চিন্ময় কর: পশ্চিম মেদিনীপুর
দীর্ঘক্ষণ পড়ে রইল রেলগেট, আপ ও ডাউন দুই লাইন দিয়ে চলাচল করলো একধিক ট্রেন। দুই পাশে দাঁড়ানো এাকাধি গাড়ি ও মানুষজন। দীর্ঘক্ষণ রেলগেটে আটকে থাকার কারণে টোটোতেই প্রসব করলেন প্রসূতি। জন্ম দিলেন মৃত সন্তানের। শুক্রবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলদা কেশিয়াড়ি মোড়ে ২৪ নম্বর রেলগেটে। স্থানীয়রা বলছেন, একই ভাবে বেলদার এই রেলগেটের জন্য মানুষকে যে ভুগতে হয়। গত ২৭ এপ্রিল বেলদার এই লেভেল ক্রসিংয়ে আটক পড়ে হাসপাতালে পৌঁছনোর আগেই টোটোতে ছেলের কাঁধে মাথা রেখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন বেলদার বাসিন্দা মণীন্দ্রনাথ ষড়ঙ্গী(৭৫)। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন তিনি। সেই রেল গেটে আটক পড়ে টোটোর মধ্যেই প্রসূতির প্রসব এবং সদ্যজাতর মৃত্যুর ঘটনা। বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো ও পরিষেবা নিয়েও অভিযোগ উঠছে।
জানা গেছে শুক্রবার সকালে প্রসূতির প্রসব যন্ত্রণা শুরু হলে পরিবারের লোকজন স্থানীয় আশাকর্মী কৃষ্ণা পড়িয়াকে খবর দেয়। তিনি বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যান। অভিযোগ, শুক্রবার ভোর পাঁচটা নাদাগ বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ওই প্রসূতি ভর্তি হওয়ার পরেও চিকিৎসক ছিলেন না। সকাল ৯টা নাগাদ চিকিৎসক আসার পর আলট্রাসোনোগ্রাফি করার নির্দেশ দেয়। যদিও বেলদা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল আলট্রাসোনোগ্রাফি করার কোনো যন্ত্রই নেই। হাসপাতাল কতৃপক্ষের নির্দেশ মতো প্রসূতির স্বামী নিজ দায়িত্বে টোটোতে চাপিয়ে বাইরে আলট্রাসোনোগ্রাফি করাতে প্রসূতিকে নিয়ে যায়। তাদের সঙ্গে ছিলেন এক আশা কর্মীও। হাসপাতাল থেকে গিয়ে আবার ফিরে আসতে ঘন্টা দেড়েক সময় চলে যায়। আর সেই ফেরার পথেই রেল গেট বন্ধ থাকায় টোটো দাঁড়িয়ে থাকে আরও অনেকক্ষন। টোটোর মধ্যেই প্রসব হওয়ার পর সেই সদ্যজাতর ন্যূনতম চিকিৎসার বা কাঁদানোর জন্য কোনো সুযোগ না পেয়ে সদ্যজাতর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ক্ষোভ উগরে দেন স্থানীয় মানুষ।
আশাকর্মী কৃষ্ণা পড়িয়া বলেন, তিনি ভোর রাতে খবর পেয়েই সময় মতো হাসপাতালে প্রসূতিকে নিয়ে আসেন। কিন্তু দেরি করে আলট্রাসোনোগ্রাফি বাইরে করাতে গিয়ে আপ ও ডাউন দুই লাইনেই একাধিক ট্রেন যাওয়ার ফলে প্রায় বেশ কিছুটা সময় আটকে যান। অনেক চেষ্টা করেও টোটো ঘুরিয়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারেননি। টোটোতেই সন্তান প্রসব হয়ে যায়। আর সদ্যজাতর কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বেলদা ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক আশিস মণ্ডলের কথায়, ‘‘আমাদের চিকিৎসক দেখার পরই ইউএসজি করাতে বলেছিলেন। বেলদা হাসপাতালে এখনও ইউএসজি চালু হয়নি। পথেই এমন ঘটনা ঘটে যায়। এটা ঠিক, রেলগেট না পড়লে হয়তো হাসপাতালেই প্রসব হতো। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রসূতিকে কেনো এ্যাম্বুলেন্সে পাঠানো হলো না ইউএসজি করতে তার উত্তর দিতে পারেন নি তিনি।
জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক সৌম্যশঙ্কর ষড়ঙ্গী বলেন, ‘‘খুবই দুঃখজনক ঘটনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উচিৎ ছিল অ্যাম্বুল্যান্স করে পাঠানো। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি। উপ মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক পৌঁছেছেন। হাসপাতালের সুপার এবং কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্সদের শোকজ় করেছি। এমন মর্মান্তিক ঘটনা ঘটার পরই জেলা প্রসাশন শালবনি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে একটি অতিরিক্ত ইউএসজি মেশিন পাঠানো হচ্ছে বলে জানান।
Comments :0