ANAYAKATHA / PALLAV MUKHAPADHAYA / 25 BAISHAK / MUKTADHARA / KABI PAKSHA - 12 MAY 2025 / 3rd YEAR

অন্যকথা / পল্লব মুখোপাধ্যায় / ‘পঁচিশে বৈশাখ’-এর ভাবনা / মুক্তধারা / কবিপক্ষ, ১২ মে ২০২৫, বর্ষ ৩

সাহিত্যের পাতা

ANAYAKATHA  PALLAV MUKHAPADHAYA  25 BAISHAK  MUKTADHARA  KABI PAKSHA - 12 MAY 2025  3rd YEAR

অন্যকথা / মুক্তধারা 

‘পঁচিশে বৈশাখ’-এর ভাবনা
পল্লব মুখোপাধ্যায়

কবিপক্ষ, ১২ মে ২০২৫, বর্ষ ৩

উনিশ শতকের শুরুতে বাংলা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের শীর্ষে ছিল, যা অবশেষে ইংরেজের
কাছে এক ভয়াবহ প্রতিস্পর্ধা হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই জাতীয়তাবাদী আন্দোলনকে
দমন করার জন্য ঔপনিবেশিক, সাম্রাজ্যবাদি ইংরেজ সরকার বাংলাকে বিভক্ত করার
সিদ্ধান্ত নেয় | এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ |
১৯০৫ সালের জুন মাসে আসামে লর্ড কার্জন এবং একটি প্রতিনিধি দলের মধ্যে
অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে পরিকল্পনা করা হয় পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ওড়িশার হিন্দু
সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলগুলিকে আসাম এবং শ্রীহট্টের মুসলিম অধ্যুষিত অঞ্চল থেকে
বিভক্ত করা হবে । ব্রিটিশ সরকার ১৯০৫ সালের আগস্ট মাসে বঙ্গবিভাজনের আদেশ
জারি করে, যা একই বছরের ১৬ অক্টোবর কার্যকর হয়। এই তারিখটি শ্রাবণ মাসে
পড়েছিল, যখন রাখী বন্ধন উৎসব উদযাপন হয় । রবীন্দ্রনাথ ব্রিটিশদের বঙ্গবিভাজন
নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য ভ্রাতৃত্ব, ঐক্য রক্ষার সুতো হিসেবে 'রাখী
বন্ধন'-এর ধারণাটিকে ব্যবহার করেছিলেন দুটি সম্প্রদায়ের মধ্যে ঐক্যের চিত্র তুলে
ধরে।
কবির আহ্বানে সাড়া দিয়ে কলকাতা, ঢাকা এবং শ্রীহট্টে ঐক্যের প্রতীক হিসেবে 'রাখীর
সুতো' বাঁধতে বিপুল সংখ্যক মানুষ বেরিয়ে আসেন। কন্ঠে ছিল রাখী বন্ধনের গান 'বাংলার
মাটি, বাংলার জল' | গ্রন্থ সমালোচক আনন্দময়ী মজুমদার মৈত্রেয়ী দেবী-র 'টেগোর
বাই ফায়ারসাইড' বইটির সমালোচনায় মন্ত্যব্য করেছেন, রবীন্দ্রনাথ রাখী বন্ধনের
ধর্মীয় ঐতিহ্যকে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের ধর্মনিরপেক্ষ রূপে রূপান্তরিত
করেছিলেন এবং বঙ্গভঙ্গ (বঙ্গবিভাজন) প্রতিরোধ করেছিলেন |
১৯০৫ সালে ইংরেজ শাসকের ব্যর্থ বঙ্গ-বিভাজন প্রয়াসের সাক্ষী ছিলেন রবীন্দ্রনাথ
| সেদিন সমগ্র বাংলার হৃদয়মথিত প্রেক্ষণ ও প্রতিবাদের সমান্তরালে সংখ্যাগুরু-
সংখ্যালঘু-র মানসিক অনৈকট্য উপলব্ধি করে ভবিষ্যৎ বিপর্যয়ের সংকেত ধরা
পড়েছিল কবির দূরদৃষ্টিতে | নিজস্ব সৃজন কবিতা-গল্প-উপন্যাস-নাটক-সংগীতে ধর্মীয়
সংকীর্ণতা ও জাতিভেদের বিরুদ্ধে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ, নির্দেশ
করেছেন মিলন ও সম্প্রীতির সূত্র | আজ পঁচিশে বৈশাখ রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তীতে
বিশেষভাবে প্রয়োজন কবির মিলন ও সম্প্রীতিবোধ-কে স্মরণ করা | এই মিলন ও
সম্প্রীতি বিশ্বমানবতাবোধের প্রতিভাসে অমলিন | কবির কথায়, 'মানুষে মানুষে যে
সম্বন্ধ সবচেয়ে মূল্যবান এবং যাকে সভ্যতা বলা যেতে পারে, তার কৃপণতাই এই
ভারতীয়দের উন্নতিপথ সম্পূর্ণ রুদ্ধ করে দিয়েছে | ... কিন্তু মানুষের প্রতি বিশ্বাস

হারানো পাপ, সে বিশ্বাস শেষপর্যন্ত রক্ষা করব | ... মনুষ্যত্বের অন্তহীন
প্রতিকারহীন পরাভবকে বিশ্বাস করাকে আমি অপরাধ বলে মনে করি |' মানুষের
পারস্পরিক সম্পর্কের ওপর চিরদিন গুরুত্ব দিয়েছেন রবীন্দ্রনাথ | জীবনের শেষ দিন
পর্যন্ত প্রকৃতি ও মানুষকে ভালোবেসেছেন | তাঁর কাছে মানবধর্মই শ্রেষ্ঠ ধৰ্ম |
সভ্যতা, শান্তি, প্রগতিকে অক্ষুন্ন রাখতে এর বিকল্প নেই |

Comments :0

Login to leave a comment