ISRO

এবার সূর্য মাপার অভিযানে যাবে ভারত

জাতীয় আন্তর্জাতিক

 ‘চাঁদের মাটিতে হেঁটে বেড়াচ্ছে ভারত’। বৃহস্পতিবার সকালেই টুইটার অধুনা এক্স হ্যান্ডেলে জানালো ইসরো। সাফল্যের গুচ্ছ পালকে মোড়া ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা অবশ্য এটুকুতেই থেমে থাকতে নারাজ। চাঁদে পা রাখার পর এবার সূর্যের পথে পাড়ি দিতে চলেছে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা (ইসরো)। আগামী মাসের শুরুতেই প্রথম বার সূর্যের পথে পাড়ি দেওয়ার তোড়জোর এখন জোরকদমে চলছে ইসরোয়। বৃহস্পতিবার ইসরোর সূত্রেই জানানো হয়েছে, সব কিছু ঠিক মতো থাকলে সূর্যের উপর নজর রাখতে সেপ্টেম্বরের ২ কিংবা ৩ তারিখ মহাকাশে উড়ে যাবে আদিত্য-এল ১ নামের মহাকাশযান।


গতকাল ঐতিহাসিক চন্দ্রাবতরণের পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বারে বারেই চন্দ্রযান-৩ সম্পর্কে বারে বারে আপডেট আসতে থাকে ইসরোর তরফে। বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বেশ কয়েকবার ইসরোর প্রধান এস সোমনাথও ল্যান্ডার বিক্রম আর রোভার প্রজ্ঞানের কাজকর্মের হালনাগাদ দিয়েছেন। জানানো হয়েছে, ‘সব কিছুই ঠিকঠাক চলছে। সমস্ত সিস্টেমও স্বাভাবিক রয়েছে।’ গতকাল চাঁদে নামার কয়েক ঘন্টা বিশ্রাম নেওয়ার পরই ল্যান্ডার বিক্রমের পেট থেকে চাঁদের মাটিতে নেমে এসেছিল রোভার প্রজ্ঞান। আজ সে চলাফেরা শুরু করে দিয়েছে বলে জানিয়েছে ইসরো।
ইসরো প্রধান জানিয়েছেন, ‘রোভারের চলাফেরা ‘খুবই ভালো’ চলছে।’ চাঁদে নামার সঠিক জায়গাটি প্রশ্ন করা হলে এস সোমনাথ জানিয়েছেন, ‘ল্যান্ডারটি সঠিকভাবেই কাঙ্ক্ষিত জায়গায় অবতরণ করেছে। ৪.৫ কিমি x ২.৫ কিমি যে জায়গাটা অবতরণের জন্য ঠিক করা হয়েছিল। একেবারে সঠিক ল্যান্ডিং হিসেবে এর মধ্যবিন্দুটিকে বাছা হয়েছিল। ল্যান্ডার বিক্রম সেই বিন্দুর ৩০০ মিটারের মধ্যে অবতরণ করেছে। তার মানে এটা চিহ্নিত জায়গায় মধ্যেই নেমেছে।’


ইসরো প্রধান আরো জানিয়েছেন, প্রজ্ঞানে দুটো যন্ত্র রয়েছে আর ল্যান্ডার বিক্রমেও তিনটি যন্ত্র রয়েছে। সেগুলি পরপর চালু হয়ে যাবে। এগুলি মূলত চাঁদের খনিজ গঠন, সেইসাথে চাঁদের বায়ুমণ্ডল ও পৃথিবীর ভূমিকম্পের মতো চন্দ্রপৃষ্ঠের কম্পন পরীক্ষা করবে। পরে সন্ধ্যায় ইসরো এক্স হ্যান্ডেলে জানিয়ে দেয়, ‘’সব কার্যকলাপ সময়সূচি মেনেই চলছে। সমস্ত সিস্টেমই স্বাভাবিক রয়েছে। ল্যান্ডার মডিউলের পেলোড ‘ইলসা’, ‘রম্ভা’ ও ‘চেস্ট’ আজ চালু হয়ে গেছে। প্রপালশান মডিউলের পেলোড ‘শেপ’ রবিবারই চালু হয়ে গিয়েছিল।’’ 
ইসরোর তরফে জানানা হয়েছে, রোভার প্রজ্ঞানে রয়েছে দুটি যন্ত্র। এর একটা হলো লিবস (এলআইবিএস)। এবং আরেকটা হলো এপিএক্সএস। লিবস বা লেজার ইনডিউসড ব্রেকডাউন স্পেক্ট্রোস্কোপের কাজ হলো চাঁদের মাটির রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করা। মানে, এর মাধ্যেমেই খতিয়ে দেখা হবে চাঁদের মাটিতে কী কী খনিজ পদার্থ রয়েছে। দ্বিতীয় যন্ত্র এপিএক্সএস অর্থাৎ আলফা পার্টিকেল এক্স-রে স্পেকট্রোমিটার। আপাতত প্রজ্ঞান চলাফেরা শুরু করেছে। এছাড়া ল্যান্ডার বিক্রমে বসানো যন্ত্রগুলির মধ্যে ‘ইলসা’র কাজ হলো পৃথিবীর ভূমিকম্পের মতো চন্দ্রপৃষ্ঠের কম্পন (লুনার সিসমিক অ্যাক্টিভিটি) পরীক্ষা করা। রম্ভা (আরএএমবিএইচএ)- রেডিও অ্যানাটমি অব মুন-বাউন্ড হাইপারসেনসেটিভ আয়নোস্ফিয়ার অ্যান্ড অ্যাটমোসফিয়ার। এই রম্ভা লেজার বিম ফেলে চাঁদের মাটির ছোট ছোট নুড়ি পাথর গলিয়ে ফেলার চেষ্টা করবে। তারপর তা থেকে উদ্গত গ্যাস বিশ্লেষণ করে চাঁদের প্লাজমা বা আয়নিত পরিমন্ডল পরীক্ষা করা হবে। তৃতীয় যন্ত্র চেস্ট বা চন্দ্রজ সারফেস থার্মো-ফিজিক্যাল এক্সপেরিমেন্টের মাধ্যমে তাপের পরিবহন, বিভিন্ন মৌলের তাপ পরীক্ষা করা হবে। প্রপালশান মডিউলের পেলোড ‘শেপ’-র কাজ হলো চাঁদ থেকে পৃথিবীর আলোর বর্নালী ও পোলারাইজেশনের বৈশিষ্ট্য নজর করা এবং তার সাথে মিলিয়ে বহিঃবিশ্বের গ্রহের সাথে পৃথিবীর মিল খুঁজে নেওয়া।


