প্রতীম দে
৪-০
কোনও খেলার ফলাফল নয়। দিল্লি জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ছাত্র সংসদের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে সবকটি পদে জয়ী হয়েছে বাম ছাত্র সংগঠনের প্রার্থীরা। একটি আসন ও নিজেদের দখলে নিতে পারেনি বিজেপি ছাত্র সংগঠন এবিভিপি।
রবিবার ছিল ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফল ঘোষণা সময় যত এগিয়েছে তত পরিষ্কার হয়েছে এবিভিপি'র হারের চিত্র।
ছাত্র সংসদের সভাপতি পদে ৯২২ ভোটের ব্যবধানে জয়ী হয়েছেন ধনঞ্জয়। তিনি পেয়েছেন ২৫৯৮ টি ভোট।
সহ সভাপতি পদে জয়ী হয়েছেন বাম ছাত্র জোটের প্রার্থী এসএফআই নেতা অভিজিৎ ঘোষ। তিনি পেয়েছেন ২৪০৯ টি ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন বাম ছাত্র জোট সমর্থিত প্রার্থী প্রিয়াংশি আর্য। তাঁর সমর্থনে ভোট পড়েছে ২৮৮৭ টি।
জয়েন্ট সেক্রেটারি পদে জয়ী হয়েছেন মহম্মদ সাজিদ। তিনি পেয়েছেন ২৫৭৪ টি ভোট।
লোকসভা নির্বাচনের আগে দেশের অন্যতম সেরা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে বিজেপির ছাত্র সংগঠনের হার এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠন গুলির বিপুল জয় নতুন করে রাজনৈতিক বার্তা বহন করছে বলে অনেকে মনে করছেন।
চার বছর পর ছাত্র সংসদ নির্বাচন এর মধ্যে বেশ কয়েকবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে দিল্লির এই বিশ্ববিদ্যালয় কখনো বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বহিরাগতদের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন পড়ুয়ারা আক্রান্ত হয়েছেন এসএফআই নেত্রী ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ। একাধিকবার বিজেপি নেতা-নেত্রীর অভিযোগ করেছেন যে জেএনইউ আসলে দেশ বিরোধীদের বা দেশদ্রোহীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ স্বাধীনচেতা বাম মনোভাবাপন্ন উগ্র হিন্দুদের বিরুদ্ধে কথা বলা ছাত্র-ছাত্রীদের সরাসরি দেশবিরোধী তকমা দিয়েছে দেশের সরকার।
সম্প্রতি ‘জেএনইউ: জাহাঙ্গীর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি’ নামের এক সিনেমার পোস্টার ছড়োনোয় নেট দুনিয়া চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। সিনেমার নির্দেশক বিনয় শর্মা। আপাতত প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী সিনেমাতে অভিনয় করছেন সিদ্ধার্থ বোদকে, পীযূষ মিশ্র ও উর্বশী রৌতেলা সহ আরও বেশ কিছু চিত্রতারকা। লোকসভা নির্বাচনের আগে মিথ্যা প্রচার ও কুৎসা ছড়িয়ে, ‘কাশ্মীর ফাইলস’ বা ‘কেরালা স্টোরি’-র মতো এই ছবিও মানুষের মধ্যে বিভাজনের চাষ করতে ও সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিতে তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যেই বস্তার নিয়ে একটি ছবিতেও জেএনইউ’র বামপন্থার প্রতি টানকে আক্রমণ করা হয়েছে। দেশের মধ্যে প্রথম সারিতে থাকা এবং গোটা বিশ্বে গবেষণা আর পঠনপাঠনের জন্য সুপরিচিত জহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়কে কালিমালিপ্ত করাই এই সিনেমার মূল উদ্দেশ্য। দারিদ্র ও বেকারির মতো দেশের মূল সমস্যাগুলো থেকে সাধারণ মানুষের নজর ঘোরাতে এই সমস্ত প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সঙ্ঘ পরিবার ও বিজেপি’র আশ্রয়ে থাকা কিছু শিল্পী। এই পোষ্টার প্রকাশিত হওয়ার পর সোশাল মিডিয়ায় এমনটাই লিখছেন নেটিজেনদের একাংশ।
এসএফআই এর সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, "বিজেপি যেদিন থেকে দেশে ক্ষমতায় এসেছে তবে থেকে জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশ্বের সমাদৃত একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে তারা শেষ করে দিতে চেয়েছে। কারণ তারা চায় না যে কেউ তাদের প্রশ্ন করুক। কেউ তাদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলুক। সিনেমার মাধ্যমে, সামাজিক মাধ্যমকে ব্যবহার করে এই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রছাত্রীদের চরিত্রহরণের চেষ্টা হয়েছে। তাদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। অধ্যাপকদের ওপর আক্রমণ হয়েছে। অধ্যাপক হেনস্থা করা হয়েছে। কিন্তু এই সবের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রীদের যেই ঐক্যবদ্ধ লড়াই তা প্রতিফলিত হয়েছে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ফলাফলে। গোটা দেশের কাছে জেএনইউ এই বার্তা পৌঁছে দিল যে বিজেপি আরএসএস এর সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ লড়াই একমাত্র পথ।"
Comments :0