RG Kar Student Death

২২ দিন পেরিয়েছে

রাজ্য ফিচার পাতা

বাইশ দিনকে সম্ভবত এর আগে এত ‘দীর্ঘ সময়’ মনে হয়নি রাজ্যবাসীর। এই শহর, শহর ছাড়িয়ে জেলা, গ্রাম, গঞ্জ, প্রত্যন্ত এলাকার এমন কোনও জনপদ নেই যেখানে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’র  সুর শোনা যায়নি। এমন কোনও পেশার মানুষ নেই যারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে শহরের পিচ রাস্তা থেকে মেঠো আলপথে একবার অন্তত পা মেললানি। মধ্যরাতে রাস্তায় বাড়ির গৃহবধূ থেকে শিশুকন্যা, ন্যায় বিচারের দাবি। গান, কবিতা, নতুন নতুন সৃষ্টি, প্রতিবাদের কত নতুন অচেনা ধারায় ন্যায় বিচারের দাবিকে তুলে ধরা— এসবই গত দু’সপ্তাহ দেখেছি আমরা, দেখেছি সীমানা ছাড়িয়ে দেশের বিস্তীর্ণ প্রান্তে এমনকি বিদেশেও।
একটি ঘটনার অভিঘাত বদলে দিয়েছে নিস্তরঙ্গ নাগরিক জীবনকেও। এই ঘটনা আরও বেআব্রু করেছে শাসকের চেহারা। নাগরিক আর শাসকের মধ্যকার ফারাক আরও চওড়া হয়েছে।
একটি সরকারি হাসপাতাল। সেখানে কর্মরত তরুণী চিকিৎসক। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দু’চোখে হাজারো স্বপ্ন। সেই কর্মক্ষেত্রে হাসপাতালের ভিতরেই ধর্ষণ করে নৃশংস খুন। সরকারি হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসক ধর্ষণের শিকার হয়ে খুন হচ্ছেন—  গোটা দেশে সাম্প্রতিক অতীতে এমন ঘটনার নজির নেই। এটা কী নিছকই একটা অপরাধ? সরকারের কাছে একটা কেবলই আরেকটি ঘটনা। আর জেগে ওঠা জনগণের কাছে এটা অস্ত্বিত্বের প্রশ্ন। কর্মক্ষেত্রে একজন মহিলা চিকিৎসকের যদি এই পরিণত হয় তাহলে কে নিরাপদ?
প্রশ্ন করছে সমষ্টির সঙ্ঘবদ্ধতা। নিছক হুঁশিয়ারি, পুলিশ দিয়ে হেনস্তা, তথ্য প্রমাণ লোপাট, আন্দোলনকারীদের স্লোগানের পালটা জবাব দিয়ে নিজেদের পেশাদারিত্বকেই প্রশ্নের মুখে ফেলে দেওয়া কলকাতা পুলিশের ‘তৎপরতা’, শাসকের আগ্রাসী হুমকি, সিবিআই’র তদন্তের শ্লথতা এসবের মিলিত যোগফলের থেকে জমাট বাঁধা জনগণের আকাঙ্ক্ষা, উত্তর ছিনিয়ে আনার জেদের শক্তি বেশি, অনেক বেশি।

