Hate speech

৪৫ শতাংশ বেড়েছে ঘৃণা ভাষণ

জাতীয়

গত দু’বছরে এদেশে ঘৃণা ভাষণের ঘটনা লাফিয়ে বেড়েছে। সুপ্রিম কোর্ট বারে বারে কেন্দ্র ও বিভিন্ন রাজ্যকে এব্যাপারে সতর্ক করলেও তেমন কোনও লাভ যে হয়নি, তা সদ্য প্রকাশিত ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)’র রিপোর্টে স্পষ্ট হয়ে গেছে। রিপোর্ট বলছে, এই সময়কালে দেশে ঘৃণাভাষণের নথিবদ্ধ ঘটনা বেড়েছে ৪৫ শতাংশ। মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশজুড়ে মূলত উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের উত্থানের সঙ্গে সঙ্গেই ভয়াবহভাবে বেড়ে চলেছে ঘৃণাভাষণ। যার অধিকাংশের পিছনেই রয়েছে বিজেপি বা মোদীর দলের অনুসারী সংগঠন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ঘৃণা ছড়িয়ে পার পেয়ে গেছে অপরাধীরা। এমনকি খোদ সংসদে দাঁড়িয়ে বিজেপি’র এক সাংসদ সহকর্মী সাংসদকে ‘কাটুয়া, ভেড়ুয়া, মোল্লা, আতঙ্কবাদী’ বলেও পার পেয়ে গেছেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই দেশে বেড়েছে এই অপরাধ।  
‘আচ্ছে দিন’ও নয়, ‘এক আকেলা মোদী’ও নয়। ক্ষমতায় ফেরার আসল ফরমুলা মেরুকরণই। তাই প্রধানমন্ত্রী মোদী হোন বা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহই হোন, কিংবা গদাধারী বিজেপি বিধায়ক মহন্ত বালমুকুন্দ আচার্য— সকলেরই একটাই হাতিয়ার। আর সংসদে মানুষে মানুষে ঘৃণা ছড়িয়ে যাওয়া। আর ভোট এলেই সেই মেরুকরণ আরও তীব্র করা। সেই বিদ্বেষের আগুনে জ্বলেছে উত্তর থেকে উত্তর-পূর্ব ভারত। গোষ্ঠী সংঘর্ষ মাথাচাড়া দিয়েছে, সেইসঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গেরুয়া শাসকের ঘৃণা-ভাষণ। লোকসভা নির্বাচনের আঁচ যত বাড়ছে, বিদ্বেষের বিষ ততই ছড়িয়ে পড়ছে দেশে।
গত সোমবার প্রকাশিত ২০২২সালের ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো (এনসিআরবি)’র রিপোর্টে স্পষ্ট হয়েছে, ভারতীয় দণ্ড বিধি ১৫৩এ ধারায় আওতায় ধর্ম, জাতপাত, ভাষা ও জন্মস্থানের ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীগুলির মধ্যে বৈরিতাকে উসকে দিতে ঘৃণা ভাষণ ও অন্যান্য কার্যকলাপের ঘটনা এই সময়কালে ৪৫শতাংশ বেড়েছে। রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২১ সালে এমন অপরাধের লিপিবদ্ধ সংখ্যা ছিল ৯৯৭। ২০২২’এই তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১,৪৪৪। অর্থাৎ ৪৫শতাংশ বৃদ্ধি। সবচেয়ে বেশি এমন ঘটনা বেড়েছে উত্তর প্রদেশে (২১৭টি)। তারপরই রয়েছে বিজেপি’র সদ্য জিতে নেওয়া রাজস্থান (১৯১)। পরে দলবদলে ক্ষমতায় আসা বিজেপি শাসিত মহারাষ্ট্র (১৭৮)। এই ধরনের অপরাধের হারের নিরিখে উত্তর-পূর্বের ভারতে মণিপুর, সিকিম ও অরুণাচলে ঘৃণা ভাষাণ সবচেয়ে বেশি ঘটেছে। লক্ষণীয়ভাবে দক্ষিণ ভারতে এই দু’বছরে সবচেয়ে বেশি এমন অপরাধের ঘটনা ঘটেছে তেলেঙ্গানা। জাতি-সংঘর্ষ বিধ্বস্ত মণিপুরে এই সময়কালে এই অপরাধ সবচেয়ে বেশি- প্রতি লক্ষ জনসংখ্যা পিছু ০.৫। আর তেলেঙ্গানায় এই হিসেব ০.৩। 
এনসিআরবি রিপোর্ট অনুযায়ী, সদস্য যে পাঁচ রাজ্যে ভোট হয়ে গেল তার মধ্যে দুটি রাজ্যে এমন ঘটনা আগের বছরের তুলনায় ১০০শতাংশেরও বেশি। সেই নিরিখেই দেখা যাচ্ছে, মধ্য প্রদেশে ২০২১ সালে ৩৭টি থেকে বেড়ে ২০২২’এ সে রাজ্যে এমন ঘটনার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০৮টি। মানে ১৯১শতাংশ বৃদ্ধি। তেমনই রাজস্থানে এই বৃদ্ধি ১৩৮শতাংশ। ২০২২’এ ১৯১টি মামলা। ২০২১ সালে তা ছিল ৮০টি। 
তবে তেলেঙ্গানায় এই বৃদ্ধি অনেকটা কম, ৩১শতাংশ। সেখানে ২০২১ ছিল ৯১। আর ২০২২’এ বেড়ে হয়েছে ১১৯। ছত্তিশগড়ে আবার সাত থেকে কমে ৫টি হয়েছে। গত দুই বছরে মিজোরামে আবার এমন ঘৃণাভাষণের কোনও মামলা নথিভুক্ত হয়নি। অন্যান্য রাজ্যের মধ্যে তামিলনাডুতে ১৪৬টি মামলা, অন্ধ্র (১০৯), কর্নাটক (৬৪), আসাম (৪৪), পশ্চিমবঙ্গ (৪৩), পাঞ্জাব (৩০), হরিয়ানা (২৯), দিল্লি (২৬), জম্মু-কাশ্মীর (১৬), উত্তরাখণ্ড ও মণিপুর উভয় রাজ্যেই ১৫টি করে এবং হিমাচল প্রদেশে (১০টি)। সামগ্রিকভাবে রাজ্যের নিরিখে এমন ঘটনা বেড়ে ৪৫শতাংশ।
রাজ্য ও সমস্ত কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ধরলে হিসাবটা দাঁড়াচ্ছে, মোট সংখ্যা বেড়েছে দেড় হাজারেরও বেশি। শতাংশের হিসাবে ৩১.২৫শতাংশ।

Comments :0

Login to leave a comment