একের পর এক পরীক্ষা দূর্নীতির জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় পরীক্ষা নিয়ামক সংস্থা এনটিএ। এই দাবিতে বৃহস্পতিবার দেশজুড়ে ছাত্র ধর্মঘটের ডাক দেয় এসএফআই। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাসের বক্তব্য, সারা দেশ জুড়ে ছাত্র ছাত্রীরা বিপুল সংখ্যায় এই ধর্মঘটে অংশ নিয়ে আমাদের দাবির যথার্থতা প্রমাণ করেছেন।
এসএফআই’র তরফে বলা হয়েছে, পরীক্ষা বিভ্রাট এবং দূর্নীতির জন্য দায়ী এনটিএ বাতিল করতে হবে। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকেও যাবতীয় অব্যবস্থার দায় নিয়ে পদত্যাগ করতে হবে।
প্রসঙ্গত, জুন মাসে সর্বভারতীয় ডাক্তারি প্রবেশিকা পরীক্ষা নিটে দূর্নীতির অভিযোগ সামনে আসে। বিহার পুলিশের তদন্তে প্রমাণিত হয়, পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়েছিল। প্রশ্নফাঁস চক্রে একাধিক বিজেপি ঘনিষ্ঠ প্রভাবশালীর নাম জড়িয়েছে। সমালোচনার মুখে নিটের প্রশ্নফাঁস কান্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিতে বাধ্য হয় কেন্দ্র। তদন্তে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কারচুপি এবং ফাঁসের অভিযোগের প্রমাণ মিললেও এখনও ২০২৪ সালের নিট বাতিল করেনি কেন্দ্র।
নিটের কায়দায় পিএইচডি’র জন্য হওয়া নেট পরীক্ষা নিয়েও সঙ্কট তৈরি হয়েছে। জুন মাসে পরীক্ষা নেওয়ার পরে নেট বাতিল করেছে এনটিএ। এনটিএ’র দাবি, নেটের প্রশ্ন ডার্ক ওয়েবে ঘোরাফেরা করছিল। শেষ মুহূর্তে বাতিল করা হয় ডাক্তারির স্নাতকোত্তরের প্রবেশিকা।
এই আবহে এসএফআই’র দাবি, সাম্প্রতিক নেট এবং নিট পরীক্ষায় বসা পড়ুয়াদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কেন্দ্রকে। একইসঙ্গে ছাত্রদের দাবি, কেন্দ্রীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজে ভর্তির প্রক্রিয়া বাতিল করতে হবে। এই প্রক্রিয়ার ফলে প্রবেশিকা মাফিয়াদের হাত শক্তিশালী হচ্ছে। একইসঙ্গে পিএইচডি’র নেটের নম্বর বাধ্যতামূলক করার বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে এসএফআই। এর পাশাপাশি আইআইটি, টাটা ইন্সটিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্স, হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মত প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়ে আরএসএস-বিজেপি বিরোধী পড়ুয়াদের উপর দমনপীড়ন চালানোর বিরুদ্ধেও সরব হয়েছে এসএফআই। সমস্ত দাবি ঠাঁই পেয়েছে ধর্মঘটের দাবি সনদে।
বৃহস্পতিবার উত্তর প্রদেশের সুলতানপুরে ধর্মঘটের সমর্থনে বড় মিছিল করেন ছাত্ররা। মিছিল শেষে দীর্ঘক্ষণ পথ অবরোধ করা হয়। তামিলনাডুর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গেটে পিকেটিং করে ধর্মঘট সফল করেন এসএফআই কর্মী সমর্থকরা। কর্ণাটকের একাধিক জায়গায় বড় জমায়েত করে অবরোধ করেন ছাত্ররা। প্রশাসন বাধ্য হয় দাবি সনদ গ্রহণ করতে।
দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটের সামনে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর কুশপুতুল জ্বালান ছাত্ররা। সেখানে বক্তব্য রাখেন ময়ূখ বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘‘গোটা অব্যাবস্থার দায় নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে। তাঁকে অবিলম্বে পদত্যাগ করতে হবে।’’
পন্ডিচেরী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও ব্যপক সফল হয়েছে ছাত্র ধর্মঘট। এনটিএ এবং নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি বাতিলের দাবিতে দিনভর অবস্থান চালান বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএফআই কর্মী সমর্থকরা। ত্রিপুরার আগরতলায় বিক্ষোভ মিছিল করে এসএফআই এবং টিএসইউ। রাজ্যের শিক্ষা বিভাগের সদর দপ্তর শিক্ষা ভবনের সামনে কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রীর কুশপুতুল পোড়ানো হয়। শান্তিপূর্ণ সেই অবস্থানে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিজেপি সরকারের পুলিশ। আন্দোলনকারীদের গ্রেপ্তার করা হয়।
এদিন সকাল থেকে পশ্চিমবঙ্গের ২৩টি জেলাতেই পথে নেমেছিলেন এসএফআই কর্মী সমর্থকরা। পড়ুয়াদের সমর্থন থাকায় এদিন রাজ্যের সিংহভাগ স্কুল ও মাদ্রাসা বন্ধ ছিল। কলকাতা, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, উত্তরবঙ্গ, কল্যাণী, বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতেও ভালো প্রভাব দেখা গিয়েছে ধর্মঘটের। পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলা কলেজের গেটে পিকেটিং চলাকালীন এসএফআই কর্মীদের উপর হামলা চালায় তৃণমূল। আক্রমণ মোকাবিলা করেই ধর্মঘট পালন করে এসএফআই।
Comments :0