MAMATA NORTH BENGAL CHA SUNDARI

একগুচ্ছ প্রতিশ্রুতি মুখ্যমন্ত্রীর, সফরের মাঝেই প্রশ্ন ‘চা সুন্দরী’-তে

রাজ্য জেলা

চা সুন্দরী প্রকল্পে নিম্নমানের কাজের অভিযোগ বানারহাটেই।

সঞ্জিত দে, বানারহাট

চা শ্রমিকদের জন্য একগুচ্ছ সহায়তা প্রকল্পের ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। রবিবার বানারহাটে যান তিনি। সভা করেছেন আলিপুরদুয়ারেও। কিন্তু রাজ্যের ঘোষিত প্রকল্পে বেনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে উত্তরবঙ্গে তাঁর সফরের মাঝেই। 
২০২০’র সেপ্টেম্বরে রাজ্য সরকার চা শ্রমিকদের জন্যে পাকা আবাসনে ‘চা সুন্দরী প্রকল্প’ ঘোষণা করে। আগামী লোকসভা নির্বাচনে ডুয়ার্সের বিস্তীর্ণ চা বাগিচা এলাকায় শ্রমিকদের মধ্যে এই প্রকল্প প্রচারে অন্যতম বড় হাতিয়ার করতে চাইছে তৃণমূল। কিন্তু সময়সূচি অনুযায়ী ঘর না বানানো, নিম্নমানের মালমশলা ব্যবহারের একাধিক অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন চা বাগানে। 
২০১৯ ও ২০২১ সালের লোকসভা এবং বিধানসভা ভোটে পরপর উত্তরের চা বলয়ে ধাক্কা খেয়েছে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস। চলতি বছরের পঞ্চায়েত ভোটের নিরপেক্ষতা এবং স্বচ্ছতা নিয়ে বিস্তর প্রশ্ন রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিন নিজেই জানিয়েছেন যে রাজ্যের দাবি আদায়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে ১৮-২০ ডিসেম্বর দিল্লি যাচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সময় চেয়েছেন। ওই সময়েই বিরোধী মঞ্চ ‘ইন্ডিয়া’-র বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। 
কিন্তু বানারহাটে অনেকেই বলেছেন, মুখ্যমন্ত্রীর চা-সুন্দরী প্রকল্পের বেনিয়ম নিয়ে খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল। মুজনাই, ঢেকলাপাড়া চা বাগানে শ্রমিকরা এই ঘরে যেতে নারাজ। 
জলপাইগুড়ি জেলায় বানারহাট ব্লকের রেড ব্যাঙ্ক চা বাগানে এই প্রকল্পের আওতায় ৫৬২টি ঘর নির্মাণ কাজ চলছে। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, স্থায়ী শ্রমিক মহল্লা বাদ দিয়ে হাতি উপদ্রুত বনাঞ্চল ঘেঁষা জায়গায় গড়া হচ্ছে এই আবাসন প্রকল্প। ফলে ঘরে পালিত পশু এবং বাড়ির জিনিস ফেলে পাকা আবাসনে যাওয়া সমস্যার। 
ঘর প্রকল্পের ভিতও একেবারেই কম, মাত্র দেড়-দুই ফুট বলেও অভিযোগ তুলেছেন চা শ্রমিকেরাই। এই প্রকল্পে ফ্লাই অ্যাশে তৈরি ইট ব্যবহারের কথা থাকলেও কার্যত সিমেন্টের ইট বা স্থানীয় ভাষায় “কাট্টা” দিয়েই গড়া হচ্ছে সরকারি ঘরগুলো। যদিও নির্মাণস্থলে সবসময় বেশ কিছু ফ্লাই অ্যাশের তৈরি ইট ডাঁই করে রাখা হয়েছে। যে রড দিয়ে পিলার তৈরি হচ্ছে সেগুলিও বাজার চলতি নামী ব্রান্ডের বদলে একেবারে সস্তা ও নিম্ন মানের বলেই জানা যায় আবাসন নির্মাণস্থল ঘুরে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক চা শ্রমিক বলেন, আমাদের গবাদি পশু সহ বাড়িতে সুপারি সহ নানা ধরণের গাছ রয়েছে। আমাদের জীবিকায় সহায়তার কাজ করে। ঘুপচি আবাসনে গেলে এসব কিছুই থাকবে না। ফলে সেখানে যাওয়ার প্রশ্নই নেই।
যদিও “সমস্ত কাজ শিডিউল মেনেই হচ্ছে” বলে দাবি জানিয়েছেন রেড ব্যাঙ্কের নির্মীয়মান প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত এজেন্সির আধিকারিক তাপস দে। জলপাইগুড়ির জেলাশাসক শামা পারভিন যদিও বলেছেন, "আমি খোঁজ নিয়ে দেখব। অনিয়ম পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।"
এদিন মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা চা শ্রমিকদের জমির পাট্টা দেওয়া হবে। এর আগে চা বাগানের জমিতে পর্যটনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে রাজ্য। জমি লুটের অভিযোগ তুলেছে চা শ্রমিকদের বিভিন্ন সংগঠন। কেটে ফেলা হচ্ছে চা বাগানের গাছ। 
সোমবার তরুণ সংঘ ময়দানে জলপাইগুড়ি জেলার প্রশাসনিক আধিকারিকদের নিয়ে সভা করবেন মুখ্যমন্ত্রী।

Comments :0

Login to leave a comment