পাঁচ রাজ্যের ভোট ঘোষণার পর সেই রাজ্যের প্রার্থী স্থির করতে হিমসিম অবস্থা বিজেপির। বিশেষ করে বড় রাজ্য মধ্য প্রদেশ ও রাজ্যস্থানে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী স্থির করতে চরম বিপাকে দল। কোন্দল সামাল দিতে দল সাংসদ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের বিভিন্ন রাজ্যের ভোটে প্রার্থী করেছে। এখনও পর্যন্ত তিনটি রাজ্যে মোট ২৭জন সাংসদ ও ৪জন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে প্রার্থী করেছে বিজেপি। রাজস্থানে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরারাজে রাজ্যে দলের মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হলেও তাঁকে এখনও প্রার্থী করেনি দল। মধ্য প্রদেশে গত নির্বাচনে বিজেপি গোহারা হারলেও বিজেপি নেতা শিবরাজ সিং চৌহান দেদার কংগ্রেসের বিধায়ক কিনে তাদের জোট সরকার ফেলে দিয়ে নিজে বিজেপি সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন। সেই চৌহানকে এবার মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী পদ থেকে বাদ দেয় বিজেপি। তবে তাঁকে প্রার্থী না করা হলে দল ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়ে তিনি দলের প্রার্থী পদ আদায়ে সক্ষম হয়েছেন। অন্যদিকে কংগ্রেস শাসিত ছত্তিশগড়ে বিজেপি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রামন সিংকে মুখমন্ত্রী প্রার্থী করে নির্বাচনে লড়ছে। তেলেঙ্গানায় বিজেপি একাই লড়বে বলে স্থির করেছে। তাদের দলের প্রার্থী তালিকা নিয়ে আলোচনা শেষ হয়েছে। তবে দল সূত্রে জানানো হয়েছে, ভালো দিনক্ষণ বুঝেই তালিকা ঘোষণা করা হবে। এদিকে মিজোরামে গতবারে দলের বিধায়ক ছিল একজন। এবারে এখনও কোনও প্রার্থী ঘোষণা করা হয়নি।
মধ্য প্রদেশে এক দফায় ১৭ নভেম্বর ভোট। রাজ্যে বিজেপির থেকে কংগ্রেস আগে থেকেই প্রচারে অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। এতেই প্রমাদ গুণছে বিজেপি। সামনে চলে এসেছে কংগ্রেসের ভোটে জাতভিত্তিক সমীক্ষা চালু করা নিয়ে প্রচার। গত ২০১৮ সালের ভোটে মধ্য প্রদেশে ২৩০ আসনে কংগ্রেস ১১৪ আসনে জয়ী হয়। রাজ্যে ভোটের হারে জনসমর্থনে এখনও এগিয়ে রয়েছে কংগ্রেস। গত বিধানসভায় বিজেপি পায় ১০৯ আসন। রাজ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে কংগ্রেস সমাজবাদী পার্টি, বিএসপি ও নির্দল বিধায়ক নিয়ে জোট সরকার গঠন করে। ১৫ মাস জোট সরকার চলার মাথায় কংগ্রেসের নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া সহ কংগ্রেস দলের বিধায়কদের কিনে নিয়ে জোট সরকার ফেলে দিয়ে বিজেপি রাজ্যে সরকার গঠন করে। দলের নেতা শিবরাজ সিং চৌহান হন মুখ্যমন্ত্রী। সেই বিরোধী বিধায়ক কেনায় সফল দলের মুখ্যমন্ত্রী চৌহানকে এবারে আর প্রার্থী করতে চায়নি দল। নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু হতেই দফায় দফায় রাজ্যে দলের প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করে বিজেপি। চার দফায় মোট ১৩৬ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিজেপি। এদিকে দলের প্রথম দিকের তালিকায় চৌহান নিজের নাম প্রকাশ না হওয়ায় নিজেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করার দাবি জানিয়ে তিনি জনসভা করেন। সভায় তিনি বুঝিয়ে দেন তাঁকে প্রার্থী না করা হলে দল ভেঙে দেবেন। এদিকে কংগ্রেস থেকে চৌহানকে প্রার্থী করা হচ্ছে না বলেও প্রচার শুরু হয়ে যায়। বেকায়দায় পড়ে দল ৪র্থ তালিকায় যে ৫৭জন প্রার্থীর নাম প্রকাশ হয়েছে তার মধ্যেই রাখা হয়েছে শিবরাজ সিং চৌহানের নাম। মধ্য প্রদেশে মোট ১৭জন সাংসদকে বিধানসভায় প্রার্থী করা হয়েছে। তাঁর মধ্যে তিনজন হলেন আবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। তিন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মধ্যে রয়েছেন নরেন্দ্রসিং তোমার, প্রহ্লাদ প্যাটেল ও ফাগগান সিং কুলস্তে। দেখা গেছে, মধ্য প্রদেশে বিজেপির বিপুল ভোটে হেরে যাওয়া আসনে এবারে দলের সাংসদ ও মন্ত্রীদের প্রার্থী করা হয়েছে।
এদিকে ২০০ আসনের রাজস্থানে ভোট হচ্ছে ২৩ নভেম্বর। এদিন রাজস্থানে প্রথম ৪১জন প্রার্থীর যে নাম ঘোষণা হয়েছে তার মধ্যে ৭জন হলেন সাংসদ। এদিকে প্রথম প্রার্থী তালিকায় যে নাম ঘোষণা হয়েছে তাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজেপি নেত্রী বসুন্ধরারাজের নাম নেই। দলের থেকে বার্তা পরিষ্কার করে দেওয়া হয়েছে বসুন্ধরা রাজেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করা হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী মোদী রাজ্যে দলীয় সভায় বলেছেন, কাউকেই মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করে লড়বে না দল। সকলকেই দলের প্রতীককে জেতানোর জন্য লড়তে হবে। এদিকে দল সূত্রে জানা গেছে, এবারে বসুন্ধরার বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গজেন্দ্র সিং শেখাওয়াত রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার হিসাবে লড়াইতে এগিয়ে রয়েছেন। প্রসঙ্গত গত বিধানসভায় বিজেপি পায় ৭৩ আসন, কংগ্রেস পায় ৯৯ আসন।
ছত্তিশগড়ে ভোট হবে ৭নভেম্বর এবং ১৭ নভেম্বর দুই দফায়। ৯০ আসনের বিধানসভায় বিজেপি দুই দফায় ৭৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। রাজ্যে তিন সাংসদ ও একজন কেন্ত্রীয় মন্ত্রীকে প্রার্থী করা হয়েছে। ছত্তিশগড়ে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী রামন সিংকে বিজেপি দলের মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী ঘোষণা করে নির্বাচনে লড়ছে। এদিকে তেলেঙ্গানার ১১৯ আসনে বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে ৩ নভেম্বরর। রাজ্য বিজেপি নেতারা জানিয়েছেন শুভ সময় হলেই প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হবে। তবে তেলেঙ্গানায় বিজেপি তৃতীয় শক্তি। রাজ্যে গত নির্বাচনে তারা মাত্র ৫টা আসন পায়। ভারত রাষ্ট্রীয় সমিতি গত বছর রাজ্যে সরকার গঠন করে। মিজোরামে ৪০ আসনের বিধানসভায় ৭নভেম্বর ভোট। মিজোরামে বিজেপির বিশেষ জনসমর্থন নেই। প্রার্থী তালিকা ঘোষণা হয়নি। গত বছর মাত্র ১টি আসন পায় বিজেপি।
Comments :0