Probandha — PRODOSH KUMAR BAGCHI / SHARAD MUKTADHARA

প্রবন্ধ — দুর্গাপূজা বাঙালির বড় উৎসব / শারদ মুক্তধারা

সাহিত্যের পাতা

Probandha    PRODOSH KUMAR BAGCHI  SHARAD MUKTADHARA

শারদ মুক্তধারা

প্রবন্ধ

দুর্গাপূজা বাঙালির বড় উৎসব

প্রদোষকুমার বাগচী


দুর্গাপূজা বাঙালির সবচেয়ে বড় উৎসব। আনন্দের উৎসব। আমাদের সকলেরই বড় হয়ে ওঠা, আমাদের কর্ম, ভাবনা, অভ্যাস, স্বপ্ন সবই দুর্গোৎসবের রঙে রঙিন হয়ে ওঠে। প্রত্যেকে নিজেকে আরও সাজিয়ে তোলেন, রাঙিয়ে তোলেন কয়েকটা দিনের জন্য। সর্বত্র যেন মুঠো মুঠো রঙের সমারোহ। যা বাদ দিয়ে বাঙালিকে বোঝা যায় না। একটা সময়ে মানুষ বাসন্তীপুজাতেই বেশি মগ্ন ছিল। পরে দুর্গোৎসবে বেশি মজেছে।
শোনা যায় রামচন্দ্রই নাকি প্রথম দুর্গাপূজার আয়োজন করেছিলেন। রাবন ছিলেন ঐ সময়ের ভয়ঙ্কর দানব। রামচন্দ্রকে যতই দেবতা বলা হোক না কেন তার সেই শক্তি ছিল না রাবনকে পরাস্ত করার। এর জন্য অকালে তিনি দেবীকে ডেকে তাঁকে তুষ্ট করে বর নিয়েছিলেন। এভাবেই সেদিন দেবীর অকাল বোধন ঘটেছিল। 
বর্তমানে দেবী হিসাবে যে মূর্তি প্রচলিত সেখানে দুর্গার দশটি হাত নানা অস্ত্রে সজ্জিত। তাঁর একটি পা সিংহের পিঠে অপরটি একটি মহিষের উপর। মহিষের ভিতর থেকে বেরিয়ে আসা অসুর দেবীর সঙ্গে যুদ্ধে রত। দেবী তাঁকে নিধন করেন। তাই এই দুর্গামূর্তিকে মহিষমর্দিনী বলা হয়। এখানে দেখা যাচ্ছে তিনি একা নন, বিদ্যা ও সংস্কৃতির অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতী ও ঐশ্বর্যের দেবী লক্ষ্ণী সহ রূপবান পুত্র কার্তিক ও অপর পুত্র হস্তিমুখী গণেশও রয়েছে তাঁর সঙ্গে। এই সমস্ত প্রতিকীর মাধ্যমে দুর্গা হয়ে ওঠেন সকল পরিবারের মাতৃস্বরূপিনী দেবী।
বহু আগে বড়ো জমিদার ও ধনাঢ্য ব্যক্তিরাই দুর্গাপূজাকে উপলক্ষ করে উৎসবে মেতে উঠতেন। পরে বারোইয়ারী বা সর্বজনীন পূজার প্রচলন হয়। ১৮৮২ সালে শিবতলার কাছে শিবপুরে এক বারোইয়ারী বা সর্বজনীন পূজায় ৭০০ জন দুস্থ ও নিরন্ন মানুষের ভুরিভোজ হয়েছিল। তারও আগে ১৮২০ সালে হুগলী জেলার গুপ্তিপাড়ায় ৭ হাজার টাকা চাঁদা তুলে মহামারী থেকে মানুষকে উদ্ধারের আশায় দুর্গাপূজা করা হয়েছিল সমারোহের সঙ্গে।

 
এখন তো পাড়ায় পাড়ায় পূজা। আবাসনে আবাসনে পূজা। প্রবাসে প্রবাসে পূজা। মহা ধূমধাম। একটা সময়ে পৃথিবীতে যত দেবদেবী ছিল, কালের নিয়মে তারা হারিয়ে গেছে চিরতরে অথবা তাদের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে। কালের নিয়মে দুর্গাপূজাও পরিবর্তিত হয়েছে। একটা সময়ে ইউরোপীয় ও অন্যান্য অতিথিদের চিত্ত বিনোদনের কথা ভেবে দেবীর আধ্যাত্মিক মাহাত্ম্যের চেয়েও দুর্গোৎসবে মদ্য পান ও নর্তকীর নাচের আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। শোনা যায় নদীয়া-কৃষ্ণনগরের রাজা কৃষ্ণচন্দ্র রায় মনোরঞ্জনের জন্য প্রথম নর্তকীর ব্যবস্থা করেছিলেন ১৭৫০ সালে।সামনে রাখা হয়েছিল দুর্গাপূজাকে। তবে উত্তরপাড়ার রাজবাড়ি বা বেহালার রায়বাড়ির পূজায় এসব বেয়াদপি ছিল নৈব নৈব চ। আলেয়ারপুরে তারও আগে ১৬৫০ সাল নাগাদ পূজার কাজ শুরু হয়েছিল বলে মনে করা হয়। যদিও এসব কথা বলতে গেলে কাগজপত্র দরকার। কিন্তু কে না জানে বাঙালির ইতিহাসবোধ বরাবরই দুর্বল।
অনেকে মনে করেন, দুর্গোৎসবকে ঘিরে আজ যত বিচিত্র ও অকল্পনীয় সব আয়োজন তা সেই প্রাচীন উদ্দামতারই সম্প্রসারিত ও শৈল্পিক রূপ। বিশ্বের নানা দেখবার বস্তুও তাই নেমে আসে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে। যে সব শিল্পীরা এসব তৈরি করেন তাদের আধুনিক ময় দানবের সঙ্গে তুলনা করা যায় বৈকি।
 ইতিহাস ভুগোলের কথা থাক, আমরা যে উৎসবের কথা বলছি তার নাম শারদীয়া দুর্গোৎসব। শরৎকালে ফসল কাটার সময়ে আকাশে বাতাসে যখন আনন্দের সুর ধ্বনিত হয় তখন শারদোৎসবের মজাই আলাদা। তবুও তো উৎসবে আলো থাকে না অনেকের ঘরে। সেই আঁধার ও মলিনতা দূর করতে পারলেই শারোদৎসবের সার্থকতা।

Comments :0

Login to leave a comment