Editorial

ত্রিপুরায় বিরোধী নিকেশের মহড়া

সম্পাদকীয় বিভাগ

এরাজ্যে স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসিত সংস্থা পঞ্চায়েত ও পৌরসভার নির্বাচনে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে শাসক তৃণমূল যেভাবে সন্ত্রাস করে ভোট লুটতন্ত্র চালিয়ে বিরোধীদের নিকেশ করে একচেটিয়া ক্ষমতা দখল করে ঠিক সেই কায়দাতেই একই উদ্দেশ্যসাধন করে ত্রিপুরার শাসক দল বিজেপি। এরাজ্যে তৃণমূল যেমন চায় বিরোধী প্রতিনিধিবর্জিত পঞ্চায়েত এবং পৌরসভা ঠিক সেই ভাবেই ত্রিপুরার বিজেপি চায় বিরোধীহীন স্থানীয় স্বায়ত্ত শাসন। প্রকৃত গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় শক্তিশালী বিরোধী দলের পর্যাপ্ত পরিসর অপরিহার্য হলেও এই দুই দল সেটা মেনে নিতে নারাজ। যথেচ্ছাচারের শাসনে লুটতরাজ কায়েম করতে হলে একজন বিরোধী সদস্যের উপস্থিতিও বিপজ্জনক। সংস্থা পরিচালনা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, সিদ্ধান্ত রূপায়ণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে সামান্য হলেও কিছুটা জানার সুযোগ থাকে বিরোধী সদস্যের। ফলে বেপরোয়া দুর্নীতি, লুটে খাওয়া জানাজানি হওয়ার, বিরোধিতার আশঙ্কা থাকে। তৃণমূল-বিজেপি সেই আশঙ্কা নির্মূল করতে চায়। তাই নির্বাচন প্রক্রিয়ার একেবারে গোড়া থেকেই এমন সন্ত্রাস তৈরি করে যাতে কোনও অবস্থাতেই একজন বিরোধীও জয়ী হতে না পারে। এরপরও যদি কেউ জয়ী হয়ে যায় তাহলে তার ও তার পরিবারের ওপর এমন ভয়াবহ সন্ত্রাসের আবহাওয়া তৈরি করবে, খুনের ‍‌হুমকি দেবে, ভিটেমাটি ছাড়া করার চেষ্টা করবে যে তখন বাধ্য হয়ে দল বদলাতে হবে বা পদত্যাগ করতে হবে। তাতেও কাজ না হলে পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেওয়া হবে। এহেন সন্ত্রাসমূলক রাজনৈতিক দর্শনে বিশ্বাস করে তৃণমূল ও বিজেপি। যথেচ্ছ লুটের জন্য এরা পারে না এমন কোনও কাজ নেই।
আগামী ৮ আগস্ট ত্রিপুরায় ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন হবার কথা। নির্বাচন ঘোষণার পর থেকেই রাজ্যজুড়ে নামিয়ে আনা হয়েছে ভয়াবহ সন্ত্রাস। লক্ষ্য সিপিআই(এম) এবং অন্যান্য বিরোধীরা। পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অথবা কাঠের পুতুল বিজেপি’র পোষা গুন্ডা-দুষ্কৃতীরা গোটা পরিস্থিতি নিজেদের হাতে নিয়ে নিয়েছে। লক্ষ্য পূরণের ধাপে ধাপে অঘোষিত হুলিয়া জারি করে বিরোধীদের যাবতীয় নির্বাচনী কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করেছে। বিজে‍‌পি এবং তাদের সহযোগী ছাড়া কেউ যেন মনোনয়ন জমা দেবার সাহস না দেখায়। মনোনয়ন দিতে চাইলে বা দিলে সশস্ত্র হামলা হবে। পথে ঘাটে, এমনকি বাড়িতে হামলা হবে। মনোনয়ন দিতে গেলে রাস্তায় পেটানো হবে। ঢুকতেই দেওয়া হবে না সরকারি দপ্তরে। এর পরেও কেউ মনোনয়ন দিলে তা প্রত্যাহার করাতে চরম নৃশংস হতেও দ্বিধা করবে না।
এর সবটাই এখন ত্রিপুরার সর্বত্র প্রতিদিন প্রদর্শিত হচ্ছে। পদে পদে বাধা দেওয়া হচ্ছে মনোনয়ন পত্র জমায়। গুন্ডা-দুষ্কৃতী-সমাজবিরোধী, দাগী আসামিদের জড়ো করে বাধা ‍‌দেওয়া হচ্ছে, হামলা করা হচ্ছে। সিপিআই(এম) নেতা কর্মীদের বাড়িতে হামলা হচ্ছে। খুনের হুমকি চলছে। পুলিশ নীরব-নিষ্ক্রিয়। মিছিল করলে, সভা করলে পুলিশের সামনে ইটপাটকেল ছুঁড়ে হামলা করে বানচাল করা হচ্ছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ইতিমধ্যে সিপিআই(এম)’র জেলা পরিষদ প্রার্থী বাদল শীলকে নৃশংসভাবে খুন করেছে। স্বৈরাচারী কায়দায় শাসন চালিয়ে লুটেপুটে খাবার বন্দোবস্ত করতে মরিয়া বিজেপি। দেশের আইন, সংবিধান পদে পদে দলিত হচ্ছে। শত অত্যাচার-সন্ত্রাস সত্ত্বেও এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদী স্বর তীব্র করছে সিপিআই(এম)। শান্তিপ্রিয় গণতান্ত্রিক মানুষ যারা রাজ্যে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফেরাতে চান, স্বস্তিতে বাঁচতে চান তাদের সরব হতে হবে। জনতার প্রতিবাদ প্রতিরোধই এই দুঃশাসনের অবসান ঘটাতে পারবে।

Comments :0

Login to leave a comment