Editorial

ক্ষণিকের স্বস্তি ক্লিন চিট নয়

সম্পাদকীয় বিভাগ

প্রধানমন্ত্রীর ঘনিষ্ট বন্ধু গৌতম আদানির কর্পোরেট সাম্রাজ্যের ভিত ধসিয়ে দেওয়া আমেরিকার শর্ট সেলার রিসার্চ সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ বন্ধ করে দেবার ঘোষণায় রীতিমতো খুশির হাওয়া বইছে আদানি গোষ্ঠীর অভ্যন্তরে। আদানি গোষ্ঠীর সামনে মূর্তিমান বিভীষিকার মতো বিরাজ করছিল এই সংস্থা। কখন আবার দুর্নীতি বেনিয়মের বোমা ফাটিয়ে আদানিদের পথে বসিয়ে দেয় সেই আতঙ্কেই কাটত বিনিদ্র রজনী। হিন্ডেনবার্গের প্রতিষ্ঠাতা নেথান আন্ডারসন নিজেই সংস্থা গুটিয়ে ফেলার ঘোষণা করে জানিয়ে দেন কোনও চাপে বা ভয়ে এই সিদ্ধান্ত নয়। কিছু নির্দিষ্ট কাজ সম্পন্ন করার উদ্দেশ্য নিয়েই তৈরি হয় এই গবেষণা সংস্থা। সেই সব কাজ শেষ। তাই গুটিয়ে ফেলা হচ্ছে সংস্থাটি।

২০১৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি মাত্র সাত বছরে গোটা দুনিয়ার তাবড় তাবড় কর্পোরেট সাম্রাজ্যকে টালমাটাল করে দিয়েছিল। শতাধিক কর্পোরেট সংস্থা এবং ধনকুবেরদের দুর্নীতি, প্রতারণা, কারচুপির ঘটনাকে অন্তর্তদন্ত করে বের করে এনে দুনিয়ার সামনে হাজির করেছিল। তার জেরে দেশে দেশে শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বহু কর্পোরেট ও তার কর্তাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছিল। এইসব কর্পোরেটের মধ্যে অন্যতম একটি ভারতের আদানি গোষ্ঠী। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে হিন্ডেনবার্গ দাবি করে কর্পোরেট সংস্থা নিকোলা এবং তার প্রতিষ্ঠাতা ট্রেভর মিল্টন তাদের ব্যাটারির প্রযুক্তি ও গাড়ির নকশা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের বিভ্রান্ত করেছে। তারপরই মিল্টন পদ থেকে সরে যান এবং আদালতে দোষী সাব্যস্ত হন। ২০২৩ সালের মে মাসে কার্ল ইকানের ইকান এন্টারপ্রাইস পঞ্জি প্রকল্প (চিট ফান্ড) চালিয়ে ডিভিডেন্ডের টাকা তুলছে রিপোর্ট দেয় হিন্ডেনবার্গ। পরে দোষ স্বীকার করে ইকান দুই মিলিয়ন ডলার জরিমানা দিতে বাধ্য হয়। ২০২১ সালের মার্চে লর্ডসটাউন মোটর তাদের বৈদ্যুতিক ট্রাকের বাজার চাহিদা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভুল তথ্য পরিবেশন করে। কয়েক মাসের মধ্যে সিইও স্টিফেন বার্নস পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। মার্কিন শেয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে তার অপরাধ স্বীকার করে। শেষ পর্যন্ত কোম্পানি দেউলিয়া ঘোষিত হয়।

ভারতের আদানি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ভয়ঙ্কর অভিযোগ তোলে হিন্ডেনবার্গ। আদানিরা আমদানির ক্ষেত্রে জাল নথি তৈরি করে খরচ বে‍‌শি দেখায়। এইভাবে বিদেশে টাকা পাচার করে সেই টাকা ঘুর পথে দেশে ফিরিয়ে এনে নিজেদের কোম্পানির শেয়ারে নিজেরাই বিদেশি লগ্নি রূপে লগ্নি করে। তাতে হুহু করে বাড়ে আদানিদের সংস্থার বাজার দর। রাতারাতি আদানিদের সংস্থার বাজার মূল্য ১৯ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। হিন্ডেনবার্গের রিপোর্ট প্রকাশের ধাক্কায় সেটা ধসে গিয়ে ৭ লক্ষ কোটি টাকায় নামে। বর্তমানে ১৩ লক্ষ কোটি টাকা। ভারতের শেয়ার বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির চেয়ারপার্সন সাধ্বী পুরীর বিরুদ্ধে স্বার্থের সংঘাতের গুরুতর অভিযোগ আনে হিন্ডেনবার্গ। সাধ্বী সেসব সংস্থায় টাকা ঢেলেছে যেগুলি ঘুরপথে আদানিদের সংস্থায় লগ্নি করে জালিয়াতি করে। এমন সব জাল জোচ্চুরির অভিযোগ গৌতম আদানি সহ সাত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করে। এখন সেই হিন্ডেনবার্গ সংস্থা গুটিয়ে ফেলায় আদানিরা ধড়ে প্রাণ ফিরে পাবেন সন্দেহ নেই। তবে সংস্থা গুটিয়ে ফেলা হলেও যে মোক্ষম অভিযোগগুলি তারা হাজির করে দিয়ে গেছে সেগুলি কিন্তু গুটিয়ে যাচ্ছে না। আজ না হয় কাল অভিযোগের সত্যতা প্রমাণ হবেই। অতএব দুর্নীতি, কারচুপি, জালিয়াতি মূল্য আদানিদের দিতেই হবে।

Comments :0

Login to leave a comment