South Dinajpur

ধুঁকছে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বালুরঘাটের নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র

জেলা

দীর্ঘদিন তালা বন্ধ বালুরঘাট নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র। ছবি-অপূর্ব মন্ডল।

অপূর্ব মন্ডল - বালুরঘাট


কয়েক বছর আগে বর্তমান শাসক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের উদ্দোগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের টাকায় তৈরি  বালুরঘাটে "নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র" এখন একটা ভূতুড়ে বাড়ি। হয় না নাটক মঞ্চস্থ। নাট্য চর্চাও এখানে হয়না। এখন তালা বন্ধ শুধু দালান। আক্ষেপ বালুরঘাটের নাট্যকর্মী সহ নাট্যপ্রেমী দর্শকদেরও। এখানে প্রসেনিয়াম থিয়েটার যাকে চলতি ভাষায় মঞ্চ নাটক বলা হয় তার মঞ্চও তৈরি হয়নি। মুক্ত আঙ্গনের ফাঁকা জায়গা থাকলেও দর্শকের বসার কোন ব্যাবস্থা নেই। ফলে নাটকের শহর বালুরঘাটে মূল ধারার নাটক এখানে হয়না। কয়েক বছরেই ভবনের পলেস্তারা উঠে যাচ্ছে, শ্যাওলা পড়েছে, ফাটল ধরেছে অনেক জায়গায়। কোটি কোটি টাকা ব্যয় হলেও কিছুই লাভ হলোনা নাটকের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন নাট্য সংস্থা সহ সাধারণ দর্শকেরও।
২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের তরফে বালুরঘাট ব্লকের অমৃত খন্ড পঞ্চায়েতের চকবাখর এলাকায় নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরি হয়। প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে তৈরি হয় বালুরঘাট নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রের বিশাল বিল্ডিং।  কিন্তু উদ্বোধনের পর থেকেই বন্ধই থেকে যায়। পরের বছরই করোনা হানা দেয়। করোনা রোগীদের শুশ্রুসার জন্য শহর থেকে দূরে প্রায় জনমানব শুন্য সরকারি দালানটিকে কোভিড হাসপাতাল হিসেবে ব্যাবহার করা। দীর্ঘদিন কেন্দ্রটি আর নাটক বা সংস্কৃতি চর্চার জন্য ব্যবহার করা হয়নি। ফলে নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রে ধুলো জমতে থাকে। অব্যাবহারে নাট্য চর্চার সঙ্গে যুক্ত ব্ল্যাক বক্স সহ মুভিং লাইট সিষ্টেম এখন অকেজো। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর প্রশাসনের মুখ রক্ষার্থে ২০২২ সালে কয়েক দিনের জন্য জেলার কিছু নাট্য সংস্থাকে নিয়ে নাটক মঞ্চস্থ হয়। কিন্তু সেখানেও চাপা ক্ষোভ নজরে পড়ে। কারণ মুক্তমঞ্চ ও ব্ল্যাকবক্স থাকলেও বহু মূল্যবান যন্ত্রাংশ শুধু দেখ ভালের অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে রয়েছে। মঞ্চ নাটকের জন্য কোনও ব্যবস্থা ছিল না। ভবন সংলগ্ন ফাঁকা জায়গায় অস্থায়ী মঞ্চ ও ছাউনি গড়ে দেওয়া হয়েছিল। তার ওপরেই নাটক মঞ্চস্থ করে অধিকাংশ নাট্য দল। দর্শক ছিল নগন্য। 
নাট্য প্রেমী অনুপ রঞ্জন দাস বলেন, ‘‘বালুরঘাটে পুরোনো নাট্য মঞ্চগুলি অর্থাভাবে ধুঁকছে। নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র যে স্থানে হয়েছে সেই জায়গাটির পরিবেশ ভদ্রস্থ নয়। দিনের বেলাতেই ওদিকে কেউ যেতে চায়না’’। 
ভারতীয় গননাট্য সংঘের বালুরঘাট শপথ শাখার কর্নধার হারান মজুমদার বলেন, ‘‘উদ্বোধনের পরেই বলা হয়েছিল এখানে নাটক নির্মাণ সহ নাটকের প্রশিক্ষণ মুলক কর্মশালা হবে। নাটকের মান বৃদ্ধি করতে এই ভবন নাকি  কার্যকর ভূমিকা নেবে। কিন্তু কোনও কর্মকাণ্ড নেই। হয়না কর্মশালা। তিনি বলেন সব চেয়ে মূল ব্যাপারটি হলো নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্রের জায়গা নির্বাচনের পরিকল্পনা। স্থান নির্বাচন একেবারেই ঠিক হয়নি। বালুরঘাট শহর থেকে দূরে, সরু রাস্তা সহ যোগাযোগ ব্যাবস্থা ভালো নেই। রাতে স্থানীয় পরিবেশে ভালো থাকে না’’। 
নাট্য পরিচালক ও অভিনেতা মনোজ গঙ্গোপাধ্যায় জানান, ‘‘'যে লক্ষ্য নিয়ে নাট্য উৎকর্ষ কেন্দ্র তৈরি হয়েছিল, তা পুরোপুরি ব্যর্থ। বলা হয়েছিল এখানে কর্মশালা হবে, বাইরের নাট্যদল এসে বালুরঘাটের নাটকের সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ঘটবে। সেইসব কিছুই হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যাবহারে কেন্দ্রের বাতানুকুলিন যন্ত্র নষ্ট হয়ে গিয়েছে’’।
এই প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) বালুরঘাট এরিয়া সম্পাদক অনিমেষ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘বর্তমান শাসক দলের অপরিকল্পিত বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে এটাও একটা নিদর্শন। বালুরঘাটের নাট্য কর্মী ও নাট্য প্রেমীদের মতামত না নিয়েই এটা তৈরি হয়েছে। নাটকের নামে জনগণের টাকার অপচয় করা হয়েছে’’। 
জেলা তথ্য ও সংস্কৃতি আধিকারিক রাজেশ মন্ডলের মতে, 'কেন্দ্রটি নাটক নির্মাণ কাজে ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। জেলা প্রশাসনের তরফে সেখানে আগামীতে নাট্য প্রশিক্ষণ মূলক কর্মশালার আয়োজন করার কথা ভাবা হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment