Doctors Strike

গোটা রাজ্য জুড়েই প্রবল বিক্ষোভ

রাজ্য

পূর্ব ঘোষণা মতোই এক বিশাল জনস্রোত আছড়ে পড়ল আর জি কর হাসপাতালের গেটে। সূর্য ডোবার সেই মুহূর্তে,  বিচারের দাবিতে তোলপাড় করা প্রতিবাদের সেই ঢেউকে আলোর সঙ্কেত দিয়ে আহ্বান জানালেন মঞ্চের আন্দোলনকারীরা। আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুন কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে প্রবল আন্দোলনের এক বিশেষ ঝলক সোমবার সন্ধ্যায় যেন প্রতিফলিত হলো আর জি কর হাসপাতালের গেটে। সেই গেটের সামনে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ-এর কুশপুতুল পুড়িয়ে এদিন সেই ধিক্কার ধ্বনিকে আরও তীব্র করে তুলেছেন তাঁরা। বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা তো বটেই, সেইসঙ্গে ডাক্তারি পড়ুয়া, নার্স, নার্সিং পড়ুয়া থেকে স্বাস্থ্যকর্মী সকলেই শামিল ছিলেন সেই সুবৃহৎ মিছিলে। ছিলেন সিনিয়র চিকিৎসক থেকে বিশিষ্টজনেরা, শিক্ষাবিদ থেকে সমাজকর্মীরা। মিছিল এসে পৌঁছানোর কিছু আগেই সেখানে গেটের বাইরে প্রতিবাদে মুখর হয় জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস।
ঘটনার বিচার চেয়ে গত ৩ দিন ধরেই গোটা রাজ্যে প্রবল আন্দোলনে নেমেছেন চিকিৎসকরা। জেলায় জেলায় হাসপাতালগুলিতে জরুরি পরিষেবা চালু রেখেই কর্মবিরতি পালিত হয়েছে, তাঁরা উত্তাল হয়ে উঠেছেন একটাই স্লোগান তুলে - ‘ঘটনার উপযুক্ত বিচার চাই’। মেডিক্যাল কলেজ, এসএসকেএম, ন্যাশনাল মেডিক্যাল সহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসারত ছিলেন বহু জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের অনেকে গলায় স্টেথো ঝুলিয়েই মিছিলে শামিল হয়েছেন প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে। অনেকের আবার গায়ে তখনও রয়েছে সাদা অ্যাপ্রন। মিছিল শুরু হয়েছিল কলেজ স্কোয়ার থেকে। শ্যামবাজার পেরিয়ে তা সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ এসে পৌঁছায় আর জি কর হাসপাতালের গেটে। তারপর থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে শুধুই জনস্রোত। সঙ্গে মুহুর্মুহু মাইকের ঘোষণা। শুরুতে ব্যারিকেড দেওয়া নিয়ে পুলিশের কিছু হম্বিতম্বি ছিল, চিকিৎসকদের ঢেউয়ের পর ঢেউ আসতে থাকায় সেইসব ব্যারিকেড ছিটকে চলে যায় সেখান থেকে। পুলিশকেও আর বিশেষ দেখা যায়নি চারপাশে।
হাসপাতালের গেটের বাইরে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে প্রতিবাদী মঞ্চ তৈরি হয়েছিল সিনিয়র চিকিৎসকদের। এএইচএসডি সহ জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অব ডক্টরস-এর ডাকে সেখানে এক প্রতিবাদ সভা হয় এদিন। সভায় এএইচএসডি, ডক্টরস ফোরাম, হেলথ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন, শ্রমজীবী স্বাস্থ্য উদ্যোগ, ডক্টরস ফর ডেমোক্র্যাসি’র পক্ষ থেকে বিভিন্ন চিকিৎসকরা বক্তব্য রাখেন। উপস্থিত ছিলেন, ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায়, ডাঃ অরিন্দম ভট্টাচার্য, ডাঃ নারায়ণ ব্যানার্জি, ডাঃ বিদিশা দত্ত, ডাঃ তমোনাশ ভট্টাচার্য, ডাঃ কৌশিক চাকী, ডাঃ জয়দেব দেব, ডাঃ তাপস ফ্রান্সিস বিশ্বাস প্রমুখ। বিক্ষোভ সভা পরিচালনা করেন ডাঃ পূণ্যব্রত গুণ।
অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, পশ্চিমবঙ্গ-এর সাধারণ সম্পাদক ডাঃ উৎপল বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমাদের একটাই স্পষ্ট বক্তব্য, এই ঘৃণ্য ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চাই। দুষ্কৃতীদের মদত দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ তদন্তের মোড় অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে। এই সমস্ত কিছু যেন তদন্তে উঠে আসে। হাইকোর্টের বিচারপতিকে দিয়ে তদন্ত করতে হবে। ডাঃ নারায়ণ ব্যানার্জি এদিন