HIGH MADRASAH RESULT

ঘুরে ঘুরে বাবা কেনেন লোহা লক্কড়,
ছেলে আশিক হাই মাদ্রাসায় প্রথম

রাজ্য

High madrasah bengali news হাই মাদ্রাসায় প্রথম আশিক ইকবাল।

এই বছর হাই মাদ্রাসায় রাজ্যের মধ্যে প্রথম হয়েছে মুর্শিদাবাদের ভাবতা আজিজিয়া হাই মাদ্রাসার ছাত্র আশিক ইকবাল। দ্বিতীয় হয়েছে মুর্শিদাবাদেরই কোমনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্র নাসিরুদ্দিন মোল্লা। তৃতীয় হয়েছে মালদহের ফতেখানি বিএমএস হাই মাদ্রাসার ছাত্র মুক্তাদুর রহমান। হাই মাদ্রাসায় প্রথম স্থানাধিকারী আশিক ভবিষ্যতে আইএএস, দ্বিতীয় নাসিরুদ্দিন মোল্লা চিকিৎসক ও তৃতীয় মুক্তাদুর রহমান ভবিষ্যতে ভালো শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়। 


হাই মাদ্রাসায় রাজ্যে প্রথম আশিক ইকবাল মাদ্রাসার আবাসিক হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৮০। হস্টেলে নিয়মিত পড়াশোনার দেখভাল করতেন মাদ্রাসার শিক্ষকরাই। পঞ্চম শ্রেণি থেকে আশিক ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছে। 

আশিকের বাবা ইয়ামিন সেখ ভাঙাচোরা জিনিসের ব্যবসা করেন। কলকাতায় ঘুরে ঘুরে লোহালক্কড় কিনে বিক্রি করেন আড়তদারের কাছে। এইভাবেই টাকা জমিয়ে পড়াশোনা করিয়েছেন ছেলেকে। 

আশিকের মা হাবিবা বিবি বলেছেন, ‘‘খুব কষ্ট করে ছেলেকে মানুষ করেছি। বই, খাতা থেকে সব বিষয়ে মাদ্রাসার সহযোগিতা পেয়েছি।’’ 

আশিকের দুই বোন আছে। এক জন সপ্তম শ্রেণিতে, অন্যজন প্রথম শ্রেণিতে পড়ে। ভবিষ্যতে আইএএস অফিসার হতে যায় আশিক।


সীমান্তবর্তী গ্রামের মাটির বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করে হাই মাদ্রাসার মেধা তালিকায় দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছে কোমনগর হাই মাদ্রাসার ছাত্র নাসিরুদ্দিন মোল্লা। পেয়েছে ৭৭৫ নম্বর। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী বেনিপুরে নাসিরুদ্দিনের বাড়ি। পরিবারে রয়েছেন বাবা, মা, দাদা। 

নাসিরুদ্দিনের দাদা একজন পরিযায়ী শ্রমিক। কেরালায় বর্তমানে কাজ করছেন তিনি। দাদাই নাসিরুদ্দিনের পড়াশোনার খরচ চালান। নাসিরুদ্দিনের বাবা রুস্তম মোল্লা নিজে ছোট কৃষক। নিজের জমিতে ও অন্যদের জমিতে চাষের কাজ করে চালান সংসার। তিনি বলেন, ‘‘ছেলেকে ডাক্তারি পড়াতে চাই। কিন্তু আমার সামর্থ নেই। সরকারের সাহায্য চাইছি।’’

নাসিরুদ্দিন জানিয়েছে, মূলত সন্ধ্যে থেকে রাত অবধি পড়াশোনা করত সে। গৃহশিক্ষকদের মধ্যে বেশ কয়েক জন পড়িয়েছেন কোনও টাকা না নিয়েই। 
নাসিরুদ্দিনদের টালির চালে ছাওয়া মাটির বাড়ির দাওয়ায় এদিন ছিল আত্মীয়, প্রতিবেশীদের ভিড়। গ্রামের ছেলের সাফল্যে উচ্ছ্বসিত বেনিপুর। 

