Editorial

মমতা ম্যাজিক

সম্পাদকীয় বিভাগ

তৃণমূল জমানায় সরকারি উদ্যোগে প্রতি বছর নাকি লক্ষ লক্ষ বৃক্ষ রোপণ করা হয়। তার জন্য সরকারি ভাঁড়ার থেকে কোটি কোটি টাকা খরচও হয়ে যায়। অথচ সরকারি হিসাবই বলছে গত ১৩ বছরে এরাজ্যের বনাঞ্চল অনেকটাই কমে গেছে। একদিকে উন্নয়নের নামে রাস্তাঘাট ও অন্যান্য নানা প্রকল্পের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে বনাঞ্চলের জমি। কেটে ফেলা হচ্ছে হেক্টরের পর হেক্টর বনাচ্ছাদন। অন্য দিকে লুঠতরাজের রাজত্বে শাসক দলের নেতা, কর্মী ও ঘনিষ্ঠরা দেদার দখল করে নিচ্ছে বনাঞ্চল। যথেচ্ছভাবে গাছ কেটে ফাঁকা করে দেওয়া হচ্ছে। সেই গাছ বিক্রি করে পকেট ভরছে নেতাদের। পঞ্চায়েতে তৃণমূলী কর্তারা নিজেরাই সরকারি গাছ কেটে লোপাট করে দিচ্ছে, দখল করে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছে সেই জমি। এইভাবে শাসকের মদতে কমছে যেমন বনাঞ্চল তেমনি বনাঞ্চলের বাইরের জঙ্গলও হাওয়া হয়ে যাচ্ছে। বনাঞ্চল বা গাছে ঢাকা জমিই যদি কমে যায় তাহলে মমতা ব্যানার্জির সরকার যে গাছ লাগানোর গল্প শোনাচ্ছে সেই গাছ কোথায় যাচ্ছে। আদৌ গাছ লাগানো হচ্ছে কি? নাকি খাতায় কলমে গাছ লাগানোর রিপোর্ট লিখে সব টাকা নিজেদের পকেটে ভরে নিচ্ছে?
বর্তমানে ভূ-উষ্ণায়নের যুগে যখন প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় বনাচ্ছাদিত এলাকা বাড়ানো দরকার তখন এরাজ্যে বনাচ্ছাদন কমছে। জলাভূমি না বাড়লেও অন্তত যেগুলি আছে সেগুলি রক্ষা করার কথা। কিন্তু সর্বত্র নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে জলাশয়। ক্রমবর্ধমান সমুদ্র জলোচ্ছ্বাস, উপকূলে ভাঙন, সাইক্লোন, ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষার জন্য ঝাউ ম্যানগ্রোভ বা ঝাউবন সঙ্কুচিত হয়ে যাচ্ছে। জমি হাঙ্গরদের গ্রাসে সে সব জমি দ্রুত দখল হয়ে যাচ্ছে যেগুলি আসলে প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকে ভারসাম্য রক্ষা করে। পাহাড়ে ধস সহ যাবতীয় বিপর্যয় ঠেকাতে জরুরি পাহাড়ি বন। গাছ মাটি কামড়ে ধরে পাহাড়কে রক্ষা করে। কিন্তু সেই পাহাড়ি বন কেটে সাফ করে সেখানে আবাসন হচ্ছে, ব্যবসার পরিকাঠামো তৈরি হচ্ছে। এইভাবে সব দিক থেকে ভেঙে তছনছ করে দেওয়া হচ্ছে প্রকৃতির ভারসাম্যকে। ফলে বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে মানুষ তথা সকল জীবজন্তুর জীবন বিপন্ন। গাছ-জলাশয় কমে যাওয়ায় গরম বাড়ছে। বৃষ্টির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ থেকে লক্ষ লক্ষ প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। চেনা পৃথিবী দ্রুত বদলে জীবমণ্ডলের অবাসযোগ্য হয়ে যাচ্ছে। এমন ভয়াবহ বিপন্নতার মধ্যেও লুটেরাদের লুটে ভাটা নেই। মমতা রাজ দুর্নীতি আর লুটের যে ইকোসিস্টেম তৈরি করেছে সেখানে সরকারি প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু খাতায় কলমে কাজ হলেও বাস্তবে কাজ হয় না। বরাদ্দ অর্থ চলে যায় শাসকের পকেটে।
কেন্দ্রীয় প্রকল্পে কেন্দ্রীয় অর্থে গঙ্গার দু’ধারে গাছ লাগানোর কাজ চলছে ২০১৬-১৭ সাল থেকে। প্রতি বছর টাকা আসে। এরাজ্যে গত সাত বছরে নাকি ২২ লক্ষ গাছ ২৯ কোটি টাকা খরচ করে লাগিয়েছে রাজ্য সরকার। কিন্তু সেই ২২ লক্ষ গাছে এক লক্ষও বাস্তবে খুঁজে পাওয়া যাবে না। বনসৃজন যদি হয় তাহলে নিশ্চিতভাবে বনাঞ্চল বাড়বে, বনের গভীরতাও বাড়বে। অথচ সরকারি তথ্যই বলছে ২০১৩ সালের পর থেকে এরাজ্যে ২৭০ বর্গ কিলোমিটার বনাঞ্চল কমে গেছে। উত্তরের তিন পাহাড়ি জেলায় পাহাড়ি বন কমেছে ৪২ বর্গ কিলোমিটার। দক্ষিণে উপকূলবর্তী সুন্দরবনে ম্যানগ্রোভ জঙ্গল কমেছে ৩৬ বর্গ কিলোমিটার। মমতা ম্যাজিকে এরাজ্যে গাছ লাগালে বন বাড়ে না, কমে যায়!

Comments :0

Login to leave a comment