বলেন, সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকুন, সোচ্চার থাকুন। চুপ করে আর থাকা যাবে না। গোটা দেশে এমন ভয়াবহ ঘটনা কখনও ঘটেনি। তদন্তের সময়সীমা এভাবে ৭-১০ দিন পিছিয়ে দেওয়া যায় না। এদিনও আর জি কর হাসপাতালের গেটের ভেতরে প্রতিবাদ আন্দোলন মঞ্চ উত্তাল হয়ে ওঠে স্লোগানে স্লোগানে। যাদবপুর, কলকাতা, প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, ছাত্র-ছাত্রীরাও সেখানে বক্তব্য রেখেছেন। আর জি কর সহ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক, নার্সরাও সেই মঞ্চে তাঁদের বক্তব্য রেখেছেন।
আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় গোটা রাজ্যেই প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। চিকিৎসকদের দাবি, বরখাস্ত করতে হবে অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে। নিহত চিকিৎসকের পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট সামনে আনার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। অভিযুক্ত অধ্যক্ষের সমস্ত অপরাধগুলি তুলে ধরার দাবিও রয়েছে তাঁদের। চিকিৎসকদের বক্তব্য, পুলিশকে ৭ দিন সময় দেওয়া কিসের জন্য - প্রমাণগুলি লোপাটের জন্য কি? তাঁদের দাবি, সমস্ত মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সর্বত্র সিসিটিভি এবং হাসপাতালগুলিতে অন-কল রুম থাকতে হবে। সকলের মুখে একটাই কথা - ‘মুখ্যমন্ত্রীর ঘৃণ্য রাজনীতিকে ধিক্কার’।
এদিনও শিলিগুড়িতে কর্মবিরতিতে শামিল হলেন চিকিৎসকরা। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে সোমবার সকাল থেকে কর্মবিরতিতে রয়েছেন হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তার ও ডাক্তারি পড়ুয়ারা। হাসপাতালে মহিলাদের সুরক্ষা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তাঁরা। এদিন ইসলামপুরে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে ইসলামপুর মহকুমা হাসপাতালের চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী থেকে শুরু করে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ বিক্ষোভ দেখান, মিছিলে শামিল হন। বিক্ষোভ আন্দোলন হয়েছে দিনহাটা হাসপাতাল চত্বরেও। সোমবার বিকেলে রায়গঞ্জ শহরে শিক্ষক, কর্মচারী, নার্স, সাংস্কৃতিক কর্মীদের প্রতিবাদ সভা হয়। এছাড়া বর্ধমানে ওয়েস্টবেঙ্গল মেডিক্যাল অ্যান্ড সেলস রিপ্রেজেন্টটিভস ইউনিয়ন-এর পক্ষ থেকে নেতৃত্ব ও সদস্যরা প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হয়ে পৌঁছান বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। 
আন্দোলনের তীব্রতা আরও বৃদ্ধি করার ডাক দেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের জুনিয়র ডাক্তাররা। ওদিকে সোমবার পুরুলিয়ায় দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে পড়ুয়ারা ক্লাস বয়কটের ডাক দেন। রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজের গেটের সামনে মেডিক্যাল ও সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভরা বিক্ষোভে শামিল হন। এদিন সাগর দত্ত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ইন্ডোর এবং জরুরি বিভাগ চালু রেখে অন্যান্য বিভাগে কর্মবিরতি পালন করেন জুনিয়র ডাক্তারা। এছাড়া এদিন দুপুরে উলুবেড়িয়ায় শরৎচন্দ্র চট্টোপ্যাধায় গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজের জুনিয়র ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। হুগলী জেলায় পোলবা গ্রামীণ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীরা পরিষেবা চালু রেখেই প্রতিবাদ জানিয়েছেন। কাঁথিতে প্রতিবাদ মিছিল করেছেন ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল অ্যান্ড সেলস রিপ্রেজেন্টেটিভস ইউনিয়নের নেতৃত্ব ও সদস্যরা। 

Comments :0

Login to leave a comment