লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আবেদন করেও প্রায় ৩ লক্ষ মহিলার অ্যাকাউন্টে পৌঁছায়নি টাকা।
নতুন করে দুয়ারে সরকার শিবিরে আরও ৬ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আবেদন করে বসে আছেন। এমনিতেই গ্রামে ১০০দিনের কাজ নেই। বন্ধ হয়ে আছে আবাস যোজনা। দুর্নীতির একের পর এক ঘটনায় বিদ্ধ তৃণমূল দল। সরকারি আর্থিক সহয়তা প্রকল্পের নিষ্পত্তি নিয়ে এখন দ্রুত পদক্ষেপ নিতে চাইছে নবান্ন।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে আবেদনকারী মহিলাদের অ্যাকাউন্টে যাতে দ্রুত টাকা ছাড়া যায় তারজন্য নির্দেশিকা জারি করল নারী, শিশু ও সমাজ কল্যাণ দপ্তর। রাজ্যের সব জেলাশাসক ও কলকাতা কর্পোরেশনের কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন দপ্তরের প্রধান সচিব সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ। ওই চিঠিতেই দ্রুত যাতে সমস্যা মিটিয়ে ফেলা যায় তার জন্য ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়েছে।
দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আবেদন পরীক্ষা করতে গিয়ে বেশ কিছু ত্রুটি নজরে এসেছে। তার মধ্যে ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়ার জন্য প্রায় ২লক্ষ ৬৩ হাজার আবেদন বকেয়া পড়ে আছে। ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বরের শীর্ষে আছে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা। প্রায় ২৫ হাজারের ওপর আবেদনকারীর আবেদন পড়ে আছে ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বর দেওয়ার জন্য। তারপরেই আছে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা। ২৩ হাজারের ওপর আবেদনকারী মহিলার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ভুল নম্বর থাকার জন্য সমস্যা হচ্ছে। অবিলম্বে এই সমস্যা দ্রুত মিটিয়ে ফেলার জন্য জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ভুল অ্যাকাউন্ট নম্বরের মতোই ১৭ হাজারের ওপর আবেদনকারী মহিলার অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠিয়ে দেওয়ার পরও তা ফিরে আসছে। একইসঙ্গে জাতিগত শংসাপত্র না থাকার জন্য প্রায় চার হাজারের ওপর আবেদন পড়ে আছে। প্রসঙ্গত, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে সাধারণ মহিলারা মাসে ৫০০ টাকা ও তফসিলি জাতি ও আদিবাসী মহিলারা মাসে ১ হাজার টাকা সরকারের তরফ থেকে ভাতা পেয়ে থাকেন। জাতিগত শংসাপত্রের সমস্যার সঙ্গে আধার নম্বরের গোলমালের জন্য আটকে আছে প্রায় সাড়ে ৭ হাজার আবেদনপত্র। জেলাশাসকদের কাছে চিঠি দিয়ে দ্রুত আধার নম্বর সহ অন্যান্য সমস্যাগুলির সমাধান করার কথা জানিয়ে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের উপভোক্তাদের টাকা পেতে যাতে আর কোনোভাবেই দেরি না হয় তার জন্য জেলাশাসকদের সক্রিয় হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, আগামী পঞ্চায়েত ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পকে শাসকদল ভোট প্রচারের অন্যতম হাতিয়ার করতে চলেছে। তাই ভোটের আগে জমা পড়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের আবেদনগুলিকে দ্রুত নিষ্পত্তি করার পরিকল্পনা নিয়েছে দপ্তর।
ঘটনা হলো গত ১ এপ্রিল থেকে রাজ্যে শুরু হয়েছিল দুয়ারে সরকার শিবির। ১০ এপ্রিল পর্যন্ত শিবিরে এবারে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নতুন করে প্রায় ৬ লক্ষ আবেদন জমা পড়েছে। ফলে নতুন জমা পড়া আবেদনকেও ৩০ এপ্রিলের মধ্যে নিষ্পত্তি করে উপভোক্তাদের হাতে পরিষেবার সুযোগ পৌঁছে দিতে হবে। নারী ও শিশু কল্যাণ দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বকেয়া পড়ে থাকা ৩ লক্ষ আবেদন অতীতের দুয়ারে সরকার শিবিরের। নতুন জমা পড়া লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের আবেদনকারীদের আগে তাই পুরানো আবেদনের কাজ শেষ করতে চাইছে সরকার।
লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য একমাত্র দুয়ারে সরকার শিবির থেকে উপভোক্তা বাছাই করার কাজ হয়ে থাকে। গত নভেম্বর মাসের শিবিরে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের জন্য আবেদনকারীদের নাম তোলার জন্য স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলেই চলতো। কারণ, মহিলারা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পের সুযোগ গ্রহণের জন্য যাওয়ার পর তা নথিভুক্ত করার সময় গোটা পরিবারের সব সদস্যদের নাম স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড থেকেই পাওয়া যেত। সেখান থেকে আবেদনকারীর তথ্য যাচাই করে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নতুন নাম নথিভুক্ত করে নেওয়া যেত।
কিন্তু চলতি দুয়ারে সরকার শিবির থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড দিয়ে নতুন উপভোক্তার নথিভুক্ত করার কাজ। তার পরিবর্তে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে নথিভুক্ত হওয়ার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে শুধুমাত্র আধার কার্ডকেই। কেন এই উদ্যোগ? আসলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রাজ্যের সব মানুষের আওতায় নেই। ফলে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের বাইরে থাকা মহিলাদের লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুযোগকে প্রসারিত করার জন্য আধার কার্ডকে বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। নবান্নের এক আধিকারিকের কথায়,‘‘ স্বাস্থ্যসাথী কার্ড সবার নেই। কিন্তু আধার সবার আছে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে আরও একবার মহিলাদের কাছে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের সুযোগকে প্রসারিত করার ব্যবস্থা করা হলো।’’ এরজন্য সরকারি খরচ আরও বাড়বে জেনেও পঞ্চায়েত ভোটের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার নিয়েই মহিলাদের মন জয় করতে চাইছে রাজ্য সরকার।
পঞ্চায়েত ভোটের আগে আগামী ২৬ এপ্রিল নবান্ন সভাঘরে মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক করতে চলেছে। ওই দিন দুপুর ১ টায় নবান্ন সভাঘরে রাজ্যের মন্ত্রী, দপ্তরের প্রধান সচিব থেকে যুগ্ম সচিব পদ মর্যাদার আধিকারিকরা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। গত আর্থিক বছরে বিভিন্ন দপ্তরের জন্য বরাদ্দ অর্থের হিসাব সহ কাজের খতিয়ান নিয়ে আলোচনা হতে চলেছে। সূত্রের খবর ওই বৈঠকের পরও রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে পুরোদমে প্রস্তুতি শুরু করে দিতে চলেছে শাসকদল। ফলে বৈঠকের আগে লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রকল্পে বকেয়া কাজ দ্রুত শেষ করার পরিকল্পনা নিয়েছে নারী শিশু ও সমাজ কল্যাণ দপ্তর।
Comments :0