Banglades

জাতীয় শোক দিবস বাংলাদেশে

আন্তর্জাতিক

মীর আফরোজ জামান : ঢাকা 
১৯৭৫ সালে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। নিহত হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শিশু পুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, ভাই শেখ আবু নাসের, ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, ভাগনে শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী বেগম আরজু মণিসহ ১৬ জন। বঙ্গবন্ধুর জীবন বাঁচাতে ছুটে যান কর্নেল জামিলউদ্দীন আহমেদ, তিনিও তখন নিহত হন। দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও তার ছোটবোন শেখ রেহানা।
দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শাসন ক্ষমতায় এসে ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস ঘোষণা করেন। সংসদে একটি বিলের মাধ্যমে অনুমোদিত হয়। ২০০১ সালে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতায় এলে তারা বিলটি পরিবর্তন করে ও শোক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত বাতিল করে। সেই সময় সরকারি স্বীকৃতি না থাকলেও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দিবসটির পালন অব্যাহত রাখে। ছয় বছর পর বাংলাদেশ হাইকোর্ট ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পুনর্বহাল করে। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনরায় দিনটিতে ছুটি চালু করে। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পর প্রতি বছর ১৫ আগস্টকে জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করত। ২০২৪ সালের ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার এই দিনের সাধারণ ছুটি বাতিল ঘোষণা করে। এরপর ১৬ অক্টোবর ২০২৪ তারিখ সরকার এই দিবসটি জাতীয় দিবসের তালিকা থেকে বাদ দেয়।
মানব সভ্যতার ইতিহাসে ঘৃণ্য ও নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডের কালিমালিপ্ত বেদনা-বিধুর শোকের দিন ১৫ আগস্ট। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। এখানেই শেষ নয়। আগস্ট  মাসেই সংঘটিত হয় ২১ আগস্টের নারকীয় গ্রেনেড হামলা ও ১৭ আগস্টে বাংলাদেশজুড়ে বোমা হামলা। এছাড়াও গত বছরের এই আগস্টে গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অবৈধভাবে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে। 
২০২৪ সালের আগে আওয়ামী লীগ প্রতি বছর ১৫ আগস্ট শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নিহত হওয়ার দিনটি জাতীয় শোক দিবস হিসেবে পালন করে আসছিল। এ দিন সরকারি ছুটি ছিল। জাতীয় শোক দিবস হিসেবে এটি সারাদেশে পালিত হতো। তবে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ১৩ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালন ও ওই দিনের সাধারণ ছুটি বাতিল করে।
শুক্রবার নিউইয়র্কে বিভিন্ন সংগঠন বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকী ও শোক দিবস পালনে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। প্রতি বছরের মত এবারো ১৫ আগস্ট শুক্রবার নিউইয়র্কে বড় কর্মসূচির আয়োজন করেছে অরাজনৈতিক সংগঠন
’৭৫-এর ১৫ আগস্ট হত্যাকারীরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হয়নি, বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করতে ঘৃণ্য ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করেন। সকল ষড়যন্ত্রকে উপেক্ষা করে নানা প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েও ঘৃণ্য যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। 
বঙ্গবন্ধু চেয়েছিলেন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে। বাংলাদেশের জনগণের মুক্তির যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি। 
অথচ সেই বাংলাদেশের দৃশ্যপট আজ পাল্টে গেছে। জাতীয় সক্ষমতা ও অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। মানুষের জীবন-জীবিকা চরম হুমকির মুখে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি মারাত্মক নাজুক। মানুষের জানমালের ন্যূনতম নিরাপত্তা নেই। জাতীয় শোক দিবস পালন করতে দেবে না এবং কেউ পালন করলে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে মর্মে ঘোষণা করেছে বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকার। 
দেশে-বিদেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকেও নানা কর্মসূচি গ্রহণের মধ্য দিয়ে 
এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে।

Comments :0

Login to leave a comment