৬দিন পার হতে যাচ্ছে। এখনও অধরা সন্দেশখালির বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান সহ বাকি অভিযুক্তরা। যা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে উঠছে ধারাবাহিক নিষ্ক্রিয়তা। রাজ্য পুলিশের ডিজির কড়া বার্তা সত্ত্বেও কেন শেখ শাজাহানকে ধরতে এত অনিহা দেখাচ্ছে পুলিশ? বুধবার এই প্রশ্নই এখন সন্দেশখালির মুক্তির স্বাদ পেতে চাওয়া সাধারণ মানুষের। যদিও এদিন সন্দেশখালিতে গিয়ে দেখা গেল পুলিশের নাকা চেকিং শুরু হয়েছে। ধামাখালি লঞ্চ ঘাট থেকে সরবেড়িয়া পর্যন্ত চলছে এই নাকা চেকিং। সরবেড়িয়ার আকুঞ্জিপাড়ায় যেখানে শেখ শাজাহানের বসতবাড়ি সেই এলাকায় দেখা যায় পুলিশের বাড়তি তৎপরতা। যাতায়াতকারী বাস, অটো, এলাকায় শিক্ষকতা করতে আসা তাদের গাড়ি থামিয়ে চলছে নাকা চেকিং। শাজাহান ছদ্মবেশে পালিয়ে যেতে পারে যাত্রী সেজে সেই কারণেই নাকি নাকা চেকিং। যা নিয়ে রসিকতা করার পাশাপাশি যাত্রীদের অনেকেরই বক্তব্য অতীতে বহু ঘটনা ঘটে গেছে। তখন নাকা চেকিং দেখি নি। এটা পুলিশের আই ওয়াশ বললেন কেউ কেউ। শাহজাহান কী আদৌ এলাকায় রয়েছে। এই প্রশ্ন স্থানীয়দের। আত্মগোপনে থাকা শেখ শাহজাহানের টিকি যাতে খুঁজে না পাওয়া যায় সেকারণে তার মোবাইল ফোন বন্ধ। তার নিজের তৈরি সশস্ত্র কোবরা বাহিনীর মাধ্যমে বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ রেখে চলেছেন বলে সূত্রের খবর। এছাড়া তৃণমূল কংগ্রেসের সন্দেশখালি- ২ব্লকের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য শিবুপ্রসাদ হাজারার সাথেও তিনি নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন বলেও সূত্রের খবর।
অন্যদিকে ইডির উপর হামলায় তৎপর পুলিশ। বুধবার সন্দেশখালি, বনগাঁর ঘটনায় অভিযোগকারী ইডির ডেপুটি ডিরেক্টরের অভিযোগের বয়ান নথিভুক্ত করতে বসিরহাট পুলিশ জেলার ডি এস পি সানন্দা গোস্বামী ও বনগাঁ পুলিশ জেলার ডি এস পি দীপেন্দ্র তামাং আসেন সিজিও কমপ্লেক্সে ইডি দপ্তরে। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষায় থেকে ফিরে যেতে বাধ্য হন তারা। বসিরহাট পুলিশ জেলার ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চের ডিএসপি সানন্দা গোস্বামী ইডি দপ্তর থেকে বেড়িয়ে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, তিনবার নোটিশ পাঠানো হয়েছিল অভিযোগকারী ইডি আধিকারীককে। তিনি হাজির না হওয়ায় এদিন এখানে আসা। তিনি অন্যকাজে ব্যস্ত থাকায় বয়ান রেকর্ড করা যায় নি। অপরাধীদের গ্রেপ্তার না করে আক্রান্ত রক্তাক্ত ইডির আধিকারীকের বয়ান রেকর্ডে পুলিশের উৎসাহ নিয়ে ইতিমধ্যেই একাধিক প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
অন্যদিকে এদিন সন্দেশখালির ঘটনায় ন্যাজাট থানার পুলিশের পক্ষ থেকে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ভারতীয় দন্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ১৪৯, ৩৫৩, ৩২৩, ৫০৬ ও ৩৪ ধারা সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। যদিও ন্যাজাট থানায় ইডির দায়ের করা এফ আই 'র কপি এখনও পর্যন্ত হাতে না পেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতে হলো ইডিকে। বিচারক জয় সেনগুপ্ত মামলা দায়েরের অনুমতি দিয়েছেন বলে আদালত সূত্রে খবর। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি। অন্যদিকে ইডির স্ক্যানারে রেশন দুর্নীতি কান্ডে গ্রেপ্তার হওয়া শঙ্কর আঢ্যের পরিবার।
এদিকে দিল্লিতে ইডির সদর দপ্তরে পাঠানো ইডির রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছিল শেখ শাহজাহানের বাড়িতে মজুত করে রাখা বিপুল অংকের টাকা এবং রেশন দুর্নীতি কান্ডে গুরুত্বপূর্ণ নথি রাখা আছে। নোটিশ দিয়ে তল্লাশিতে গেলে আগেভাগে সেগুলি সরিয়ে ফেলতে পারে অনুমান করেই শেখ শাহজাহানের বাড়িতে শুক্রবার ভোরে আচমকা তল্লাশিতে যায় ইডি আধিকারীকরা। পরবর্তীতে ঘটে যায় নানান ঘটনা। ঘটনার মূল অভিযুক্ত বেপাত্তা শেখ শাহজাহানের গ্রেপ্তারি নিয়ে চলছে টালবাহানা। ছয় ছয়টি দিন ধরে রচিত হচ্ছে একাধিক সম্ভাবনা গল্পের অবতারনা। তারপরও কী শাহজাহানের বাড়িতে ইডির পাঠানো রিপোর্ট অনুযায়ী মজুত বিপুল অংকের টাকা, রেশন দুর্নীতি কান্ডে গুরুত্বপূর্ণ যাবতীয় নথি রেখে দেওয়া হয়েছে? এখনও সন্দেশখালির ৯টি দ্বীপাঞ্চলের বহু গ্রাম কার্যত দুর্গম এলাকা বলে পরিচিত। ছয়টি দিন নেহাত কম সময় নয়। তবে কী ইডি পুলিশের চাপানউতর, রাজনৈতিক তরজার মাঝে মজুত করে রাখা বিপুল পরিমাণ টাকা গুরুত্বপূর্ণ নথি নির্জন কোন দ্বীপের গোপন কোন আস্তানায় লুকিয়ে ফেলা হলো না তো? এই প্রশ্নও তুলেছেন লোনা মাটির দেশ। পাশাপাশি ফের তল্লাশিতে গেলে ফের আক্রান্ত হতে পারেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। কেন একথা বলেছেন সেখানকার মানুষ? কারণ হিসাবে তারা বলেন, দীর্ঘ একযুগ ধরে পুলিশের নজরদারির অভাবে শেখ শাহজাহান বিপুল আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র সহ একাধিক অস্ত্র মজুত করে রেখেছে। তার নিজের হাতে গড়া সশস্ত্র কোবরা বাহিনীর সদস্য সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ফলে তল্লাশিতে এলে ফের সংঘর্ষের মুখোমুখি হতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে। শেখ শাহজাহানকে গ্রেপ্তার করলে শুধু হবে না। বারুদের স্তুপের উপর সন্দেখালিতে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অস্ত্র উদ্ধার জরুরি। বুধবার সন্দেশখালির বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের সাথে কথা বলে উঠে এলো এমনই কিছু তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়।
Comments :0