M A Baby

সমস্যার সমাধান দ্বিপাক্ষিক পথেই করতে হবে, কারও হস্তক্ষেপ চলবে না: বেবি

জাতীয়

ছবি সংগ্রহ থেকে।

ভারত-পকিস্তানের মধ্যেকার যাবতীয় সমস্যা ও বিবাদের সমাধান কেবলমাত্র দ্বিপাক্ষিক পদক্ষেপেই করতে হবে। বন্ধু রাষ্ট্র হোক বা অন্য কিছু কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ এক্ষেত্রে চলবে না। ভারতের বরাবরের এই অবস্থানের সাথেই দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে আছে সিপিআই (এম)। রবিবার আগরতলায় সাংবাদিক সম্মেলনে একথা জানিয়েছেন পার্টির নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবী। দু’ দেশের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে মার্কিন রাষ্ট্রপতির অদ্ভুত ঘোষণা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী এবং বিদেশ মন্ত্রীর ব্যাখ্যা দাবি করেছেন তিনি। পহেলগামে নিরীহ পর্যটকদের হত্যাকারী সন্ত্রাসবাদীদের পাকড়াও করে ভারতের হাতে তুলে দিতে পাকিস্তানের উপর অসামরিক চাপ বৃদ্ধির দাবিও জানিয়েছেন তিনি।
মাদুরাইয়ে সিপিআই(এম)’র ২৪তম পার্টি কংগ্রেসের পর রবিবার ত্রিপুরা রাজ্য কমিটির প্রথম বৈঠক হয়। এই বৈঠকে যোগ দিতে আগরতলায় আসেন সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক এম এ বেবী। বৈঠকের পর এদিন সন্ধ্যায় পার্টির রাজ্য দপ্তর দশরথ দেব ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে পহেলগামে সন্ত্রাসবাদী হামলা ও নিরীহ পর্যটকদের হত্যার পর পশ্চিম সীমান্ত পরিস্থিতি এবং সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানান তিনি। সিপিআই(এম) ত্রিপুরা রাজ্য সম্পাদক তথা পলিট ব্যুরোর নবনির্বাচিত সদস্য জীতেন্দ্র চৌধুরি, কেন্দ্রীয় কমিটির অপর নবনির্বাচিত সদস্য মানিক দে-ও সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।
সংঘর্ষ বিরতি প্রসঙ্গে সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক বলেন, শনিবার হঠাৎ করে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা হয়েছে এবং তা তৎক্ষণাৎই কার্যকরও করা হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে অদ্ভুত বিষয় হিসাবে উদয় হয়েছে ভারতের বিদেশ সচিবের বক্তব্য এবং তার আগেই আমেরিকার রাষ্ট্রপতির ভারত-পাকিস্তানের সংষর্ঘ বিরতির ঘোষণা। বিদেশ সচিব ঘোষণায় বলেছেন, পাকিস্তানের ডাইরেক্টর জেনারেল অব মিলিটারি অপারেশন ভারতের ডিজিএমও-কে ফোন করেছেন এবং সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দেন এবং ভারত সেই প্রস্তাব গ্রহণ করেছে। অথচ, ভারতের বিদেশ সচিবের ঘোষণার অনেক আগেই আমেরিকার রাষ্ট্রপতি সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা করেছেন। ভারত-পাকিস্তানের ডিজিএমও’র মধ্যে আলোচনায় সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল বলে যেটা বিদেশ সচিব দেশকে জানিয়েছেন মার্কিন রাষ্ট্রপতির ঘোষণা তার সাথে পরস্পরবিরোধী বা অসঙ্গতিপূর্ণ। 
বেবী বলেছেন, সিপিআই(এম) সবসময় এই অবস্থান নিয়ে চলছে যে প্রতিবেশী দু’দেশের মধ্যে যে কোনও সমস্যাই থেকে থাকুক না কেন, সেগুলো সমাধান করতে হবে দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগের মাধ্যমে। কোনোরকম তৃতীয় শক্তির হস্তক্ষেপ এরমধ্যে চলবে না। ভারত সরকারও এই অবস্থান নিয়েই অগ্রসর হয়ে আসছে। বিশেষ করে পাকিস্তান সম্পর্কিত বিষয়ে। এবার কী তার ব্যতিক্রম কিছু ঘটেছে? ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, বিদেশ মন্ত্রীর এই নিয়ে ব্যাখ্যা দেওয়া দরকার, আসলে কী হয়েছে।
সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপ কড়া হাতে মোকাবিলা এবং পহেলগামে হত্যাকারীদের পাকড়াও করে বিচারের মুখোমুখি করার দাবিতে সিপিআই (এম) দ্ব্যর্থহীন ভাবেই বহাল আছে। এ কথা স্পষ্ট করে দিয়ে এম এ বেবী বলেছেন, আমরা ভারত ও পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে শান্তি চাই। একই সঙ্গে আমরা এনিয়েও পরিষ্কার, যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদ বরদাস্ত করা যাবে না। যে কোনও ধরনের সন্ত্রাসবাদকে শক্ত হাতে মোকাবিলা করতে হবে। যে সব সন্ত্রাসবাদী পহেলগামে বর্বর হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের ধরতে হবে এবং বিচার ব্যবস্থার সামনে হাজির করতে হবে। গোয়েন্দা তথ্য যা প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে ঐ হীন হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত সন্ত্রসবাদীরা পালিয়ে গেছে। পাক অধিকৃত কাশ্মীরি বা অন্যত্র সুরক্ষিত ঠিকানায় গা ঢাকা দিয়েছে। পাকিস্তানের উপর অসামরিক চাপ বাড়াতে হবে যেন তারা সেই সন্ত্রসাবাদীদের পাকড়াও করে ভারতের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়।
আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত-পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতি ঘোষণা এবং তার এক্স হ্যান্ডেলে এক বার্তায় কাশ্মীর ইস্যুকে টেনে আনা প্রসঙ্গে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেছেন, আমেরিকার রাষ্ট্রপতির ঘোষণার আগের দিন ঐ দেশের উপ রাষ্ট্রপতি জেডি ভান্স বলেছিলেন, ভারত-পকিস্তানের বিবাদ তাদের নিজস্ব ব্যাপার এবং দু’পক্ষকেই তার সমাধান করতে হবে। পরদিন মার্কিন রাষ্ট্রপতি তার উপ রাষ্ট্রপতির বক্তব্য উড়িয়ে দিয়ে সংঘর্ষ বিরতির ঘোষণা দিয়ে দিলেন। ট্রাম্প নিজে থেকে এমনটা করেছেন নাকি তাকে এর মধ্যে আমন্ত্রণ করে আনা হয়েছে সেটা প্রধানমন্ত্রীকেই ব্যাখ্যা করতে হবে।
সংঘর্ষ বিরতির পরও উলঙ্ঘনের কিছু বিক্ষিপ্ত ঘটনার অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বেবী বলেন, আমরা আশা করব এটা না বাড়ুক। কেউ সংঘর্ষ বৃদ্ধি এবং যুদ্ধ থেকে লাভবান হবে না। পহেলগাম ঘটনার পর কেন্দ্রীয় সরকার দাবি করেছিল সেনা অভিযান ‘সিঁদুর’ সফল হয়েছে। এই অভিযান ছিল সুসমঞ্জস্যপূর্ণ এবং বিবাদ বাড়ানোর মতো নয়। কেন্দ্রীয় সরকার এটা ব্যাখ্যা করেছে এবং আমাদের তার মধ্যেই থাকতে হবে। সন্ত্রাসবাদীদের ঘাঁটি নিশানা করতে হবে। তাতে সাফল্য পাওয়া গেছে। সংঘর্ষ বিরতি উলঙ্ঘন নিয়ে উভয় দেশের ডিজিএমও স্তরের আলোচনায় নিশ্চয়ই কথা হবে বা হয়েছে বলে আমরা আশা করতে পারি।
সিপিআই (এম) সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, মাদুরাইতে সদ্য সমাপ্ত পার্টি কংগ্রেস গুরুত্বপূর্ণ অনেক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দেশের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য এখনই সবগুলো ইস্যু সামনে আনা হচ্ছে না। তবে এটা নিশ্চিত ভারতে নয়া ফ্যাসিবাদের তৎপরতার বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ-গণতান্ত্রিক শাক্তিকে একটি বৃহৎ মঞ্চে নিয়ে আসার জন্য সিপিআই (এম) কাজ করবে। বিহারে আগামী অক্টোবরে নির্বাচন হবে। পার্টি কংগ্রেসের পর প্রথম কোনও রাজ্য বিধানসভার ভোট হতে চলেছে। বিহারে ‘মহাগঠবন্ধন’-এর ছাতার তলায় সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক শক্তিকে নিয়ে আসার জন্য কাজ করবে সিপিআই (এম)। ইতোমধ্যেই শরিকদের সাথে কথা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বেবী বলেছেন, ত্রিপুরা ও পশ্চিমবঙ্গ সহ ভারতের যেসব জায়গায় পার্টির শক্তি ক্ষয় হয়েছে তা পুনরুদ্ধার করতে কর্মপন্থা নিয়েও পার্টি কংগ্রেসে আলোচনা হয়েছে। ত্রিপুরা রাজ্য সম্মেলনেও এ রাজ্যের জন্য রূপরেখা তৈরি হয়েছে। ত্রিপুরায় নেতা-কর্মীরা নিয়মিত আক্রান্ত হচ্ছেন। এ রাজ্যের মানুষ করুণ দশার মধ্যে দিয়ে চলেছেন। মানুষ কাজের সন্ধান পেতে সমস্যায় পড়ছেন। বিভিন্ন প্রান্তে অনাহারের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কাজের খোঁজে রাজ্যের বাইরে ছুটছেন। এই পরিস্থিতির পরিবর্তনে পার্টি কাজ করছে।  

Comments :0

Login to leave a comment