কোমনগর হাই মাদ্রাসা থেকে মাদ্রাসা বোর্ডের পরীক্ষা দিয়েছিল নাসিরুদ্দিন। সাফল্যের খবরে খুশি নাসিরুদ্দিনও। সাফল্যের পিছনে অবদান বাবা, মা, বড় ভাই ছাড়াও মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের, এলাকার শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। স্কুলে পড়াশোনার সঙ্গে বাড়ির কাজ, জমির কাজও করে নাসিরুদ্দিন। নাসিরুদ্দিনের মা ফিরোজা বিবি জানিয়েছেন, সারা দিনই পড়াশোনা করে ছেলে। বরাবরই পড়াশোনা করার জেদ ছেলের। বর্তমানে বর্ধমানের একটি মিশনে পড়াশোনা করছে নাসিরুদ্দিন।


মালদহের ফতেখানি বিএমএস হাই মাদ্রাসার ছাত্র মুক্তাদুর রহমান এই বছর হাই মাদ্রাসায় রাজ্যে তৃতীয় হয়েছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭৪। অত্যন্ত গরিব পরিবারের ছেলে সে। বাবা সাহাদাত হোসেন শারীরিকভাবে দুর্বল। কানেও কম শোনেন। একটি কাপড়ের দোকানে কাজ করেন। কিন্তু লকডাউনের সময়ে কাপড়ের দোকান বন্ধ থাকায় সাইকেল নিয়ে ঘুরে ঘুরে পেঁয়াজ, রসুন বিক্রি করতেন। 

মুক্তাদুর পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইলেও আর্থিক পরিস্থিতি আগামী দিনে তার সামনে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে, এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছে মুক্তাদুরের পরিবারের। তাই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সবার সহযোগিতা চাইছে মুক্তাদুর।


মেধা তালিকায় পঞ্চম স্থানে রয়েছে লালগোলার নসিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আইসিআর হাই মাদ্রাসার ছাত্রী সাদিয়া খাতুন। রাজ্যের হাই মাদ্রাসা পরীক্ষায় ছাত্রীদের মধ্যে প্রথম হয়েছে সে। সাদিয়ার প্রাপ্ত নম্বর ৭৭০। সাদিয়া বর্তমানে বীরভূমের একটি মিশনে পাঠরত। সাদিয়ার ভাই এম জি আসফাকুল্লাহ প্রথমে ওয়েবসাইটে সাদিয়ার সাফল্যের এই খবর দেখে বোনকে জানান। এই খবরে উচ্ছ্বসিত সাদিয়ার পরিবার। রঘুনাথগঞ্জের ইচ্ছেখালির লক্ষ্মীঝোলা গ্রামে বাড়ি  সাদিয়ার। এই খবরে খুশি সাদিয়ার মা সায়রা বানু বিবি। বাবা এম জি ওয়ালিউল্লাহ বাড়ির পাশের মসজিদের ইমাম। সাদিয়ার এই সাফল্যে খুশি এলাকাবাসীও।


এদিকে ফাজিল পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে ফাহিম আখতার। তার প্রাপ্ত নম্বর ৫৬৫। ফাহিম ফুরফুরা ফাতেহাহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে রাজ্যে প্রথম হয়ে গোটা ফুরফুরা শরীফের মুখ উজ্জ্বল করেছে। ফাহিমের অসাধারণ ফলাফলে গোটা পরিবার যেমন আনন্দে ভেসেছে, তেমনই উচ্ছ্বাসে ভরপুর তার মাদ্রাসাও। 

ফাহিমের বাবা নাসিম আখতার রেলে চাকরি করেন। মা মোবাসেরা বেগম গৃহবধূ। ফাহিম ছোট থেকেই অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র। ফুরফুরার বাসিন্দা ফাহিম পঞ্চম শ্রেণি থেকে ফুরফুরা ফাতেহাহিয়া সিনিয়র মাদ্রাসার ছাত্র। পঞ্চম শ্রেণি থেকেই প্রতি বছর সে ক্লাসে প্রথম হয়ে আসছে।

Comments :0

Login to leave a comment