এই সমস্ত যন্ত্রপাতিগুলি আরো ১৩দিন ধরে কাজ করে যাবে। এস সোমনাথ জানিয়েছেন, চাঁদের মাটিতে ‘অনেক সমস্যাই’ রয়েছে, যা ইসরো এই প্রথম মালুম করছে। সোমনাথের কথায় বিশেষ করে চাঁদের ধুলিকণা আর তাপমাত্রা যা যা চলমান অংশগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে, সেটা নিয়েই বেশি ভাবতে হচ্ছে। আসলে চলমান জিনিসপত্রে সঙ্গে ধুলো জড়িয়ে আটকে যেতে পারে। চলন্ত অংশে ধুলো ঢুকে তাদের জ্যাম করতে পারে, সিস্টেমের বিয়ারিং কাজ নাও করতে পারে, মোটর কাজ নাও করতে পারে। এসব ছাড়ায় ইসরোর বিজ্ঞানীদের ভাবাচ্ছে চন্দ্রের ধূলিকণা। এটা ভূ-পৃষ্ঠের থেকে আলাদা। চাঁদে বাতাস না থাকায় সেই ধুলিকণা রোভারের উপকরণগুলিতে আটকে যেতে পারে, তার ফলে এর কাজকে প্রভাবিত করতে পারে। তবে এত সমস্যা থাকলেও ইসরো প্রধান হাল ছাড়তে নারাজ। বলছেন, ‘আসুন, দেখা যাক কী হয়! আমরা এর মুখোমুখি হব... সেজন্যই আমরা অনুসন্ধান করছি। যদি সবকিছুই জানা থাকে,, তাহলে আর মজা কী পড়ে থাকবে?’ বরং শুধুই চাঁদের আধবেলা (পৃথিবীর ১৪দিন) নয়, চাঁদে রাত কেটে আবার দিন ফিরলে নতুন করে বিক্রম-প্রজ্ঞান কাজ শুরু করতে পারে কিনা তেমন আশায় বুখ বাঁধছে ইসরো। সূর্য ডোবার সাথে সাথে চাঁদের দক্ষিণ মেরু ঘন অন্ধকারে ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি সেখানের তাপমাত্রা মাইনাস ১৮০ ডিগ্রিরও নিচে নেমে যাবে। ওই অবস্থায় কোনও যন্ত্রই কাজ করতে পারে না। এমনিতে ১৪দিনের প্রোগ্রাম করা থাকলেও এস সোমনাথের মতোই ইসরোর বিজ্ঞানীদের আশা সূর্যের আলো ফিরলে আবার সিস্টেমে কাজ করতে সক্ষম হতে পারে। 


এই নতুন আশার মতোই ইসরো এখন পরপর বেশ কয়েকটি অভিযানে নামার অপেক্ষায়। আগামী দিনে মঙ্গলযান ২- মঙ্গল অরবিটার মিশন, গগনযান- মানুষকে মহাকাশে পাঠানোর অভিযান তো রয়েছেই। কিন্তু একেবারে সামনেই রয়েছে সূর্য অভিযান- আদিত্য-এল ১। এই মাহকাশযানকে ল্যাগরেঞ্জিয়ান পয়েন্ট ১ বলে একটা জায়গা পর্যন্ত পাঠানো হবে। ওই জায়গায় পৃথিবী এবং সূর্যের মাধ্যাকর্ষণ থাকে না। ওই জায়গায় আদিত্য-এল ১ পৌঁছে গেলে সেখানেই থেকে যেতে পারবে আর সূর্যকে মাপতে পারবে। এখন সেই চেষ্টাই করছে ইসরো।

 

Comments :0

Login to leave a comment