নানা রকমের তথ্য পরিসংখ্যান বানিয়ে মোদী সরকার দেখানোর চেষ্টা করুন যে তাঁর আমলে নাকি দেশের অর্থনীতি অনেক উন্নত হয়েছে, নানা ক্ষেত্রে অনেক নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, মানুষের আয় বেড়েছে তাই খরচের সামর্থ্য বেড়েছে, দরিদ্রের সংখ্যা ও দারিদ্রের হার কমে গেছে ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু বাস্তবের মাটিতে মানুষ এমনকি বিশেষজ্ঞরাও তার মিল খুঁজে পাচ্ছেন না। পারিবারিক ভোগব্যয় সমীক্ষা করে দেখা হয়েছে গ্রামে ও শহরে মানুষের মানুষের মাথাপিছু ব্যয় অনেকটা বেড়ে গেছে। এমনকি তুলনামূলকভাবে শহরের থেকে গ্রামের মানুষের খরচ বেশি করার গ্রাম-শহরের মধ্যে মাথাপিছু ভোগ ব্যয়ের ব্যবধান কমেছে। এটাও দেখানো হয়েছে এখন গ্রামের গরিব মানুষও খাদ্যের থেকে অন্য খাতে ব্যয় বেশি করছেন। আবার আর একটি রিপোর্ট তুলে ধরে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী দাবি করেছেন তাঁর আমলে ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার উপরে উঠে এসেছেন। প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী যে গতি দেশে দারিদ্রের অবসান ঘটছে তাতে মোদীর তৃতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্ব পার হবার আগেই দেশ দারিদ্রমুক্ত হয়ে যাবে। অর্থাৎ উন্নত ও বিকশিত ভারতের পথে একটা বড়সড় ধাপ অতিক্রম করে ফেলবেন।
নিম্ন আয়ের প্রান্তিক মানুষ সবদেশেই তাদের আয়ের সর্বাধিক খরচ করেন খাদ্যের পেছনে। তারপর আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য মৌলিক প্রয়োজন যেমন বাসস্থান, বস্ত্র ইত্যাদির পেছনে একটু একটু করে খরচ বাড়ান। একই সঙ্গে চলতে থাকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে খরচ বৃদ্ধি। এটাই সমাজ বিকাশের ঐতিহাসিক প্রবণতা। মোদী সরকারের দাবি অনুযায়ী দেশে যদি মানুষের রুজি-রোজগার বাড়ে তাহলে অবশ্যই তাদের জীবনযাত্রার মানও উন্নত হবে। আর জীবনযাত্রার মানবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে জীবনবোধ। তাদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য চেতনা বাড়ে। অর্থাৎ যেভাবে জীবনযাপন করলে রোগভোগ কমতে পারে সেদিকে সাধ্যমতো নজর দেবার চেষ্টা করেন। আবার গুরুত্ব দেন সন্তানদের শিক্ষার দিকে। জীবনের অভিজ্ঞতায় তারা উপলব্ধি করেছেন লেখাপড়া না জানলে সামাজিক অবস্থান যেমন উন্নত হয় না তেমনি ভালো কাজের সুযোগও মেলে না। তাই যেকোনও পরিবারই, তা সে যত দরিদ্রই হোক না কেন, চায় তাদের ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া শেখাতে।
এমতাবস্থা দারিদ্র যত কমবে, মানুষের আয় যত বাড়বে, খরচের সামর্থ্য যত বাড়বে ততই মানুষ ছেলেমেয়েদের বেশি বেশি করে স্কুলে পাঠাবেন এবং অবশ্য মাঝপথে স্কুল ছাড়ানোর কথা ভাববেন না। কিন্তু মোদী জমানায় দেখা যাচ্ছে দেশে জনসংখ্যা হু হু করে বাড়ছে, স্কুল বয়সের ছেলেমেয়েদের মোট সংখ্যা বাড়ছে অথচ স্কুলে ভর্তির সংখ্যা কমছে এবন মাঝপথে স্কুল ছেড়ে চলে যাবার হার অনেক বেড়ে গেছে। মোদী জমানার আগে দেশের সকল ছেলেমেয়েকে স্কুলে ভর্তি করানো এবং শেষ পর্যন্ত স্কুলে ধরে রাখার লক্ষ্যে শিক্ষার অধিকার আইন, ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত বাধ্যতামূলক শিক্ষা, মিড ডে মিল ইত্যাদি চালু হয়। এইভাবে সর্বজনীন শিক্ষা অভিযান চালিয়ে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুর সংখ্যা এবং স্কুল ছুটের সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব হলেও এখন ফের তা বাড়ছে। আর এক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হলো বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির তুলনায় মোদীর দল শাসিত রাজ্যগুলির হাল সবচেয়ে শোচনীয়। তারমধ্যে একেবারে খারাপ অবস্থায় আছে রাজস্থান, বিহার, আসাম এবং নিজের রাজ্য গুজরাট।
Comments :0