কলকাতার অন্যতম ঐতিহ্য, গর্বের ট্রামকে তুলে দেওয়ার নেপথ্যে শাসকদল তৃণমূলের মূল লক্ষ্য ট্রাম কোম্পানির বিপুল জমি লুট করা। পরিবেশবান্ধব ট্রামকে রক্ষা করা ও জমি লুটের অভিসন্ধির বিরুদ্ধে সব অংশের মানুষকে নিয়ে একযোগে প্রতিবাদ প্রতিরোধে শামিল হওয়ার আহ্বান জানালেন কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠনগুলি, ফেডারেশন সমূহ ও ১২জুলাই কমিটির নেতৃবৃন্দ।
সোমবার রাজাবাজার ট্রাম ডিপোর সামনে ট্রাম তুলে দেওয়ার বিরুদ্ধে একটি প্রতিবাদ সভা সংগঠিত করে তাঁরা বলেছেন, বন্ধ করা চলবে না, আধুনিকীকরণ করে পরিবেশ বান্ধব গণপরিবহন ট্রামকে চালু রাখতে হবে।
কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন, শিল্পভিত্তিক ফেডারেশন সমূহ ও ১২ই জুলাই কমিটির উদ্যোগে সংগঠিত এই প্রতিবাদ সভায় শ্রমিক নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি সমাজের বিশিষ্টজনেরাও অংশ নিয়েছেন।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, সিআইটিইউ পশ্চিমবঙ্গ কমিটির সভাপতি সুভাষ মুখার্জি ও সাধারণ সম্পাদক অনাদি সাহু, সিআইটিইউ নেত্রী গার্গী চ্যাটার্জি, এআইসিসিটিইউ নেতা বাসুদেব বসু, এআইইউটিইউসি’র পক্ষে শান্তি ঘোষ, আইএনটিইউসি’র পক্ষে চন্দন মিত্র, মাষ্টার সেলেমান, ১২ই জুলাই কমিটির পক্ষে সুমিত ভট্টাচার্য, ক্যালকাটা ট্রামওয়েজ ওয়ার্কাস এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের পক্ষে বিনয় সিং, অটো শ্রমিক ইউনিয়নের পক্ষে অজিত চৌধুরি, প্রবীর গোস্বামী সহ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ প্রতিবাদ সভায় ভাষণ দেন, সভা পরিচালনা করেন সিআইটিইউ নেতা দেবাঞ্জন চক্রবর্তী।
শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার কলকাতার ঐতিহ্য ট্রামকে তুলে দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেছেন, বর্তমানে যখন পেট্রল ডিজেল চালিত গাড়ির দূষণের মাত্রা বাড়ছে, পরিবেশবিজ্ঞানীরা যখন পরিবেশ বান্ধব জ্বালানি ব্যবহারে জোর দেওয়ার কথা বলছেন, তখন ট্রামের মতো পরিবেশ বান্ধব যানকে কেন তুলে দেওয়া হবে? এই অপচেষ্টা কেন? কার বা কাদের সুবিধা করে দিতে এই সরকারি সিদ্ধান্ত?
অনাদি সাহু বলেন, মমতা ব্যানার্জির সরকার রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যজুড়ে চুরি, লুট, দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছেন রাজ্যকে। শ্রমিক, কৃষক সহ মেহনতি মানুষের জীবনে নেমে এসেছে চরম দুর্দশা। কেন্দ্রের মোদী সরকার দেশ ও দেশের শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থ বিরোধী যেসব নীতি নিয়েছে এরাজ্যে কর্পোরেট স্বার্থে সেগুলিই রূপায়ণ করছেন মমতা ব্যানার্জি। কলকাতার ঐতিহ্য ট্রামের বিপুল জমি লুট করাটাও এরকমই কর্পোরেট স্বার্থবাহী অভিসন্ধি। এই অভিসন্ধির বিরুদ্ধে ধারাবাহিক লড়াই চালাতে হবে।
ট্রেড ইউনিয়ন সমূহের দাবি, ট্রাম তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ট্রাম কোম্পানির কোনও জমি বেসরকারি ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া চলবে না। ট্রামের সংখ্যা বাড়াতে হবে, বন্ধ করে দেওয়া ট্রাম রুট ফের চালু করতে হবে, ট্রামের পরিকাঠামো উন্নয়নে ৫০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করতে হবে। ট্রাম পরিবহন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করে তা চালু রাখতে হবে।
সুভাষ মুখার্জি বলেছেন, ট্রামের জমি লুটের এই অভিসন্ধি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকটি ডিপোর জমি শাসকদলের ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট ও শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলোকেও তুলে দিতে তৎপর হয়েছে মমতা ব্যানার্জির সরকার। এর বিরুদ্ধে মানুষকে এককাট্টা হওয়ার আহবান জানিয়েছেন তিনি।
Comments :0