Manipur

শান্তি ফিরুক চায় না বীরেন সিং সরকার

জাতীয়

বিশ্বজিৎ দাস: ইম্ফল
 

রাজ্যে শান্তি ফেরাতে বিজেপি সরকার ব্যর্থ বললে ভুল হবে। বরং, বলা ভালো রাজ্যে শান্তি ফিরে আসুক, তা চাইছে না বিজেপি। সিপিআই(এম) প্রতিনিধি দলকে এই অভিযোগ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। পার্টির প্রতিনিধি দল তিনদিনের মণিপুর সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার ইম্ফলে বিভিন্ন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে। 
এদিন সকালে ক্যাথলিক চার্চের আর্চ বিশপ ডা.ডমিনিক লুপিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পার্টি নেতারা। হিংসায় খ্রিস্টানদের উপর ভয়ঙ্কর আক্রমণের ঘটনাগুলি পার্টি নেতাদের কাছে তুলে ধরেন আর্চ বিশপ। জাতিগত হিংসার পিছনে খ্রিস্টান নির্মূল অভিযান চলছে, তা জানান বিশপ। রাজ্যে হিংসার জন্য হাইকোর্টের একটি রায়কে বিজেপি দায়ী করলেও এর আগে থেকে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে আক্রমণ শুরু করে উগ্র মেইতেই সংগঠনগুলি। এই সংগঠনগুলির পৃষ্ঠপোষক সঙ্ঘ পরিবার।
বিশপের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াও আরও চারটি সংগঠনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন পার্টি নেতারা। এরমধ্যে রয়েছে ইউনাইটেড নাগা কাউন্সিল অব পিস, সিভিল ট্রাইভ ডিমান্ড কমিটি, অল মণিপুর ইউনাইটেড ক্লাব অর্গানাইজেশন ও ফেডারেশন অব সিভিল সোসাইটি অর্গানাইজেশন। প্রতিটি সংগঠনের কর্মকর্তাদের আলোচনা থেকে একটি অভিন্ন ভাষ্য উঠে আসে। তা হলো, বিজেপি চাইছে না রাজ্যে শান্তি ফিরুক। তাদের বক্তব্য, রাজ্যে ৬০ হাজার কেন্দ্রীয় বাহিনী রয়েছে। কিন্তু তাদেরকে নিষ্ক্রিয় করে রেখে দিয়েছে সরকার। হিংসা কবলিত এলাকায় বাহিনী পাঠানো হচ্ছে না। কোথাও হামলা হওয়ার পূর্বাভাস থাকা সত্ত্বেও সেখানে বাহিনী মোতায়েন করা হচ্ছে না। বিজেপি আশ্রিত গুন্ডাবাহিনী সমান্তরাল শাসন চালাচ্ছে। কুকি-বিদ্বেষকে হাতিয়ার করে সাধারণ মেইতেইদেরও জীবন-জীবিকা কেড়ে নিয়েছে। কর্মকর্তাদের অভিমত, বিজেপি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় রাজ্যে শান্তি ফেরানো সম্ভব হবে না। মণিপুর নিয়ে সিপিআই(এম)’র অবস্থান সংগঠনগুলির সামনে ব্যাখ্যা করেন পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি। 
এদিন বিকালে প্রদেশ কংগ্রেস কার্যালয়ে রাজ্যের দশটি বিরোধী দলের নেতারা মিলিত হন। কংগ্রেস কার্যালয়ে সিপিআই(এম) প্রতিনিধি দলকে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এখানে মণিপুর নিয়ে আগামী দিনের কর্মপন্থা ঠিক করতে দশ দলের নেতৃত্ব আলোচনা করেন। বৈঠকে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা ইবোবি সিংও উপস্থিত ছিলেন। এদিন ইম্ফলের খোমালাম্পা স্টেডিয়ামে একটি আশ্রয় শিবির পরিদর্শন করেন পার্টির প্রতিনিধি দল। এই শিবিরে ১৯৩ জন আশ্রয় নিয়েছেন, সকলেই মেইতেই সম্প্রদায়ভুক্ত। শিবিরে দুর্দশার ছবি স্পষ্ট। পর্যাপ্ত খাবারের অভাব রয়েছে। এরমধ্যে পানীয় জল, বিদ্যুতের সমস্যাও রয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, শিবির ছাড়তে পরোক্ষে চাপ সৃষ্টি করছে রাজ্য সরকার । আশ্রিতরা বলেন, ত্রাণ বলতে শুধু চাল, ডাল আর আলু। তিন মাস ধরে তা খেয়েই কাটাতে হচ্ছে। এগুলিও পর্যাপ্ত নয়। ফলে পুষ্টিহীনতায় আক্রান্ত হচ্ছেন তাঁরা। মাঝেমধ্যে চিকিৎসা শিবির করা হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না। শিবিরবাসীদের চোখেমুখে আতঙ্কের ছাপ স্পষ্ট। তাঁদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখানে আর কোনোদিন ফিরতে পারবেন কিনা, এনিয়ে সন্দেহ তৈরি হয়েছে। অনেকে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলেছেন, ‘‘আমাদের আর বাড়ি ফেরা হবে না।’’ রাজ্যের মধ্যে কয়েক হাজার মানুষ বাস্তহারা হয়েছেন। দিশাহারা মানুষদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন পার্টি নেতৃবৃন্দ। 
পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুপ্রকাশ তালুকদার বলেন, ‘‘গত দুদিনে রাজ্যের অবস্থা যা দেখেছি, তাতে শুধু ধ্বংসেরই ছবি। কাজ নেই, খাদ্য নেই। স্কুল খোলা আছে বলে সরকার থেকে প্রচার করা হলেও স্কুলে ছাত্র-ছাত্রী নেই। দোকানপাট খোলা আছে। কিন্তু ক্রেতারা দেখে নেই। সরকারি কার্যালয় খোলা আছে। বেশিরভাগ কর্মচারী অনুপস্থিত। চাষাবাদ বন্ধ। রাজনৈতিক স্বার্থে রাজ্যের মেইতেই ও কুকির মধ্যে দেয়াল তুলে দিয়েছে বিজেপি-আরএসএস।’’ 
কেন্দ্রীয় কমিটির আরেক সদস্য জিতেন্দ্র চৌধুরি বলেন, ‘‘রাজ্যকে অশান্ত করার নাটের গুরু বীরেন সিং মুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কেন্দ্রীয় বাহিনীকে যথাযথ কাজে লাগাতে হবে। ঘরছাড়া মানুষদের ঘরে ফেরানোর কাজকে গুরুত্ব দিয়ে করতে হবে।’’
রবিবার পার্টির রাজ্য কমিটির বর্ধিত সভায় চারজনই উপস্থিত সীতারাম ইয়েচুরি সহ বাকি কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যরা। দুপুরে ইম্ফলে সাংবাদিক বৈঠক করবেন ইয়েচুরি।

 

Comments :0

Login to leave a comment