ভাস্কর দাশগুপ্ত: পুরুলিয়া,
১১ মে— সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করতে হলে দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে, যুদ্ধোন্মাদনা জাগিয়ে জাতি, ধর্ম, ভাষার নামে তাদের মধ্যে বিভাজন করতে দেওয়া চলবে না। রবিবার পুরুলিয়ার নিতুরিয়ার সরবড়ি মোড়ে হাটতলা ময়দানে সিআইটিইউ’র পুরুলিয়া জেলার ১১তম সম্মেলনের প্রকাশ্য সমাবেশে একথা বলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ শেষ করার জন্য যুদ্ধ কোনও সমাধান হতে পারে না। ভাড়াটে দালাল দিয়ে যুদ্ধের প্রচার চলছে। এই সময় দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে হবে।
সিআইটিইউ’র দু’দিনের জেলা সম্মেলন শেষে রবিবার বিমলেন্দু কোনারকে জেলা কমিটির সভাপতি, হারাধন ব্যানার্জিকে সম্পাদক, অশোক মাহাতোকে কোষাধ্যক্ষ করে ৫০ জনের জেলা কমিটি, ২৩ জনের জেলা সম্পাদকমণ্ডলী এবং ১২০ জনের জেলা কাউন্সিল নির্বাচিত হয়েছে। শনিবার শুরু হওয়া সম্মেলনে সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের ওপর মোট ৪৮ জন আলোচনা করেন। সম্মেলন শেষে রবিবার নিতুরিয়ায় প্রকাশ্য সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে মহম্মদ সেলিম ছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু, নবনির্বাচিত পুরুলিয়া জেলা কমিটির সম্পাদক হারাধন ব্যানার্জি, শ্রমিক নেতা নিখিল মুখার্জি, সিআইটিইউ নেতা প্রদীপ রায়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নবনির্বাচিত জেলা সভাপতি বিমলেন্দু কোনার।
প্রকাশ্য সমাবেশে সেলিম বলেন, সম্মেলন মানে শ্রমজীবী মানুষের অধিকার অর্জনের জন্য লড়াইয়ের শপথ। সিআইটিইউ মেহনতি মানুষের সমস্যা নিয়ে লড়াই করছে। সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক, পরিযায়ী শ্রমিক, তাঁদের পরিবার, আশা কর্মী, আইসিডিএস কর্মী, এমনকি সিভিক ভলান্টিয়ারদের সমস্যা নিয়েও আন্দোলনের ময়দানে রয়েছে সিআইটিইউ। এদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকার শ্রমজীবী মানুষের সমস্যা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার জন্য জাতি ধর্মে মানুষকে ভাগ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে। তারা এমন বন্দোবস্ত করছে যাতে কর্পোরেট কোম্পানিগুলি সব লুট করে নিচ্ছে। মানুষের সম্পদ, অধিকার, প্রাকৃতিক সম্পদ সব লুট হয়ে যাচ্ছে। শ্রমজীবী মানুষের শ্রমে তৈরি সম্পদ লুট করছে মুনাফাবাজরা। মুষ্টিমেয় মানুষের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত হচ্ছে। আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যৎ সঙ্কটে পড়বে।
পহেলগামের সন্ত্রাসবাদী হামলা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যিনি নিজেকে দেশের পাহারাদার বলেন তিনি কী করছিলেন? কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদীদের হামলার সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কোথায় ছিল? ছিল না বলেই নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। যারা এ ব্যাপারে প্রশ্ন করছে তাদেরকেই দেশদ্রোহী বলা হচ্ছে। সন্ত্রাসবাদকে শেষ করতেই হবে, কিন্তু যুদ্ধ তার সমাধান নয়। আর এই সময় দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
সামাবেশে অনাদি সাহু বলেন, শ্রমজীবী মানুষের উপর আক্রমণ নেমে আসছে। কেন্দ্রীয় সরকার এবং রাজ্য সরকারের জনবিরোধী নীতি প্রমাণ করে দিচ্ছে যে তারা শ্রমজীবী মানুষের সঙ্গে নেই। মানুষে মানুষে বিভেদ ও হিংসা কায়েম করে এরা নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধি করতে চাইছে। তিনি বলেন, গত ১৪ বছর ধরে রাজ্যে এক স্বৈরতান্ত্রিক, দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার রয়েছে। বিজেপি এবং আরএসএস’র সাথে হাত মিলিয়ে এরা এই রাজ্যের মানুষের সর্বনাশ করছে। মানুষের জীবন-জীবিকা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। জিনিসপত্রের দাম ক্রমশ বাড়ছে। কেরোসিন, ডিজেল, রান্নার গ্যাস, জীবনদায়ী ওষুধ থেকে শুরু করে নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর দাম বাড়িয়েছে ব্যাপকভাবে। এই রাজ্যে চিটফান্ড থেকে চাকরি চুরির মতো একের পর এক দুর্নীতি হয়েছে। শিক্ষা ব্যবস্থা আজ বিপদগ্রস্ত। নীতির পরিবর্তন ঘটাতে বাধ্য করতে হবে দুই সরকারকে। স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে কম টাকায় চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক নিয়োগ করছে দুই সরকারই। চটকলের শ্রমিক, চা শ্রমিক, ইটভাটা শ্রমিক, বিড়ি শ্রমিক সবাই আজ আক্রান্ত। বামফ্রন্ট সরকার সব ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছিল। এই সরকার সব লুট করেছে। শ্রমিকের অধিকার কেড়ে নেওয়ার জন্য শ্রম কোড আনা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। লুটেরা সরকারের নীতি বদলানোর দাবিতে আগামী ২০ মে ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ মে দেশের শ্রমিক সংগঠনগুলি এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
সভার শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন, ভারত সরকার ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানে থাকা জঙ্গি ঘাঁটিগুলোকে ধ্বংস করা হচ্ছে। কিন্তু তারপরেও মিডিয়াতে যুদ্ধোন্মাদনা জাগানোর লক্ষ্যে যে মিথ্যা প্রচার করা হয়েছে তাতে দেশের সম্মান ভূলন্ঠিত হয়েছে। দুই পরমাণু শক্তিধর দেশের যুদ্ধ কখনোই ভালো হতে পারে না। দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মধ্য দিয়ে, কূটনৈতিক উদ্যোগের মধ্য দিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। দুই দেশের বিষয়ে ট্রাম্প কেন হস্তক্ষেপ করবে? সিমলা চুক্তিতে পরিষ্কার বলা আছে, দুটি দেশের সমস্যা দুইপক্ষকে মেটাতে হবে। অথচ এখন ট্রাম্পের তাঁবেদারি করছে দুই দেশের সরকার।
Md Salim on Terrorism
সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলায় শ্রমজীবী মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে : সেলিম

×
Comments :0