দীপশুভ্র সান্যাল: জলপাইগুড়ি
জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের জন্য স্থায়ী ভবনের কাজ প্রায় শেষ। ইতিমধ্যে সার্কিট বেঞ্চের জমি কলকাতা হাইকোর্টকে হস্তান্তর করেছে রাজ্য সরকার। শুক্রবার ফের নির্মীয়মান সার্কিট বেঞ্চ ভবন পরিদর্শন করলেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। সার্কিট বেঞ্চের কাজ খতিয়ে দেখতে গিয়ে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি পুলিশ, জেলা প্রশাসনের কাজের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘‘দ্রুতই জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চের উদ্বোধন হবে।’’
প্রধান বিচারপতির উপস্থিতিতে গত ৮ মে প্রশাসনের পক্ষ থেকে হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে সার্কিট বেঞ্চের জমি সহ ভবনের স্থায়ী পরিকাঠামো। জলপাইগুড়ির পাহাড়পুর এলাকায় কম্পোজিট কমপ্লেক্সের পাশে প্রায় ৪০ একর জমির মধ্যে গড়ে তোলা হচ্ছে সার্কিট বেঞ্চের নতুন ভবন। এদিন নবনির্মীত সার্কিট বেঞ্চ ভবনের পাশাপাশি বিচারপতিদের নির্মীয়মান আবাসন সহ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখেন হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম। এরপর গোশালা মোড় থেকে শুরু করে হাইকোর্টের প্রবেশ পথের রাস্তা সহ অন্যান্য দিকগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। সার্কিট বেঞ্চ ভবনের সামান্য কিছু কাজ বাকি এখন। খুব দ্রুততার সঙ্গে সেই কাজ শেষ করে শীঘ্রই স্থায়ী ভবনে সার্কিট বেঞ্চ চালু করতে তৎপর রয়েছে হাইকোর্ট কর্তৃপক্ষ। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার সার্কিট বেঞ্চ ভবন পরিদর্শনে আসেন প্রধান বিচারপতি। সঙ্গে ছিলেন বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু ও বিচারপতি সম্পা সরকার সহ অন্যান্যরা।
উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে বিচারব্যবস্থার সুযোগ সুবিধা পৌঁছে দেওয়ার জন্য সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ তৈরি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল জ্যোতি বসুর নেতৃত্বাধীন বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্য সরকারের সেই সিদ্ধান্ত কলকাতা হাইকোর্ট সাদরে গ্রহণ করেছিল। সেই মতো কলকাতা হাইকোর্ট ১৯৮৮ সালে উত্তরবঙ্গে সার্কিট বেঞ্চ তৈরির প্রস্তাবে সিলমোহর দিয়েছিল। কলকাতা হাইকোর্টের সেই সিদ্ধান্তে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার অনুমোদন মিলেছিল ২০০৬ সালে। এই অনুমোদন পাওয়ার পরই সেখানে কাজ শুরু হয়েছিল। জলপাইগুড়ি স্টেশন এবং জলপাইগুড়ি রোড স্টেশনের মাঝামাঝি জায়গায় পাহাড়পুরে ৪০ একর জমি অধিগ্রহণ করেছিল বামফ্রন্ট সরকার। এখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বলছেন জমি রাজ্য সরকার দিয়েছে। তিনি ঠিকই বলছেন। তবে মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন না, তা হলো, ওই জমি অধিগ্রহণ এবং সার্কিট বেঞ্চের পরিকাঠামো তৈরির কাজ করেছিল বামফ্রন্ট সরকার।
এদিন শীঘ্রই কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের কাজ শুরু হওয়ার কথা শুনে সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সদস্য তথা জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক পীযূষ মিশ্র জানান, সার্কিট বেঞ্চ নিয়ে জলপাইগুড়ির মানুষের দীর্ঘ লড়াই আন্দোলনের ইতিহাস রয়েছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের সাথে আমাদের দলের নেতৃত্বেরও হাইকোর্ট অবমাননার দায় জেল যাত্রার উপক্রম হয়েছিল। আমরা কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের সমস্ত পরিকাঠামো তৈরি করে রেখেছিলাম বামফ্রন্ট জমানায়। জলপাইগুড়িতে কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ উদ্বোধন হতে চলেছে খুব ভালো কথা কিন্তু সার্কিট বেঞ্চ না আমরা জেলা বামফ্রন্টের তরফে স্থায়ী বেঞ্চের দাবি রাখছি। উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর মানুষকে যেন আর কলকাতা ছুটতে না হয় তার বন্দোবস্ত হাইকোর্টকে করতে হবে। জলপাইগুড়িতেই উত্তরবঙ্গের সমস্ত জেলার হাইকোর্টের মামলার ব্যবস্থা করতে হবে। এআইএলইউ জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক শঙ্কর দে জানান, বামফ্রন্ট আমলে সার্কিট বেঞ্চ আন্দোলনের অন্যতম দুই দাবি জলপাইগুড়িতে হাইকোর্টের স্থায়ীবেঞ্চ চালু করা এবং স্থায়ীবেঞ্চের পরিকাঠামোতে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলিতে যুক্ত করা। এই দাবি এখনো পূরণ হয়নি। আমরা চাই উত্তরবঙ্গের মানুষ ঐতিহ্যশালী জলপাইগুড়ি জেলায় সার্কিট বেঞ্চে আসুক।
Comments :0