দীর্ঘ সাড়ে তিনমাস পর যাত্রা শুরু করলেও পাহাড়ী যাত্রাপথে রবিবার থমকে দাঁড়াতে হয়েছে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিঙ গামী টয়ট্রেনকে। রবিবার ইঞ্জিন বিকল হয়ে পড়ায় তিনধারিয়ার কাছে টয়ট্রেন পরিষেবা ব্যাহত হয়েছে। তিনধারিয়া ও চুনাভাটির মধ্যবর্তী জঙ্গলে দাঁড়িয়ে পড়ে খেলনা রেলগাড়ি। যুদ্ধকালীন তৎপরাতায় ইঞ্জিন বদলে দেবার পরে পরিষেবা স্বাভাবিক হয়।
লাগাতার বৃষ্টি ধসজনিত পরিস্থিতিতে টয়ট্রেনের লাইন অচল হয়ে পড়েছিলো। লাইনের নীচ থেকে মাটি ধসে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত টয়ট্রেন লাইন মেরামতের কাজে দীর্ঘ সাড়ে তিনমাস সময় কেটে যায়। পরবর্তীতে ধস বিধ্বস্ত ৫৫নম্বর জাতীয় সড়ক মেরামতির কাজ শেষ হলেও টয়ট্রেনের লাইন মেরামতির প্রতি সেইরকম কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। ফলে দীর্ঘ সাড়ে তিন মাস সময় নিউ জলপাইগুড়ি—দার্জিলিঙ টয়ট্রেন পরিষেবা একেবারে বন্ধ ছিলো। এই সময়কালে পর্যটন ব্যবসায়ীদের বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হয়েছে। শুধু তাই নয়, টয়ট্রেনে সফর করতে না পেয়ে উৎসবের মরশুমে দেশী বিদেশী সকল পর্যটকদেরই হতাশ হতে হয়েছে। ইউনেষ্কোর চিঠি পেয়ে চাপের মুখে নড়েচড়ে বসে ডিএইচআর কর্তৃপক্ষ। এরপরেই বাড়তি কর্মী নিয়োগ করে টয়ট্রেনের লাইন মেরামতির কাজ দ্রুততার সাথে শেষ করা হয়। সফল ট্রায়াল রানের পরে দার্জিলিঙ হিমালয়ান রেলওয়ে (ডিএইচআর)’র পক্ষ থেকে রবিবার টয়ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হবে বলে জানানো হয়।
জানা গেছে, রবিবার মোট ৩০জন পর্যটক নিয়ে টয়ট্রেন নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিঙ অভিমুখে রওনা হয়। পর্যটকদের মধ্যে ছয়জন বিদেশী পর্যটকও ছিলেন। প্রথম দিকে ভালোভাবেই চলছিলো। দেখতে দেখতে রঙটঙ পর্যন্ত পৌঁছে যায় টয়ট্রেন। এরপরেই ঘটে বিপত্তি। ওপরের দিকে উঠতে গিয়ে খানিকটা সমস্যা হলেও তিনধারিয়া পর্যন্ত কোনক্রমে গতি কমিয়ে এনে টয়ট্রেনকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু এরপরেই তিনধারিয়া থেকে চুনাভাটির আর চাকা গড়ায়নি টয়ট্রেনের। বিকট আওয়াজ করে বন্ধ হয়ে যায় ইঞ্জিন। দ্রুত একজন সিনিয়ার সেকশন ইঞ্জিনিয়ার মেরামতির কাজে হাত লাগিয়ে সাময়িক মেরামত করেন ইঞ্জিন। এরপর তিনধারিয়া স্টেশন থেকে বিকল ইঞ্জিন বদল করে টয়ট্রেনটিকে দার্জিলিঙের দিকে রওনা করানো হয়। স্বাভাবিক হয় পরিষেবা। সামনেই বড়দিনের ছুটি মরশুম। এই সময়ে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিঙ টয়ট্রেন পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ায় পর্যটকদের মধ্যে খুশির হাওয়া। ট্যুর অপারেটররাও খুশি। উত্তর পূর্ব সীমান্ত রেলের কাটিহারের ডিআরএম সুরেন্দ্র কুমার জানান, ‘‘প্রকৃতির কাছে হার মানতে হয়েছে। এবছর ব্যাপক বৃষ্টি ও ধসের কারণে চার মাসের কাছাকাছি সময় লেগেছে টয়ট্রেন পরিষেবা চালু করতে। নভেম্বর ও ডিসেম্বরেও পাহাড়ে প্রচুর সংখ্যায় পর্যটক ভিড় জমাবেন। আরো তিনটি ইঞ্জিন আনা হবে। দরকার পড়লে বাড়তি পরিষেবাও দেওয়া হবে।’’
প্রাকৃতিক দূর্যোগের কারণে নিউ জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিঙ পর্যন্ত টয়ট্রেন পরিষেবা দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকলেও, ঘুম থেকে দার্জিলিঙ রূটে জয়রাইড পরিষেবা স্বাভাবিক ছিলো। জানা গেছে, উৎসবের মরশুমে চলতি বছরের অক্টোবরের ২৫ তারিখ থেকে নভেম্বরের ৪ তারিখ পর্যন্ত ৫ হাজার ৭৪৪ জন যাত্রী জয়রাইড পরিষেবা গ্রহণ করেছেন। দার্জিলিঙ থেকে ঘুম পর্যন্ত জয়রাইড পরিষেবার টিকিট বিক্রয় করে দার্জিলিঙ হিমালয়ান রেলওয়ের ৬৯ লক্ষ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা উপার্জন হয়েছে।
Toy Train
দীর্ঘ সাড়ে তিনমাস পর ফের যাত্রা শুরু টয়ট্রেনের, খুশি পর্যটকরা
×
Comments :0