Editorial

দায় তো পুলিশ মন্ত্রীর

সম্পাদকীয় বিভাগ

রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন যদি পূর্ণতা পায়, ক্রিমিনালরাই যদি শাসক রাজনীতির শক্তির ভিত্তি হয়ে ওঠে এবং তাতে যদি শাসক দলের ইচ্ছায় প্রশাসনিক মদত থাকে তখন একটা রাজ্যের পরিস্থিতি যে কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে আজকের পশ্চিমবঙ্গ তার সবচেয়ে জ্বলন্ত উদাহরণ। ক্ষমতার রাজনীতি যদি নীতিহীন আদর্শবর্জিত দুর্বৃত্তনির্ভর হয় এবং দুর্বৃত্তরাই যদি শাসক রাজনীতির চালিকাশক্তি হয়ে ওঠে তাহলে খুন-সন্ত্রাসের যে ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠে সেখানে শাসক দলেরই রেহাই মেলে না। ক্ষমতায় আসার পরই শুরু হয়েছিল সরকারি ছত্রছায়ায় বিরোধী বিশেষ করে সিপিআই(এম)-কে নিকেশ করার অভিযান। এখন তা ছড়িয়ে পড়েছে শাসক দলের অভ্যন্তরেও। ক্ষমতার মধু কে বে‍‌শি খাবে, লুটের মাল কার ঘরে বেশি উঠবে, কার নেতৃত্বে বা অঙ্গুলি হেলনে চলবে লুঠতরাজ তাকে কেন্দ্র করেই শুরু হয়েছে খুনের নয়া পর্যায়। সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন জেলায় একের পর এক খুন হয়ে যাচ্ছে শাসক দলের নেতা-কর্মীরা। কোনও রাজনৈতিক রেষারেষি বা রাজনৈতিক সংঘর্ষে এসব খুন হচ্ছে না। হচ্ছে একবারে পেশাদারি কায়দায়। রীতিমতো পেশাদার খুনি ভাড়া করা হচ্ছে অথবা নিজেরাই আগ্নেয়াস্ত্র জোগাড় করে পেশাদার খুনি হয়ে উঠছে। তৃণমূল জমানায় রাজ্যে সর্বত্র যেভাবে বেআইনি অস্ত্রের ভাণ্ডার বেড়ে চলেছে তাতে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ঘোর সঙ্কটে।
সর্বশেষ ঘটনায় মালদহ শহরে খুন হয়ে গেছে শাসক দলের জেলা সহ সভাপতি এবং নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। প্রকাশ্য দিবালোকে শহরের জনবহুল রাস্তায় রীতিমতো বন্দুক হাতে পেছন থেকে তাড়া করে নিজের কারখানার সামনেই গুলি করে খুন করেছে তৃণমূল নেতাকে। আইন শৃঙ্খলা কতটা খারাপ হলে সকলের সামনে শাসক দলের নেতাকেই খুন করা যায়। খুনিরাও সম্ভবত জানে তারা ধরা পড়বে না, আর পড়লেও বি‍‌শেষ কিছু হবে না। খুনিদের মাথার উপর নির্ভয়ের হাত না থাকলে এতটা দুঃসাহস তারা কখনই দেখাতে পারতো না।
ঘটনার অব্যবহিত পরেই মুখ্যমন্ত্রী পুলিশের গাফিলতিকেই দায়ী করেছেন। পরে আরও এক ধাপ এগিয়ে মালদহ জেলার পুলিশ সুপারের অপদার্থতার জন্য এমন কাজ হয়েছে বলে দেন। মুখ্যমন্ত্রীর মতে কোথায় কি হচ্ছে তার আগাম খবর রাখার কথা গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দারা কোনও খবরই রাখে না। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা অনুযায়ী জেলার ঘটনার দায় বর্তায় পুলিশ সুপারের উপর। তাহলে এমন এক অপদার্থ সুপারকে ঐ পদে বসিয়েছিল কে? তিন বছর ধরে তিনি ঐ পদে বহালই বা থাকলেন কি করে? রাজ্যে খুন-সন্ত্রাস মোকাবিলা করে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন এবং আইনের শাসন বলবৎ করার দায়িত্ব অবশ্যই পুলিশের। নিজেদের খুশিমতো চলে না, তাদের চালায় সরকার। সরকার যখন যেমন নির্দেশ দেয় সেভাবেই কাজ করতে হয় পুলিশকে। সরকারের ইচ্ছা-অনিচ্ছা এবং প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটে পুলিশের কাজের মধ্য দিয়ে। সরকার তথা পুলিশ মন্ত্রী যদি চান রাজ্যে কাথায় কারও কাছে বেআইনি অস্ত্র থাকবে না তাহলে পুলিশ অবশ্য তন্নতন্ন করে খুঁজে সব বেআইনি অস্ত্র উদ্ধার করবে, অস্ত্রের সব গোপন ডেরা নির্মূল করবে, বেআইনি অস্ত্র কারখানা ধ্বংস করবে। বাস্তবে তার কিছুই হয় না। বাজি কারখানার আড়ালে কুটির শিল্পের মতো গড়ে উঠেছে বেআইনি অস্ত্রশিল্প। সবটাই শাসক দলের জ্ঞাতসারে। ক্ষমতা ধরে রাখতে, ভোটে জিততে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের দরকার শাসক দলের। তাই দুষ্কৃতী রাজ চলবে। খুন-সন্ত্রাসও চলবে। মুখ্যমন্ত্রী কোনও না কোনও পুলিশ কর্তার ঘাড়ে দায় চাপিয়ে সাধু সাজবেন। কিন্তু পুলিশি অপদার্থতার দায় সর্বাগ্রে তো পুলিশ মন্ত্রীর ওপরই বর্তায়।

Comments :0

Login to leave a comment