Parks Rented North Bengal

পার্ক ভাড়া দিচ্ছে বন দপ্তর, ক্ষোভ উত্তরবঙ্গে

জেলা

Parks Rented  North Bengal বন দপ্তরের অধীনে থাকা রাজ্যের চারটি পার্ক বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত বনদপ্তরের।

টাকার বিনিময়ে পার্ক ভাড়া দিচ্ছে বন দপ্তর। বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে জন্মদিনের জন্য আলাদা ভাড়াও ঠিক করা হয়েছে উত্তরবঙ্গে। কিন্তু রাজ্যের বন দপ্তরের এই সিদ্ধান্তে ক্ষোভ ছড়িয়েছে। নাগরিকদের ক্ষোভ, ছুটির দিনে ছোটদের নিয়ে পার্কে যান অভিভাবকরা। এবার সেই সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। 
বন দপ্তর যদিও ঘোষণায় বলেছে যে বিকেলে শিশুদের খেলার সময় পার হওয়ার পর ভাড়া নেওয়া যাবে। তবে বিভিন্ন অংশেরই আশঙ্কা, বাস্তবে তা হবে না। অনুষ্ঠান বিকেলের পর শুরু হলেও প্রস্তুতির জন্য আগে থেকেই আয়োজকদের দখলে চলে যাবে।


বন দপ্তরের উদ্যান কানন শাখার অধীনে থাকা পার্কগুলো বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বন দপ্তর। উত্তরবঙ্গে বনদফতরের অধীনে একাধিক পার্ক আছে। এর মধ্যে চারটি পার্কে বিয়ে, জন্মদিন, প্রি-ওয়েডিং শ্যুট ও ওপেন এয়ার কনফারেন্সের জন্য ভাড়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। 
সোমবার জলপাইগুড়ি শহরের তিস্তা উদ্যানে দাঁড়িয়ে এই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন উদ্যান বিভাগের ডিএফ‌ও অঞ্জন গুহ। জলপাইগুড়ি শহরের তিস্তা উদ্যান, মাল মহকুমার মাল পার্ক, কোচবিহারের এনএম পার্ক এবং বালুরঘাটের বালুরঘাট পার্ক আপাতত ভাড়া দেওয়ার জন্য ঠিক করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি থেকে নির্দিষ্ট ভাড়ায় ভাড়া নেওয়া যাবে বলে জানিয়েছে বন দপ্তর।

 


প্রি-ওয়েডিং শ্যুটের জন্য ১১,০০০ টাকা, বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০,০০০ টাকা, জন্মদিনের অনুষ্ঠানে ২৫,০০০ টাকা, ওপেন এয়ার কনফারেন্সে ১৫,০০০ টাকা ভাড়া ঠিক হয়েছে।
তবে শুধু টাকা দিলেই হবে না। বন দপ্তরের পার্কে অনুষ্ঠান করতে হলে কিছু শর্ত‌ও মানতে হবে ভাড়া নেওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে। লেসার লাইট, ডিজে, প্লাস্টিক ব্যবহার করা যাবে না। সকালে পার্ক পাওয়া যাবে না। বন দপ্তর জানিয়েছে, বিকেলে বাচ্চাদের খেলার সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর পার্কে অনুষ্ঠান করার অনুমতি মিলবে বলে জানানো হয়েছে বন দপ্তরের তরফে।


এই সিদ্ধান্তের কথা জানাজানি হতেই সামাজিক মাধ্যমে প্রতিবাদ শুরু করেছেন সমাজের বহু বিশিষ্ট মানুষ। জলপাইগুড়ি শহরের শিল্প সংস্কৃতির সাথে যুক্ত বহু ব্যক্তি প্রতিবাদে মুখর হয়েছেন সামাজিক মাধ্যমে। 

 


এবিপিটিএ’র জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক তথা রাজ্য সহ সভাপতি বিপ্লব ঝা বলেন, ‘‘শহর ধীরে ধীরে কংক্রিটের জঙ্গলে পরিণত হচ্ছে। আগে পাড়ায় পাড়ায় শিশুদের খেলার মাঠ থাকত। এখন ফাঁকা জমিতে গজিয়ে উঠছে বড় বড় ঘর বাড়ি। জলপাইগুড়ি শহর ও মালবাজার পার্কে প্রতিদিন বিকেলে ও ছুটির দিনে ভিড় জমায় ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ও তাদের অভিভাবকরা।’’ 

 


তাঁর ক্ষোভ, ‘‘সরকার যতই শর্ত আরোপ করুক পার্ক একবার বাণিজ্যিকভাবে ভাড়া দিলে শিশু উদ্যান আর শিশুদের খেলার উপযোগী থাকবে না। অবিলম্বে সরকারের উচিত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা।’’ 
সিপিআই(এম) জলপাইগুড়ি সদরপূর্ব এরিয়া কমিটির সম্পাদক বিপুল সান্যাল বলেন, ‘‘নির্লজ্জ প্রশাসন শিশুদের খেলার জায়গায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। ভাবতেও অবাক লাগছে। সিপিআই(এম) মালবাজার এরিয়া কমিটির সম্পাদক রাজা দত্ত বলেন, ‘‘এর মধ্যেই মালবাজার পার্ক বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার।’’ 

 


সিপিআইএম জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ মিশ্র বলেন, ‘‘কেন্দ্রের মতো রাজ্য সরকারও সবকিছু বেচে দিতে চাইছে। এবার তারা হাত দিয়েছে শিশুদের খেলার জায়গাও‌। ইট কাঠ কংক্রিটের শহরে শিশু উদ্যান শিশুদের খেলার জন্যই থাকা জরুরি। বিয়ে বাড়ি, কনফারেন্স করার জন্য শহরে বামফ্রন্টের সময়ে ঊষশী ভবন সরকারি উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল। সেটির সংস্কার না করে শিশুউদ্যান  ভাড়ার সিদ্ধান্তের আমরা বিরোধিতা করছি।’’

Comments :0

Login to leave a comment