Cpim rural rally

গ্রামে গ্রামে ভিত গড়ে নবান্নে ধাক্কা মারতে হবে রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে

জেলা

 অস্ত্রের জোরে তৃণমূলের দখল করা পঞ্চায়েতকে মানুষের দখলে ফিরিয়ে আনার জন্য লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিতে বললেন সিপিআই(এম)’র পলিট ব্যুরোর সদস্য সূর্য মিশ্র। সোমবার বহরমপুরে সিপিআই(এম)’র ডাকে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ ঘিরে বিশাল জনসমাবেশে তিনি বলেছেন, আগে মানুষের হাতে পঞ্চায়েত ফেরাতে হবে, বামপন্থীদের বিকল্প পথে মানুষের অংশগ্রহণে পঞ্চায়েতে গণতন্ত্র ফেরাতে হবে, এভাবেই তৈরি হবে রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরানোর ভিত। বিকল্প দেখাবে পঞ্চায়েত। গ্রামস্তর থেকে ভিত তৈরি করে রাজ্যে গণতন্ত্র ফেরাতে ধাক্কা মারতে হবে নবান্নে। 
এদিন বহরমপুর এফইউসি মাঠ, চুয়াপুর মোড় এবং বানজেটিয়া থেকে তিনটি বিশাল মিছিল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সামনে এসে পৌঁছালে সভা শুরু হয়। সমাবেশ থেকে সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের সভাধিপতির কাছে জেলার মানুষের দাবিগুলি নিয়ে ডেপুটেশন দেয়। শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচন, বেহাল রাস্তার সংস্কার, পানীয় জলের ব্যবস্থা, নিয়ম মতো গ্রামসভার আয়োজন করা, সারের কালোবাজারি বন্ধ করা, কিষাণমাণ্ডিতে দালালরাজ বন্ধ করা, বিড়ি শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি সহ ১৭ দফা দাবিতে এই ডেপুটেশন দেওয়া হয়। জলঙ্গীর চর কাকমারি থেকে ফারাক্কার বেনিয়াগ্রাম। ভাঙন মোকাবিলা থেকে রাস্তাঘাটের সংস্কার— সরকার কোনও দায়িত্ব পালন করেনি, জেলা পরিষদ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েতও দায়িত্ব পালন করেনি। মানুষ দুর্দশায়, দুয়ারে শুধুই লুট। বেলাগাম সম্পত্তি বেড়েছে তৃণমূলের নেতাদের। পাঁচ বছরের পঞ্চায়েতে কোনও উন্নয়নের মুখ দেখেননি গ্রামের মানুষ। নেই একশো দিনের কাজ। গ্রাম পঞ্চায়েতমুখো হওয়াই ছেড়ে দিয়েছেন গ্রামের মানুষ। অস্ত্রের জোরে দখল করা গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি, জেলা পরিষদ চালাচ্ছেন তৃণমূল নেতারা। চালাচ্ছেন ঠিকাদারদের নির্দেশে। এর বদল চেয়েই এদিন সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে বহরমপুরে। 
সমাবেশে সূর্য মিশ্র বলেন, এক দিনের বড় সমাবেশ বা মিছিল করে লড়াই শেষ নয়। প্রতিদিন লড়াই চলবে মানুষের হাতে ক্ষমতা ফেরাতে। পঞ্চায়েতী ব্যবস্থার মাধ্যমে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ ঘটিয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। মানুষের অংশগ্রহণ ও নজরদারিতে দুর্নীতি দমন করা হয়েছিল। তৃণমূল সরকারে আসার পরে দুর্নীতিগ্রস্তদেরই রমরমা। মুখ্যমন্ত্রী দুর্নীতি বন্ধের বদলে দুর্নীতিগ্রস্ত জেলবন্দি অপরাধীদের নিয়েই চিন্তিত। এভাবে রাজ্যকে চলতে দেওয়া যায় না, এভাবে চললে বাংলা শেষ হয়ে যাবে। তাই আগে পঞ্চায়েত উদ্ধার করতে হবে। মানুষের জন্য বিকল্প পথে পঞ্চায়েত চালাতে হবে। পঞ্চায়েত চালানোর বিকল্প কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। নিচ থেকে ভিত শক্ত করে রাজ্যে মানুষের সরকার তৈরি করতে হবে। মনে রাখতে হবে, করোনায় যখন সরকার মানুষের পাশে ছিল না, বামপন্থীরা তখন মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। বিকল্প ভাবনায় আরও অনেক কিছু করার আছে, মানুষের স্বার্থে বিকল্প ভাবনা নিয়েই মানুষের পঞ্চায়েত চালাতে হবে। তার জন্য লড়াইয়ের ময়দানে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। এখন কৃষক, খেতমজুর থেকে সরকারি কর্মচারী সবাই ক্ষোভে ফুঁসছেন। ক্ষোভের ভূমিকম্পে নবান্নে বসে থাকা মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষমতা ধসে পড়বে। 
