চলতি বছরের জানুয়ারিতে দেশের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ডাকে দিল্লির বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন রামদাস শিবনন্দন। ছিলেন অন্যতম সংগঠকও। এপ্রিলে তাঁকে পড়তে হলো শাস্তির মুখে। এই গবেষক ছাত্রকে দু’বছরের জন্য সাসপেন্ড করল টাটা ইনস্টিটিউট অব সোশাল সায়েন্সেস (‘টিস’) কর্তৃপক্ষ।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের একাধিক পদক্ষেপের বিরোধিতা করেছেন শিবনন্দন। মুম্বাইয়ে নিজের ক্যাম্পাসে আন্দোলনের অন্যতম সংগঠকও। প্রেগ্রেসিভ স্টুডেন্টস ইউনিয়ন নামে একটি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। প্রতিবাদী দলিত গবেষক ছাত্রকে শাস্তির সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসে ক্যাম্পাসে ঝরে পড়ছে ক্ষোভ। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ছাত্রের ওপর দেশ বিরোধী কার্যকলাপে মদত দেওয়ার দায় চাপিয়েছে।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি এবং এসএফআই নেত্রী ঐশী ঘোষের ক্ষোভ, ‘‘কারা ভয় পায় ভিন্নমতকে? গণতন্ত্রের উৎসবকে তামাশায় পরিণত করা হচ্ছে। সাধারণ নির্বাচনের শুরু হয়ে গিয়েছে দেশে। সবাই দেখতে পাচ্ছেন দেশের গণতন্ত্র কেমন করে ক্ষয়ে যাচ্ছে।’’
জানুয়ারির ছাত্র সমাবেশের ডাক দিয়েছিল এসএফআই’র মতো বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের সংযুক্ত মঞ্চ। প্রধান বিষয় ছিল কেন্দ্রের জাতীয় শিক্ষানীতি। বেসরকারিকরণ এবং সাম্প্রদায়িকীকরণের এই নীতি বাতিলের দাবিতে দিল্লির যন্তর-মন্তরে আছড়ে পড়েছিল বিক্ষোভ।
সমাজকর্মী শিবনন্দনকে শাস্তির খবরকে লজ্জাজনক আখ্যা দিয়েছেন। সোশাল মিডিয়ায় তিনি বলেছেন, ‘‘জাতীয় শিক্ষানীতির বিরোধিতা কী করে দেশবিরোধী কার্যকলাপ হতে পারে সেটিই বিস্ময়ের। এমন শাস্তি হচ্ছে ‘টিস’-র মতো প্রতিষ্ঠানে। একজন মেধাবী দলিত ছাত্রের বিরুদ্ধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। সত্যিই লজ্জার!’’
‘টিস’ কর্তৃপক্ষ ১৮ এপ্রিল শাস্তির সিদ্ধান্ত জানিয়ে চিঠি দেয় শিবনন্দনকে। ৭ মার্চ দিল্লির বিক্ষোভের মতো একাধিক কর্মসূচিতে যোগদানের তালিকা দিয়ে শো-কজ নোটিশ পাঠিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়েছে, শিবনন্দনকে ঘিরে অভিযোগের সিদ্ধান্ত নিতে কমিটি গড়া হয়েছিল। ওই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী দু’বছর পড়াশোনা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’
কমিটি অভিযোগ তুলেছে দিল্লির যে রাস্তায় সংগঠনের নামের ব্যানারের পাশে প্রতিষ্ঠানের নাম কেন লেখা ছিল তা নিয়ে। যুক্তি দেওয়া হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোগ্রেসিভ স্টুডেন্টস ফ্রন্ট স্বীকৃত সংগঠন নয়। ব্যানারে প্রতিষ্ঠানের নাম থাকায় কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রকের অনুদানে পরিচালিত ‘টিস’ সম্পর্কে ভুল ধারণা ছড়িয়েছে।
২৬ জানুয়ারি ক্যাম্পাসে দেখানো হয় ‘রাম কে নাম’ তথ্যচিত্র। ধর্মের নামে রাজনীতির চেহারা তুলে ধরেছে এই তথ্যচিত্র। ক্যাম্পাসে সেই ছবি দেখানোর অন্যতম উদ্যোক্তা ছিলেন শিবনন্দন। কমিটির চিঠিতে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়। ‘টিস’ বলেছে ‘রামমন্দির উদ্বোধনের অনুষ্ঠানকে অসম্মান করা হয়েছে।’’
ক্যাম্পাসে ছাত্রছাত্রীরা বলেছেন, ‘‘ছাত্রছাত্রীদের স্বর দাবিয়ে দিতে চাইছে দিল্লির সরকার। ভয় দেখাতে চাইছে। রাস্তায় তো বটেই, অনলাইনে ভিন্নমত বা প্রতিবাদ জানালেও শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে।’’
TISS STUDENT SUSPENDED
প্রতিবাদী গবেষক ছাত্রকে সাসপেন্ড করল ‘টিস’, ছড়াচ্ছে ক্ষোভ
×
Comments :0