CAA SUJAN CHAKRABARTY

সিএএ আসলে গরিবের বিরুদ্ধে চক্রান্ত, কোচবিহারে সুজন চক্রবর্তী

রাজ্য জেলা

বৃহস্পতিবার কোচবিহারে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) বিরোধী মিছিলে সুজন চক্রবর্তী, অনন্ত রায়, অলোকেশ দাস সহ নেতৃবৃন্দ।

জয়ন্ত সাহা ও অমিত দেব, কোচবিহার 


‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, ত্রিপুরার যিনি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বিপ্লব দেব, তিনি কি নাগরিক? হ্যাঁ অথবা না? ২০১৯সালের আইনে কি তার নাগরিকত্ব ঠিক হয়েছে? না। শান্তনু ঠাকুর ভোটে দাঁড়িয়েছেন, সাংসদ হয়েছেন, কেন্দ্রের মন্ত্রী হয়েছেন। তিনি কি নাগরিক, না বেনাগরিক? এই মন্ত্রীরা যদি ২০১৯ সালের আইনের আগে নাগরিক হন, তাহলে দেশের অন্যান্য মানুষ কেন নন?’’ 
বৃহস্পতিবার কোচবিহারে এক কনভেনশনে এই প্রশ্ন তুললেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘‘মোদী এবং অমিত শাহ কোম্পানি দেশের মানুষের সাথে প্রতারণা করছে নাগরিকত্ব নিয়ে। সিএএ চালু হলে শুধু মুসলমানরা বিপদে পড়তেন এমনটা নয়। বিপদে পড়বেন গরিব মানুষ। কারণ গরিব মানুষের হাতে কোন কাগজই নেই। এই আক্রমণ গরিব মানুষের বিরুদ্ধে।’’
‘আমাদের দেশে আমি নাগরিক, তোমার দয়ার দেওয়া নাগরিকত্বের পরোয়া করি না। কাগজ আমরা দেখাবো না’ শীর্ষক কনভেনশনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে এ কথা বলেছেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। 
কোচবিহারে সামাজিক ন্যায় মঞ্চ, ইউসিআরসি সহ ৭ টি সংগঠন এই কনভেনশনের আয়োজন করে বৃহস্পতিবার। এদিন কনভেনশনের শুরুতে সিএএ বিরোধী প্রস্তাব উত্থাপন করেন, ইউসিআরসি’র জেলা সম্পাদক মহানন্দ সাহা।
চক্রবর্তী বলেন, ‘‘আসামে আমরা দেখেছি ২০১৯ সালে প্রথম যে তালিকা প্রকাশ করে ১৯ লক্ষ মানুষকে বে-নাগরিক করে দেয়। এদের মধ্যে ১৬ লক্ষ হিন্দু। ৪০ লক্ষ মানুষের আধার কার্ড সাসপেন্ড করেছে কেন্দ্র। ডাউটফুল ভোটার হয়েছেন লক্ষ লক্ষ মানুষ। এবার টার্গেট আমাদের রাজ্য। এরাজ্যের মানুষের জীবনে যন্ত্রণা নামিয়ে আনছে সিএএ।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমরা চাই নাগরিকত্বকে স্বীকার করে নিক কেন্দ্র। দেশভাগের আগে থেকে কিংবা দেশভাগের কারণে যাঁরা এসেছেন তাঁরা প্রত্যেকেই এদেশের নাগরিক। এই মানুষদের স্বীকৃতির কাগজ দিতে বাধ্য কেন্দ্রীয় সরকার।’’
কেন্দ্রের আইন ঘিরে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর সময়সীমা কী করে এরাজ্যের মানুষ মেনে নেবে? ২০১৫ সালের ৩১ জুলাই সাবেক ছিটমহলের মানুষ আন্তর্জাতিক চুক্তির বলে এদেশের নাগরিক হয়েছেন। সাবেক ছিটমহলের লক্ষাধিক মানুষের নাগরিকত্বের কী হবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে বিজেপিকে।’’
তিনি বলেন, ‘‘ভোট ভাগাভাগি করার প্রচেষ্টায় যেভাবে বিজেপি চলছে সেটা আসলে আরএসএস’র পরিকল্পনা। একই ভাবে এই আরএসএস’র পরিকল্পনায় তৃণমূলও চলে। তাই যে কোনও ভোটের আগে কোথাও হিন্দু হিন্দু, আবার কোথাও মুসলমান মুসলমান জিগির তোলেন ওই দুই দলের নেতারা । কিন্তু বাস্তবে হিন্দু হোক বা মুসলমান হোক, মানুষ তো মানুষই। তার খিদে, তার বেকারত্ব, তার অধিকার এ সবই সমান।’’ 
এদিনের কনভেনশনে সামাজিক ন্যায় মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক অলোকেশ দাস বলেন, ‘‘দেশের সাধারণ মানুষের জ্বলন্ত সমস্যা সমাধান করতে ব্যর্থ দিল্লির সরকার। নাগরিকত্বের মতো বিষয়কে সামনে এনে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করছে লোকসভা ভোটের আগে।’’
দাস বলেন, ‘‘সংবিধানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে ধর্মের নামে বৈষম্য করা চলবে না। অথচ সিএএ-র নামে সেটাই করার লক্ষ্য নিয়েছে আরএসএস এবং বিজেপি। সংবিধানকে বদলে দিতে চাইছে। ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ করতে চাইছে এদেশকে। বলা হচ্ছে, প্রমাণপত্র না থাকলে দেশের নাগরিকত্বের জন্য আবেদনটুকুও করতে পারবে না।’’
সিপিআই(এম) কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায় বলেন, ‘‘কোচবিহার জেলার গরিব মানুষ, তাঁরা হিন্দু হোক বা মুসলমান, তাঁদের কারো কাছেই বাপ-ঠাকুর্দার আমলের কোনও কাগজ নেই। জীবিকার লড়াইয়ে প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষ এখন ভিন রাজ্যের পরিযায়ী শ্রমিক। এইসব মানুষেরা জীবিকার জন্য কাজ করবে নাকি পূর্বপুরুষের নথি জোগাড় করবে? আসন্ন লোকসভার ভোটে মোদী সরকারকে বিসর্জন দিতে হবে।’’

Comments :0

Login to leave a comment