সূর্য মিশ্র বলেন, কে কোন দল করে দেখার দরকার নেই। শ্রমিক, কৃষক সহ খেটে খাওয়া সব মানুষের বাড়ি যেতে হবে। কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে, বিজেপি চেষ্টা করছে ঘোলা জলে মাছ ধরার। দেশে সব থেকে বড় বিপদ ডেকে এনেছে বিজেপি। এত বড় বিপদ কখনও হয়নি। বিজেপি-কে দিয়ে তৃণমূল আর তৃণমূলকে দিয়ে বিজেপি-কে রোখা যাবে না। মানুষের তৃণমূল-বিরোধী ক্ষোভকে ব্যবহার করতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে বিজেপি অনেক কৌশল নেবে, অনেক গ্রামে নির্দল প্রার্থীদের সমর্থন করার আবেদন জানাবে। এই ভুলে পা দেওয়া যাবে না। তৃণমূল আর বিজেপি’র বোঝাপড়া সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে, ওরা নকল যুদ্ধ দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
সিপিআই(এম)’র মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা সমাবেশে বলেন, দামাটের (কোদালের বাঁট) জোরে এবার আর পঞ্চায়েত দখল করা যাবে না। ২০১৮ সালের পরিস্থিতির বদল ঘটেছে। লড়াই করে মানুষের পঞ্চায়েত তৈরি করতে হবে। সংখ্যালঘু উন্নয়নের নামে মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে রাজ্যের সরকার। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট লুটের চেষ্টা হলে ব্যাপক প্রতিরোধ হবে। 
সমাবেশে পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য সোমনাথ ভট্টাচার্য বলেন, বিজেপি-কে এক ইঞ্চি জায়গা নয়। তৃণমূল-মুক্ত বাংলা চাই, বিজেপি-মুক্ত ভারত চাই। পঞ্চায়েতে সেই লড়াইয়ের মহড়া হবে। সমাবেশে ভাষণ দেন পার্টির প্রবীণ নেতা নৃপেন চৌধুরী, পার্টির নেতা বদরুদ্দোজা খান, সোমনাথ সিংহ রায়, জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি পুর্ণিমা দাস। মুর্শিদাবাদ জেলার উন্নয়নকে অবহেলা এবং ভাঙন মোকাবিলা নিয়ে জেলা পরিষদের ব্যর্থতা নিয়ে সরব হন বক্তারা। তাঁরা বলেছেন, তৃণমূল সর্বত্র লুটেরাদের রাজত্ব কায়েম করেছে। ধর্মের নামে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টাকে প্রতিহত করে ঐক্যবদ্ধ লড়াই তীব্রতর করতে হবে। সমাবেশে মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি নৃপেন চৌধুরী বলেন, সাধারণ মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেছিল বামফ্রন্ট পরিচালিত মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। এক ফসলা জমিকে বহু ফসলা করা হয়েছিল। ফসল বিপণনের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। এখন কৃষকরা ফসলের দাম পাচ্ছেন না। এই বছর সেচের অভাবে ক্ষতি হয়েছে কৃষকদের। অথচ নবগ্রাম থেকে বড়ঞা কোথাও কৃষকদের পাশে দাঁড়ায়নি জেলা পরিষদ।
জেলা সভাধিপতিকে স্মারকলিপি দিয়ে এসে প্রতিনিধিদলের পক্ষ থেকে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সচ্চিদানন্দ কাণ্ডারী। উপস্থিত ছিলেন সেখ হাসিনা ও ধ্রুবজ্যোতি সাহা। সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ আরও বলেছেন, প্রতি বুথে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলতে হবে। পঞ্চায়েত ভোটের আগেই তৃণমূল পুলিশ এবং দুষ্কৃতীদের কাজে নামাবে। বিজেপি ধর্মের নামে মানুষের মধ্যে ভাগ করার চেষ্টা করবে। এর বিরুদ্ধে লড়াই করেই মানুষের পঞ্চায়েত তৈরি করতে হবে।
নেতৃবৃন্দ বলেন, বামফ্রন্টের সময়কালে জলঙ্গী থেকে ভগবানগোলায় ভাঙন মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল মুর্শিদাবাদ জেলা পরিষদ। তৈরি হয়েছিল একাধিক রাস্তা ও ব্রিজ। তৃণমূলের আমলে জেলা পরিষদ কেবল লুটেই ব্যস্ত। গৃহনির্মাণ প্রকল্পে লাগামছাড়া দুর্নীতি হয়েছে। ভুয়ো জবকার্ড, ভুয়ো মাস্টার রোল বানিয়ে সরকারি টাকা নয়ছয় হয়েছে। ভাঙনের কবলে সামসেরগঞ্জে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে গ্রাম। অথচ বালির বস্তা ফেলা হচ্ছে ঠিকাদার আর তৃণমূল নেতাদের পকেট ভরাতে। ভাঙন মোকাবিলায় জেলা পরিষদ, রাজ্য সরকার, কেন্দ্র সরকারকে যৌথভাবে ব্যবস্থা নিতে হবে।
এদিন সমাবেশ মঞ্চেই জ্যোতি বসু সেন্টার ফর সোস্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ সেন্টারের জন্য পাঁচ হাজার টাকার চেক সূর্য মিশ্রের হাতে তুলে দেন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যণ ভট্টাচার্য।
 

 

Comments :0

Login to leave a comment