Mohamedan Sporting Club

পরাধীন দেশে জিতেছিল ডুরান্ড, ঐতিহ্য নজরকাড়া, প্রশ্নে ভবিষ্যত

খেলা

অর্পণ সেনগুপ্ত

আজ ১৫ আগস্ট । ভারতের ৭৯ তম স্বাধীনতা দিবস। ১৯৪৭ সালের এই দিনেই প্রবল পরাক্রমি ব্রিটিশদের অত্যাচার , স্বৈরাচারী শাসনকে হারিয়ে ভারত পেয়েছিল স্বাধীনতার স্বাদ। তবে এই আন্দোলন , প্রতিবাদের ভাষাকে আরো জোরালো করার কাজ শুরু হয়ে গিয়েছিল অনেক আগেই। ফুটবল মাঠ সেই আন্দোলনের ভূমিকা নিয়েছিল।  মোহনবাগান ১৯১১ সালের ২৯ জুলাই ব্রিটিশদের দল ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে আইএফএ শিল্ড জিতেছিল। এই ঐতিহ্যশালী ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৮৯ সালের ১৫ আগষ্ট ই। তবে এই ক্লাবের ঠিক দুইবছর পর ১৮৯১ সালে গড়ে ওঠে আরও একটি ক্লাব। মোহনবাগানের মতই পরাধীন ভারতে যার অবদান অনস্বীকার্য। এই ক্লাবের নাম মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ১৮৮৭ সালে তৎকালীন খান বাহাদুর আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে মালদার মৌলবী মহম্মদ ইয়াসিনরা মিলে গঠন করেছিলেন জুবিলী ক্লাব। আর্থিক সমস্যার কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৮৯১ সালে তৈরি হয় ক্রিসেন্ট ক্লাব। পরবর্তীতে এই ক্লাবের নামবদল হয় হামিদিয়া ক্লাব ও বর্তমানে মহামেডান ক্লাব নামে। সেই শুরু মহামেডান ক্লাবের ঐতিহাসিক সফর। ১৯২৭ সালে ট্রেডস কাপ ফাইনালে ওঠায় তারা সুযোগ পেয়েছিল কলকাতা দ্বিতীয় ডিভিশন লিগে খেলার।
১৯৩৩ সালে দ্বিতীয় ডিভিশনে রানার্স হয়ে তারা সুযোগ পায় প্রথম ডিভিশনে খেলার। এরপরই ১৯৩৪-৩৮ পর্যন্ত টানা ৫বার কলকাতা লিগ জেতে সাদা কালো। পরাধীন ভারতে সেই সময় মোহনবাগানের সঙ্গে মহামেডানও মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্রিটিশদের জন্য। ১৯১১ তে যেমন ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে হারিয়ে ভারতের প্রথম দল হিসেবে আইএফএ শিল্ড জিতেছিল মোহনবাগান। ঠিক তেমনই ১৯৪০ সালে ওয়ারউইকশায়ারকে হারিয়ে ভারতের প্রথম দল হিসেবে ডুরান্ড কাপ জিতেছিল মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব।  ১৯৬০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ঢাকায় ( বর্তমানে বাংলাদেশ ) এশিয়ান ক্লাবগুলিকে নিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছিল আগা খান গোল্ড কাপ। সেই ট্রফি জিতেছিল মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। 

সাদা কালো ব্রিগেডের ক্ষেত্রে যতটা সোনালি তার অতীত। বর্তমানটা যেন ততটাই ফ্যাকাশে। মহামেডান ক্লাবের সাফল্যের ইতিহাস চলেছিল ২০০০ সাল পর্যন্ত। এর মাঝে ৮০ ' র দশকেও বেশ কয়েকটি ট্রফি জিতেছিল মহামেডান। ৮১ তে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে প্রসূন ব্যানার্জি, প্রশান্ত ব্যানার্জি, গৌতম সরকার, কৃষানু দে ' র মত বেশ কয়েকজন ফুটবলার সই করেন মহামেডানে। সেই বছর কলকাতা লিগ জিতেছিল তারা। ২০০৭ সালে কলকাতা লিগ রানার্স হওয়ার পর ২০১৩ তে ফের সঞ্জয় সেনের হাত ধরে ষষ্ঠবার আইএফএ শিল্ড জিতেছিল মহামেডান। গত মরশুমে আইলিগ জিতেই আইএসএলে পদার্পণ করেছিল সাদা কালো। তবে কালের নিয়মে অন্য দুই প্রধান যেমন নিজেদের পরিবর্তন করতে পেরেছেন। তেমনটা করে উঠতে পারেনি মহামেডান। ফলে ধীরে ধীরে পিছিয়ে পড়েছে তারা। ২০০০ সালের পর থেকে ক্লাব ফুটবলে যে আধুনিকতা , স্পন্সরশিপের জোয়ার এসেছিল। সেই রদবদলে মানিয়ে নিতে পেরেছে কিনা ম্যানেজমেন্ট সে প্রশ্ন আছে। দুই বিনিয়োগকারীর মধ্যে সংঘাত এই সমস্যাকে যেন আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গত মরশুমেই খেলোয়াড়রা বেতন না পাওয়ায় অনুশীলন বয়কট করে দিয়েছিলেন। কোচ আন্দ্রে চেরিশনভ মাঝপথেই দেশে ফিরে গিয়েছিলেন।  মরশুমের শুরুতেই মোহনবাগানের কাছে ডার্বি হার এবং ডায়মন্ড হারবারের কাছেও ডুরান্ডে হারতে হয়েছে তাদের। মাঠে দর্শকসংখ্যা নিম্নগামী হচ্ছে ক্রমশ। বহু ঐতিহ্য সঙ্গে নিয়ে ক্লাব কিভাবে ঘুরে দাঁড়ায় সেটিই দেখার

Comments :0

Login to leave a comment