Smart Phone

মোবাইল দেননি ক্ষেতমজুর বাবা, অভিমানে ‘আত্মঘাতী’ ছেলে

রাজ্য জেলা

বাবার কাছে মোবাইল ফোন চেয়েছিল ছেলে। কিন্তু, বাবা তা দিতে অস্বীকার করেছিলেন। তাতেই অভিমান হয় ১৯ বছরের ছেলেটির। শেষমেষ আত্মঘাতী হয় সে। ঘটনাটি ঘটেছে পূর্বস্থলীতে। মোবাইলের নেশায় বুঁদ ছাত্রসমাজ থেকে বিশ্বের অধিকাংশ মানুষ! মোবাইল ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত চিন্তা করা যায় না। বড়দের পাশাপাশি শিশুরাও আগ্রহী হচ্ছে এই ফোন ব্যবহারে। নানা বায়নাতে স্মার্ট ফোনটি নিজের করে নিতে ব্যস্ত থাকে শিশুরাও। ইচ্ছে না থাকলেও অনেক বাবা-মা বাধ্য হয়ে শিশুর হাতে তুলে দিচ্ছেন স্মার্ট ফোন। এক সময় সেই ফোনই হয়ে ওঠে অভিভাবকের চিন্তার কারণ। এই আধুনিকতা যেন অন্ধকার যুগের থেকেও ভয়ঙ্কর! গ্রাম থেকে শহর ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের শৈশব থেকে কৈশোর ডুব দিচ্ছে বিভিন্ন গেমিং অ্যাপস আর ইউটিউব ভিডিও’তে। বন্ধুত্ব, আত্মীয়তা, ক্রিকেট, ফুটবল, ছোটাছুটি ভুলে গিয়ে স্মার্টফোনকেই আপন করে নেওয়ার এক বিপজ্জনক প্রবণতা দেখা দিয়েছে বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মধ্যে। খেলার মাঠে দৌড়োদৌড়ি করে নয়, সময় কাটছে মোবাইলে। ফ্রি-ফায়ারের মতো একাধিক মারণ-নেশা যুক্ত মোবাইল গেম আজ ক্রিকেট-ফুটবলের জায়গা দখল করছে! গল্প, খেলাধুলা, বই পড়া প্রভৃতির মাধ্যমে ধীর গতিতে আমাদের কল্পনাশক্তির বিকাশ ঘটে। তবে মোবাইলে খেলা, ভিডিও দেখার সময় অতি সত্বর শিশুমনে আনন্দ ও উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়। তবে এতে হ্রাস পাচ্ছে কল্পনাশক্তি। টিভি, মোবাইল গেম বা যেকোনো ধরনের ভার্চুয়াল এন্টারটেইনমেন্ট দেখার সময়ে আমাদের মস্তিষ্কের কোষ থেকে ক্ষরণ হয়। এটি আসলে এক ধরনের নিউরোট্রান্সমিটার, যার নাম ডোপামিন। এই ডোপামিনের ক্ষরণ আমাদের মনে এক ভালো লাগার অনুভূতি সঞ্চার করে। ফলে অতি সহজেই আমরা মোবাইলে আসক্ত হয়ে পড়ি। এর থেকে মুক্তি কবে মিলবে? উত্তর খুঁজতে যখন ব্যস্ত বিশেষজ্ঞরা, সেই সময়ই পূর্বস্থলী থানার মুক্সিমপাড়া গ্রামে ক্ষেতমজুর বাবাকে দামি মোবাইল কিনে দেওয়ার জন্য বায়না ধরে ছেলে দেবদাস সাঁতরা (১৯)। টাকার অভাবে সেই বায়না পূরণ না হওয়ায় গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয় ছেলে। জনা গেছে দেবদাস তাঁর বাবা ধানব সাঁতরা দুজনে মিলে ক্ষেতমজুরি করে কোন রকমে সংসার চালাতেন। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় বাবার কাছ থেকে দামি মোবাইল কিনে দেওয়ার বায়না ধরে ছেলে দেবদাস। বাবা বলে সামনেই পরব রয়েছে, টাকা পয়সার দরকার। তাই এখন মোবাইল কেনা হবে না। বাবার এই কথাতেই অভিমানে বুধবার রাতে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হয় দেবদাস। পূর্বস্থলী থানার পুলিশ বৃহস্পতিবার সকালে তার ঝুলন্তদেহ উদ্ধার করে কালনা হাসপাতালে পাঠায়। সেখানেই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত হয়। অভাবী ক্ষেতমজুরের ছেলে আত্মহত্যা করেছে মোবাইলের জন্য! এই ঘটনা ফের একবার মোবাইলের মারণ নেশা’র বিষয়টিকেই প্রতিপন্ন করছে।

Comments :0

Login to leave a comment