TIGAR ATTACK

বাঘের আক্রমণে ঘায়েল মৎস্যজীবীর শেষে মৃত্যু

রাজ্য

 সঙ্গী মৎস্যজীবীরা রীতিমতো লড়াই করে সাথিকে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মুখ থেকে ছিনিয়ে আনলেও শেষরক্ষা আর হলো না। বাঘের আক্রমণে ঘায়েল হয়ে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুই হলো দীপক মণ্ডল (৫৭) নামে ওই মৎস্যজীবীর। সুন্দরবনে বাঘের সঙ্গে এই লড়াইয়ের রোমহর্ষক ঘটনাটি ঘটেছে সোমবার। সুন্দরবনের ভাইজুরি খালে মাছ এবং কাঁকড়া ধরার সময় মৎস্যজীবীদের সঙ্গে এই ঘটনা ঘটে। মঙ্গলবার গোসাবার মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে এই চাঞ্চল্যকর ঘটনার বিবরণ পাওয়া গিয়েছে, যা সুন্দরবনের বাদাবনের জঙ্গলের মানুষের জীবনযুদ্ধের নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। 
মৎস্যজীবীরা এদিন জানান, গোসাবার কুমিরমারির মৃধাঘেরি গ্রামের ৪ জন মৎস্যজীবী নৌকা নিয়ে ভাইজুরি খালে মাছ এবং কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন। সোমবার দুপুরে মাছ ধরার সময় জঙ্গল থেকে একটি বাঘ আচমকা নৌকার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। বাঘটি দীপক মণ্ডলের ঘাড়ে থাবা বসিয়ে জঙ্গলে টেনে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁর সঙ্গী অন্য মৎস্যজীবীরা সঙ্গে সঙ্গে বাধা দেয়। সমস্বরে চিৎকার এবং দাঁড় নিয়ে পালটা হামলা করলে শিকার ফেলে বাঘটি জঙ্গলে ফিরে যায়। কিন্তু ততক্ষণে বাঘের কামড়ে গুরুতর জখম হয়ে গেছেন দীপক মণ্ডল। রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে সঙ্গী মৎস্যজীবীরা নৌকা নিয়ে তড়িঘড়ি  ফেরার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফেরার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়। দীপক মণ্ডলের বাড়ি গোসাবার কুমিরমারি অঞ্চলের মৃধাঘেরি এলাকায়। খবর দেওয়া হয়েছে গোসাবায় সুন্দরবন কোস্টাল থানায়। 
প্রসঙ্গত, সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে বাঘের হানায় মৃত্যুর ঘটনা প্রায়শই ঘটে থাকে। সে ক্ষেত্রে সুন্দরবনের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে বাঘের হানায় কারও মৃত্যু হলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা রাজ্য সরকারের। কিন্তু অভিযোগ, অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয় না। উল্লেখ্য, বর্তমানে বাঘের হানায় মৃত্যু হলে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। এতদিন বন দপ্তরের তরফে যুক্তি দেওয়া হতো, সুন্দরবনের জঙ্গলকে দু’টি ভাগ করা হয়েছে। বাফার এরিয়া এবং কোর এরিয়া। বাফার এরিয়ায়  মৎস্যজীবীদের মাছ-কাঁকড়া ধরার অনুমতি থাকলেও কোর এরিয়ায় ঢুকে মাছ ধরার কোনও অনুমতি নেই। আর সেখানে মৃত্যু হলে ক্ষতিপূরণও দেওয়া হয় না। তাই বাঘের হানায় অনেক মৃত্যুর ক্ষেত্রেই পরিবার কোনও ক্ষতিপূরণ পায়নি। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য ২০২৩ সালের অক্টোবরে একটি মামলায় নির্দেশ দিয়েছেন, গভীর জঙ্গল হোক বা বাইরের এলাকা সুন্দরবনে বাঘের হামলায় কারও মৃত্যু হলেই ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এই নির্দেশ মেনে বাঘের হানায় সমস্ত মৃত্যুর ক্ষেত্রেই  বন দপ্তরের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা। 
প্রশাসনের তরফ থেকে বারবার মৎস্যজীবীদের গভীর জঙ্গলে না যাওয়ার জন্য সতর্ক করা হয়। তা সত্ত্বেও পেটের তাগিদে সুন্দরবনে মাছ-কাঁকড়া ধরতে গিয়ে প্রায়ই বাঘের হামলায় মৎস্যজীবীদের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গত কয়েকমাসে বাঘের হামলায় মৃত্যু হয়েছে বেশ কয়েকজন মৎস্যজীবীর। অনেক ক্ষেত্রেই দেহ টেনে নিয়ে গভীর জঙ্গলে চলে গিয়েছে বাঘ। আবার অনেক ক্ষেত্রে বাঘের মুখ থেকে মৎস্যজীবীদের ফেরানো গেলেও বাঁচানো সম্ভব হয়নি। সোমবারের ঘটনাটির ক্ষেত্রেও এমনটাই ঘটেছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment