ ব্যবস্থা। এর আগে একাধিক বিজেপি নেতা প্রকাশ্যেই বলেছেন, চারশোর বেশি আসনে মোদী জিততে চাইছেন, কারণ তিনি সংবিধান বদল করতে চান। এরপরেই বিরোধীরা সংবিধান নিয়ে মোদীকে চেপে ধরতেই এখন একের পর এক সভাতে মোদী সাফাই দিচ্ছেন সংবিধান বদল করা হবে না। মোদীর থেকেও বেশি এই কথা বলে বেড়াচ্ছেন অমিত শাহ। প্রতিটি সভা থেকে নিয়ম করে তিনি বলছেন, সংবিধান বদল হবে না। সংরক্ষণ অক্ষুণ্ণ থাকবে। যদিও তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
এরমধ্যেই এদিনও মোদীর জলশক্তি মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত পরিষ্কার করে বলেছেন, ভারতের সংবিধান গীতা নয় যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। যোধপুর থেকে ফের প্রার্থী হয়েছেন গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত। একটি সংবাদ পোর্টালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে তিনি ৩৭০ ধারা বাতিলের উদাহরণ তুলে বলেছেন, প্রয়োজন হলেই সংবিধানের এমন বদল করতে হবে। এই পরিবর্তন ‘দেশের স্বার্থে’ বলেও তিনি দাবি করেছেন। এর আগে বিজেপি নেতা অনন্তকুমার হেগড়ে, লাল্লু সিং, জ্যোতি মৃধা এবং অরুণ গোভিল স্পষ্ট বলেছেন, সংবিধান বদল করার জন্যেই মোদী চারশোর বেশি আসন চাইছেন।
রবিবার তিরুবনন্তপুরমে সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, এই নির্বাচন দেশের ভবিষ্যতের জন্য অতি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট করে বলা আছে, ভারত একটি ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক সাধারণতন্ত্র। সংবিধানে অন্য সমস্ত গণতান্ত্রিক অধিকারও আজ আক্রমণের মুখে। যদি বিজেপি ক্ষমতায় ফেরে, মোদী ক্ষমতায় ফেরেন সংবিধানকে বদলে ফেলার সমস্ত সম্ভাবনা আছে, বিজেপি নেতারা তেমনই ঘোষণা করছেন। সংবিধান বদলের মাধ্যমেই এই ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক দেশকে অসহিষ্ণু, কর্তৃত্ববাদী, ফ্যাসিবাদী হিন্দুত্বের রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায় বিজেপি। যে সমস্ত দেশপ্রেমিক মানুষ ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক চরিত্রকে বজায় রাখতে চান, তাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এটা নিশ্চিত করতে হবে যাতে বিজেপি ক্ষমতায় ফিরতে না পারে। মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার যা ভারতের সংবিধানে সুরক্ষিত করা হয়েছে, তাকে রক্ষা করতে হলে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে এগিয়ে আসতে হবে। দুনিয়ার মানুষের কাছে ভারতের পরিচয় তার সংবিধানের জন্যেই। তাই সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক শক্তিকে এগিয়ে আসতে হবে এই সংবিধান রক্ষার জন্য।
এদিনই সাতনার সমাবেশ থেকে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে এবং রায়পুরের সমাবেশ থেকে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী সরাসরি বলেছেন, বিজেপি ফের ক্ষমতায় ফিরলে সংবিধান বাতিল করবে। মধ্য প্রদেশের সাতনায় দলীয় প্রার্থীর সমর্থনে নির্বাচনী প্রচারে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে বলেন, মোদী-শাহের সরকার ফের ফিরলে দেশের সংবিধানকে বাতিল করা হবে এবং গণতন্ত্র শেষ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, যদি বিজেপি ফের ক্ষমতায় আসে তাহলে বাবাসাহেব আম্বেদকরের তৈরি সংবিধান বাতিল করে দেবে। মহিলা, শ্রমিক এবং কৃষকের ভোটাধিকার আর থাকবে না। যদি সেই অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখতে চান, তাহলে বিজেপি-কে পরাস্ত করতে হবে। সংবিধানকে ধ্বংসের চেষ্টাই বিজেপি’র গত দশ বছরে একমাত্র কাজ বলে মন্তব্য করেন খাড়গে। অন্যদিকে ছত্তিশগড়ের রায়পুরে এক সমাবেশ থেকে কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, বিজেপি’র বহু নেতা তাঁদের ভাষণে বলেছেন, বিজেপি-কে ৪০০ আসন দেওয়ার জন্য, যাতে তারা সংবিধান বদল করতে পারে। কেন বিজেপি’র ছোট নেতারা এবং মন্ত্রীরা এই কথা বলছেন যে তারা সংবিধান বদলে ফেলবেন। উপস্থিত জনতার উদ্দেশে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী প্রশ্ন তোলেন, মোদীর অনুমতি ছাড়া তাঁর মন্ত্রীরা আর বিজেপি’র ছোট নেতারা এই কথা বলতে পারেন? কংগ্রেস নেত্রী বলেন, এটা একটা বিরাট বড় ষড়যন্ত্র। সংবিধান আপনাদের ভোট দেওয়ার অধিকার দিয়েছে। আপনাদের সংরক্ষণ দিয়েছে। আদিবাসী সংস্কৃতি রক্ষার অধিকার দিয়েছে। দলিতদের উন্নয়ন সুগম করেছে। মানুষের এই সমস্ত অধিকার কেড়ে নিতেই বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার সংবিধান বদল করতে চাইছে।
বিরোধীদের এই আক্রমণের মুখে মোদী-শাহরা লাগাতার চেষ্টা চালাচ্ছেন নিজেদের অ্যাজেন্ডাকে গোপন রাখতে। এদিন বিহারের কাটিহারের সমাবেশ থেকে বলেছেন, কংগ্রেস মণ্ডল কমিশনের বিরোধিতা করেছিল। সেই কংগ্রেসের হাত ধরেছে আরজেডি। মণ্ডল কমিশনের সিদ্ধান্ত কার্যকরী করে ওবিসিদের জন্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী ভিপি সিং। তার সরকারের থেকে বিজেপি’র সমর্থন প্রত্যাহারের সেটাই ছিল প্রকৃত কারণ। আরএসএস’র উসকানিতে দেশজুড়ে হিংসাত্মক আন্দোলন হয়েছিল ওবিসি সংরক্ষণের বিরুদ্ধে। এদিন সেই সব গোপন করেছেন শাহ।
Sitaram Yechury
সংবিধান বাঁচাতে এগিয়ে আসুন দেশপ্রেমিক মানুষ তিরুবনন্তপুরমে ইয়েচুরি
×
Comments :0