বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন। বামফ্রন্টকে সরিয়ে ২০১১ সালে ক্ষমতা দখলের পর ২০১৬ এবং ২০২১ সালে আরও দু’দফায় ক্ষমতা ভোগ করছে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বে তৃণমূল। এরাজ্যে লুটে খাওয়া এবং অবৈধ উপায়ে করে খাওয়ার জন্য মমতা ব্যানার্জির সরকারের দ্বিতীয় কোনও বিকল্প নেই। তাই লুটতন্ত্র বজায় রাখতে হলে এবং চোর-গুন্ডা, দুষ্কৃতী-অপরাধী, ধর্ষক-খুনিদের নিরাপত্তা দিতে হলে এই সরকারকে যেভাবেই হোক ফের ক্ষমতায় রাখতে হবে। ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন তাই তৃণমূল নেতা-কর্মী তথা অসৎ, দুর্নীতিবাজ, তোলা-কাটমানি-সিন্ডিকেট, চোর-লুটেরাদের অস্তিত্বের সঙ্কট। যেভাবেই হোক, যত ঘৃণ্য-কদর্য উপায়েই হোক বা যত হিংস্র বর্বরতার পথেই হোক মমতা ব্যানার্জির সরকারকে পরের ভোটে ফের ‘জিতিয়ে’ আনতে সব ধরনের ষড়যন্ত্রের জাল বোনা শুরু হয়ে গেছে।
সম্প্রতি দিল্লিতে ভোটে আপ সরকারের পতনের ঘটনায় সিঁদুরে মেঘ দেখতে শুরু করেছেন মমতা ব্যানার্জিরা। একেবারে বুথ থেকে সর্বোচ্চ স্তর পর্যন্ত তৃণমূলের সব নেতারাই জানেন গণতন্ত্রের শর্ত মেনে মানুষের উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রেখে যদি অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সংগঠিত করা যায়, যদি মানুষ অবাধে ও নির্ভয়ে নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন তাহলে তৃণমূলের জেতার বা ফের ক্ষমতায় আসার সম্ভাবনা নেই। তাই ক্ষমতায় ফেরার একমাত্র রাস্তা ভোট লুট করা। অশান্তির আগুন জ্বালিয়ে, বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্য সৃষ্টিকরে। ভয় আর সন্ত্রাসের পরিবেশ তৈরি করে, মানুষকে ভোটকেন্দ্র মুখী হতে না দিতে ভোট কেন্দ্র মুখী না দিয়ে ভোট লুট করাই তাদের জয়ের একমাত্র রাস্তা। তেমনি এই লুটের প্রতিবাদের যাতে কোনও সুযোগ না থাকে তারজন্য ভোটকেন্দ্র থেকে বিরোধী এজেন্টদের মেরে ধরে ভয় দেখিয়ে তাড়াতে হয়। এত কিছুর পরেও যদি জয় নিশ্চিত না হয় তাহলে লুট করতে হবে গণনা কেন্দ্রে। তৃণমূল এভাবেই জেতে এবং মমতা মুখ্যমন্ত্রী হন। মানুষের ভোটে তৃণমূলের জয় পুরোপুরি অসম্ভব।
আগামী ভোটেও এভাবেই তাদের জিততে হবে মোটামুটি এমন বার্তা সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে। সেইমতো প্রস্তুতিও শুরু হয়ে গেছে। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে যদি কোথাও সমবায়ের মতো ভোটেও তৃণমূলের পরাজয় ঘটে সেটা তৃণমূলের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই আগামী ভোট পর্যন্ত যে কটি সমবায়ে নির্বাচন হবে সেখানে যেকোনও মূল্যেই হোক তৃণমূলকে জেতাতে হবে। কীভাবে জেতাতে হবে তার পূর্ণাঙ্গ চেহারা মেদিনীপুরের সমবায় নির্বাচনকে ঘিরে তৃণমূল দুষ্কৃতী আর দলদাস পুলিশের সমন্বয়ে মানুষ প্রত্যক্ষ করেছেন। সামান্য একটা সমবায় নির্বাচনেও বিরোধী শূন্য করে তৃণমূল একা দখল করতে চায়। বিরোধীরা প্রার্থী দিলে এবং ঠিকঠাক ভোট হলে তৃণমূল জিতবে না। তাই বামপন্থীদের মনোনয়ন আটকে হাজার হাজার বহিরাগত লোক জড়ো করে পুলিশে ছয়লাপ করে দিয়ে সি পি আই (এম) অফিসে তালা ঝুলিয়ে মেরে ধরে বামপন্থীদের মনোনয়ন আটকাতে বেপরোয়া তাণ্ডব চালানো হয়েছে। একই কায়দায় মনোনয়ন আটকাতে গিয়ে মুর্শিদাবাদের ডোমকলে বিরোধীদের তাড়া খেয়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আর যাদবপুরে হাজার চেষ্টা করেও বিরোধীদের ঠেকাতে না পেরে গোহারা হেরেছে শাসক তণৃমূল। মোট ৫৮টি আসনের মধ্যে ৫১টিতে বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে বামপন্থীরা। টেনেটুনে মাত্র ৮টি আসন পেয়েছে পিসি ভাইপোর দল। আর মোদী-যোগীর দল কোনোক্রমে ৮টি প্রার্থী দাঁড় করিয়ে সর্বসাকুল্যে ভোট পেয়েছে ৮টি। প্রার্থীরা নিজেদের ভোট ছাড়া আর কারও ভোট পাননি। এটাই এরাজ্যের বর্তমান অবস্থা। অতএব শেষতক লড়াইয়ের জেদ বজায় রেখে ক্রমশই মাঠে নামতে হবে বামপন্থীদের।
Comments :0