Kaliagunj

কালিয়াগঞ্জে মার থেকে বাঁচতে খাটের নিচে লুকালো পুলিশ

রাজ্য

বিশ্বনাথ সিংহ: রায়গঞ্জ 
 

পুলিশকে কালিয়াগঞ্জে বেধড়ক মেরেছেন গ্রামবাসীরা। আলিপুরে তৃণমূল কর্মীদের মারের হাত থেকে বাঁচতে যেভাবে পুলিশ টেবিলের তলায় লুকিয়েছিল, কালিয়াগঞ্জেও পুলিশকে খাটের তলায় লুকোতে হয়েছে।
তৃণমূল যে পথ দেখিয়েছিল, পুলিশকে আক্রমণের সেই পথে এখন গ্রামবাসীরা। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার ঘোর দুর্দিন, কালিয়াগঞ্জ জানালো। তৃণমূলের তাঁবেদারি করা পুলিশের উপর মানুষের ক্ষোভের সুযোগ একদল বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অপচেষ্টাকারী নিয়েছে, এমন অভিযোগও উঠেছে। তারা মূলত তৃণমূলের বিরুদ্ধে গ্রামে গ্রামে মানুষের আন্দোলনকে ভাঙতে চাইছে।
এক কিশোরীর মৃতদেহ উদ্ধারের পরেই খুনির গ্রেপ্তার, শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয়েছে সাহেবঘাটা এলাকা। ওই ঘটনাকে সাম্প্রদায়িক চেহারা দেওয়ার চেষ্টাও করছে একদল দুষ্কৃতী। ওই ঘটনার প্রতিবাদে আদিবাসী, রাজবংশীদের একাংশ মিছিল করেছে। মঙ্গলবার বিকেলে সেই মিছিল কালিয়াগঞ্জ থানার সামনে আসার পরেই রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা। উত্তেজিত কয়েকজনের বিরুদ্ধে থানায় আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। থানা জ্বলতে থাকে। থানায় আগুন লাগিয়ে দিয়ে পুলিশকে তাড়া করা হয়। কালিয়াগঞ্জ থানার পাশে সুকদেব পাল এবং শুভেন্দু দাসের বাড়িতে পুলিশরা মারের ভয়ে লুকিয়ে ছিল। বিক্ষোভকারী সেই দুটি বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর করে। লুকিয়ে থাকা পুলিশদের পিটিয়েছে। সুখদেব পাল বাধা দিলে তাকেও মারধরের ঘটনা ঘটে বলে অভিযোগ। শুভেন্দু দাসের বাড়িতে মাথায় হেলমেট পরে ঢুকে পড়েছিল চার সিভিক ভলান্টিয়ার। হাতের কাছে পেয়ে বেধড়ক মারধরের ঘটনাকে বাধা দিতে গেলে উন্মত্ত জনতা শুভেন্দু দাসেরও মাথা ফাটিয়েছে। গ্রামবাসীদের অভিযোগ, ভাঙচুর যারা চালিয়েছে তারা ‘জয় শ্রীরাম’ স্লোগান দিচ্ছিল। যদিও তৃণমূল, পুলিশ এই বিষয়টি এখনও স্বীকার করেনি। ‘নবান্নের তেমনই নির্দেশ আছে’, জানাচ্ছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশ আধিকারিকরা।
কালিয়াগঞ্জ ৪ নং ওয়ার্ডের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলিতে বুধবার সকালে পৌছান সিপিআই(এম) নেতৃত্ব। উপস্থিত ছিলেন দেবাশিস পাট্টাদার, ভারতেন্দ্র চৌধুরী, মনোরঞ্জন পাটোয়ারি, দ্বিগেন রায়, পুলক কুণ্ডু এবং এলাকার শিক্ষক অয়ন দত্ত সহ অন্যান্যরা। এলাকায় এদিনও আতঙ্কের পরিবেশ। মঙ্গলবার রাতেই কালিয়াগঞ্জ শহরে ৪, ৫, ৬, ১১ নং ওয়ার্ডে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে।
প্রশাসনিক সুত্রে জানা গিয়েছে, নতুন করে অশান্তি রুখতে কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার চারটি ওর্য়াডে এবং জেলার বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বুধবার সকাল থেকে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে, কালিয়াগঞ্জে পুলিশের উপর হামলা এবং থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস কথা বলেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব ও ডিজি’র সঙ্গে। সুত্রের খবর, রাজ্যপালের সঙ্গে কথা হয়েছে জাতীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়ঙ্ক কানুনগোর। বুধবার সিবিআই তদন্তের দাবিতে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন মৃত নাবালিকার বাবা। কালিয়াগঞ্জের এই নাবালিকা মৃত্যু কাণ্ড আগেই একটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। সব মিলিয়ে কালিয়াগঞ্জে নাবালিকা রাজবংশী স্কুল ছাত্রীর মৃত্যুর ঘটনা ক্রমশ জটিল আকার নিচ্ছে।
এদিকে, গতকাল কালিয়াগঞ্জে পুলিশের উপর হামলা এবং থানায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় ৩৩ জনকে গ্রেপ্তার করে বুধবার রায়গঞ্জ জেলা আদালতে পেশ করেছে পুলিশ। অশান্তি রুখতে আগেই কালিয়াগঞ্জের মালগাঁও পঞ্চায়েতের ৬টি এবং রায়গঞ্জ ব্লকের ১১টি গ্রামীণ এলাকায় ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। 
মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর এদিন ফের কালিয়াগঞ্জ থানায় আসেন এডিজি (উত্তরবঙ্গ) অজয়কুমার। সঙ্গে ছিলেন জিআইজি (রায়গঞ্জ) অনুপ জয়সোয়াল ও রায়গঞ্জ পুলিশ জেলার এসপি মহম্মদ সানা আখতার সহ একাধিক ডিএসপি। এতবড় ঘটনার পরে মঙ্গলবার সাহেবঘাটা গ্রামে পৌঁছান জেলাশাসক। এই প্রথম তৃণমুলের জেলা সভাপতি দলবল নিয়ে গ্রামে ছাত্রীর বাড়িতে যান। মঙ্গলবার থেকে বিভিন্ন এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকলেও কিভাবে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে গ্রামে পৌঁছালো তৃণমূল প্রশাসনের এতগুলো মানুষ প্রশ্ন তুলে জেলা বামফ্রন্ট নেতা আনোয়ারুল হক বলেন, ‘‘রাজ্যজুড়ে অরাজকতার কারণে মানুষের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে কালিয়াগঞ্জ বুধবার শহরে শান্তি মিছিলের আগেই ডাক দেওয়া হয়। মিছিল করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে প্রশাসন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্যে প্রশাসনকে সব রকম সাহায্য করবে বামফ্রন্ট তবে পুলিশ প্রশাসনকে পক্ষপাতিত্ব ছেড়ে সাধারণ মানুষের জন্য কাজ করতে হবে।’’ গণতন্ত্রপ্রিয় সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানালেন জেলা বামফ্রন্ট আহ্বায়ক।

 

Comments :0

Login to leave a comment