বই — মুক্তধারা, বর্ষ ৩
কলকাতার ‘সহজ’ ইতিহাস
প্রশান্ত দাশ
কয়েক শতকের পুরানো আজকের কলকাতা। ভাগীরথী নদীর পূর্বপাড়ের জল-জঙ্গলে ভরা বিস্তীর্ণ এলাকা। মাঝে তিনটি গ্রাম সুতানুটি, গোবিন্দপুর আর ডিহি কলকাতা। ইংরেজদের সাম্রাজ্য বিস্তারের লোভ। ব্রিটিশদের অবজ্ঞা, অবহেলা, লড়াইয়ের আগুনে ঝলসে; আর বিপুল ব্যয়ের বোঝা পিঠে নিয়ে বেড়ে উঠেছে কলকাতা।
আদিকাল থেকেই কলকাতার অতীতকে দুই মলাটে বেধে ফেলার চেষ্টা করেছেন ইতিহাসবিদরা। তবে সেই ইতিহাসের ঐতিহাসিক গুরুত্ব থাকলেও তা অনেকাংশে গম্ভীর, তথ্যের ভারে আকর্ষণ হারিয়ে বর্ণহীন। শুকদেব চট্টোপাধ্যায়ের ‘কলকাতার গতকাল’ এই শহরের অলিগলি খুঁজে ইতিহাস এনে দিলেও, তা এগিয়ে চলেছে নিজের ছন্দে। তথ্য থাকলেও, তাতে ভারাক্রান্ত হতে হয়নি। অনেক সহজে আকর্ষণ করার উপাদান রয়েছে ১৪৪ পৃষ্ঠার এই বইতে। যেমন শুরুতেই ‘লটারির শহর’। অনায়াসেই আগ্রহ তৈরি হয় অতীতের কলকাতার লটারির কথা জানতে। কিন্তু শুরুতেই কলকাতা পত্তনের ইতিহাস বলা যেখানে প্রচলিত শর্ত, লেখক সেখানে লটারির কথা বলেছেন। তার মাঝেই কলকাতা পত্তনের ইতিহাসকে ফুটিয়েছেন নিপুণভাবে।
একটি শহরকে ভিতর থেকে জানতে গেলে তার পথঘাট, জনস্বাস্থ্য, আচার অনুষ্ঠান সম্পর্কে আগে জানতে হয়। ‘কলকাতার গতকাল’ তার সবক’টি অংশকেই ছুঁয়েছে। ইতিহাস বলার মাঝেই লেখক সেই সময়ের সামাজিক অস্পৃশ্যতাকেও বর্ণনা করেছেন। গোরাদের ‘হোয়াইট টাউন’ নেটিভদের ‘ব্ল্যাক টাউন’ যেমন বলেছেন। তেমনই নিজেদের সাম্রাজ্য রক্ষার জন্য মারাঠা ডিচ তৈরির অর্থও চাপিয়েছে গরিব প্রজাদের উপর। আবার সাহেবদের জন্য তৈরি হাসপাতালে নেটিভদের চিকিৎসা না হলেও তার ব্যয়ভারও বইতে হয়েছে। আবার দুর্গাপুজার নামে সাহেবদের তোষামদ করে নিজেদের আখের গোছানো বাবুদের বর্ণনা করেছেন।
কলকাতার বইয়ের অন্যতম ইউএসপি হলো ‘ঔপনিবেশিক কলকাতার ফুটবল।’ কলকাতার ইতিহাসের জন্য পরিচিত বইগুলিতে সাধারণত ফুটবলকে এড়িয়েই যাওয়া হয়েছে। অথচ গতকালের কলকাতায় সাহেবদের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার যদি কোনও জায়গা থাকে তাহলে সেটা ছিল খেলার মাঠ।
‘কলকাতার গতকাল’ অনেকাংশেই অনুপ্রাণিত কালীপ্রসন্ন সিংহ’র হুতোম প্যাঁচার নকশা’র থেকে। ঐতিহাসিক বিশ্লেষণের পাশেই প্রাবন্ধিক গুরুত্বও রয়েছে ‘কোলকাতা মেসবাড়ি’র।
কলকাতার গতকাল
শুকদেব চট্টোপাধ্যায়। কে. মিত্র। ৭২/২ বি, পটুয়াটোলা লেন। কলকাতা-৭০০ ০০৯। ১৭০টাকা
Comments :0