আর জি কর এবং কলকাতা পুলিশ
তদন্তভার পাঁচদিন ছিল কলকাতা পুলিশের হাতে। পুলিশের দাবি, চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই ‘মূল’ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী অন্তত দু’বার সংবাদমাধ্যমের সামনে যা বলেছে তার অর্থ গোটা ঘটনা একজনই ঘটিয়েছে এবং সেই সিভিক ভলান্টিয়ারকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ফলে মিটে গেল তদন্ত, মিটে গেল আর জি কর!
কিন্তু মিটলো না আসলে। পুলিশের তদন্ত এমন প্রশ্ন উঠেছে যার জন্য নিয়ম করে লালবাজারে সাংবাদিক বৈঠক করে সাফাই দিতে হচ্ছে, আর তা করতে গিয়ে আরও নতুন প্রশ্ন, সন্দেহ উসকে দিচ্ছে পুলিশই! রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে কলকাতার পুলিশ কমিশনার— প্রথম দিন থেকেই এই নৃশংস ও ধর্ষণের খুনের ঘটনায় ‘একজনই অভিযুক্ত’র তত্ত্ব দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই সেই সিভিককে আশ্চর্যজনকভাবে হাসপাতাল চত্বর থেকেই গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ! দু ঘণ্টা মধ্যে সব অপরাধ নাকি স্বীকারও করেছিল ধৃত সিভিক। নিছকই একই মদ্যপ সিভিকের যৌন তাড়নার ফলশ্রুতিতে হাসপাতালের ভিতরেই চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের বলে প্রতিষ্ঠা করতে চাইছিল পুলিশ বা সরকারের প্রভাবশালী মহল? সে একা সেদিন ওই ঘটনা ঘটালো, সে একা হাসপাতালে রাতে তিনবার ঢুকলো বেরোলো তারপর ধর্ষণ ও খুনের পরে সল্টলেকে চতুর্থ ব্যাটেলিয়নের ব্যারাকে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল এবং পরের দিন ফের সে হাসপাতাল চত্বরেই এসে ঘোরাঘুরি করতে শুরু করল। এবং একটা হেডফোন সহ রহস্য সমাধান করে দিল!
শুধু তাই নয় আরও তাৎপর্যপূর্ণভাবে কলকাতা পুলিশের তরফে তদন্তের প্রথমেই সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয় নেক্রোফিলিয়ার তত্ত্ব! মানে মৃতদেহের প্রতি যৌন আকর্ষণ! অথচ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট বলছে যাবতীয় আঘাত মৃত্যুর আগে। শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন, হাত পা, কাঁধ, হাঁটু, গোড়ালিতে চোট, হাতের নখ ও যৌনাঙ্গ রক্তাক্ত। যৌনাঙ্গের জায়গা থেকে সাদা থকথকে পুরু চ্যাটচ্যাটে ১৫১গ্রাম তরল মিলেছে। তার রিপোর্ট এখনও হাতে আসেনি তদন্তকারী সংস্থার। অথচ একজনই অভিযু্ক্ত দাবি করল মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশ?
শুধু তাই নয় তথ্য প্রমাণ লোপাটের গুরুতর অভিযোগ পুলিশের বিরুদ্ধেও উঠছে। ইতোমধ্যেই ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে ক্রাইম স্পটে অর্থাৎ চারতলার সেই সেমিনার রুমে একাধিক বহিরাগতের ভিড় ছিল সেই সকালে। ঘটনাস্থলে ঘিরে রাখাও নেই। কীভাবে তা হতে পারে? লালবাজারে বসে পুলিশের দাবি, ৫১ ফুটের সেমিনার রুম, ৪০ ফিট পর্যন্ত কর্ডন করা ছিল। ৪০ ফিটের বাইরে ১১ ফিট এলাকায় অনেক মানুষ ছিলেন! এরকম হালকা কথা বলা যায় এমন সংবেদনশীল ঘটনার তদন্তে? প্রথমত, পুলিশের দাবি ঘটনার পরেই তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে কর্ডন করেছিল এলাকা, হাসপাতাল থেকে নেওয়া সাদা কাপড় দিয়েই প্রাথমিকভাবে তা করা হয়েছিল। যদিও ইতোমধ্যে সিবিআই’র দাবি, ক্রাইম স্পট নষ্ট হয়েছে। শুধু তাই নয় গত বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টে আর জি কর মামলার শুনানি চলার সময়ে প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় রাজ্যকে প্রশ্ন করেছিল, ৯ তারিখ সকাল ১০টা ১০-এ ঘটনার জেনারেল ডায়েরি করা হয়েছে। এর পরে ক্রাইম সিন সিল করা হয়েছে রাত ১১টার পরে, এতক্ষণ কী হচ্ছিল?’ অর্থাৎ সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতেও স্পষ্ট হয়েছিল ক্রাইম স্পট সিল বা কর্ডন করা হয়েছিল সকালে নয়, রাত এগারোটার পরে। গোটা ঘটনায় প্রথম থেকেই কলকাতা পুলিশের আচরণ ও তদন্ত প্রক্রিয়া গুরুতর সন্দেহের মুখে। এর আগে পুলিশ জানিয়েছিল সকাল সাড়ে নটায় চার তলার সেমিনার রুমে ঐ তরুণী চিকিৎসকের দেহ দেখা যায়। পুলিশের কাছে খবর যায় তার পরে। সকাল দশটা দশে পুলিশ আসে। দেহ উদ্ধার করে। অথচ রাত এগারোটা নাগাদ প্রথম ক্রাইম স্পটে কর্ডন করা হয়। মৃতদেহ উদ্ধার করার ১৩ ঘণ্টা পরে ক্রাইম স্পটে কর্ডন করা হয়েছিল অর্থাৎ ঘটনাস্থল সিল করা হয়েছিল। দ্বিতীয়ত, পুলিশ বলছে সেমিনার রুমের ঘটনাস্থলের ৪০ ফুট এলাকা কর্ডন করে রাখা হয়েছিল। ভিডিওতে যেটা দেখা গেছে সেটা বাকি ১১ ফুটের। অর্থাৎ সেমিনার রুম ৫১ ফুটের। সেখানে মিলেছে দেহ। অপরাধ বিজ্ঞানের স্বাভাবিক নিয়মে গোটা ঘরটাই তো ক্রাইম স্পট। এক্ষেত্রে এরকম আলাদা ভাগ হয়? মুখ্যমন্ত্রীর ভাষায় ‘পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ পুলিশ’ কলকাতা পুলিশের এমন আচরণ আদৌ তাঁদের দক্ষতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ নাকি প্রভাবশালী মহলের চাপে বিনীত গোয়েলের কলকাতা পুলিশ আড়াল করতে চাইছে কিছু?
আর মৃতার বাবা-মায়ের দাবি, দুপুর বারোটা দশে তাঁরা হাসপাতালে পৌঁছেছিল। হাতে পায়ে ধরে অনুরোধ করলেও দুপুর তিনটার পর্যন্ত মেয়েকে দেখতে দেওয়া হয়নি। যখন তাঁরা সেমিনার রুমে যায় কোনও কর্ডন করা ছিল না!
কেন মিথ্যা বলছে পুলিশ? কেন পাঁচদিনের তদন্তে একদিনও প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে তলব করা হয়নি? কেন সেদিন ঘটনাস্থলে থাকা একজনকেও পুলিশ ডাকেনি? কেন তড়িঘড়ি পুলিশ চরম অমানাবিক ভাবেই বাবা-মাকে আটকে রেখে দেহ নিয়ে পানিহাটি চলে যায়? কেন শ্মশানে তড়িঘড়ি দেহ পুড়িয়ে দেওয়া হলো পুলিশের উপস্থিতিতে? ছাত্র-যুবকে সেই রাতে হাসপাতালের সামনে দাঁড়িয়েই আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কেন শবদেহবাহী গাড়িতে বাবা-মাকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাঁদের আটকে রেখে সেদিন কেন আগে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? কেন  রক্তাক্ত ক্ষত-বিক্ষত দেহ উদ্ধারের পরেও এফআইআর করতে গড়িমসি, কেন সকালে অস্বাভাবিক মৃত্যুর জেনারেল ডায়েরি করা হলো?
সব প্রশ্নকে ছাপিয়ে মূল প্রশ্ন, কেন কলকাতা পুলিশের উচ্চ পদস্থ আধিকারিক ঘটনার পরে বাড়িতে গিয়ে মৃতার বাবা-মাকে টাকার বিনিময়ে গোটা ঘটনা মিটিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল? এমনকি যখন পরিবারের সদস্যদের কাছে টাকার ‘অফার’ দিয়েছে পুলিশ সেই সময় তাঁদের মেয়ের শেষকৃত্য পর্যন্ত সম্পন্ন হয়নি!

আর জি কর এবং সিবিআই
মুখ্যমন্ত্রীও সিবিআই তদন্ত চেয়েছিলেন। গত ১২ আগস্ট (সোমবার) বলেছিলেন আগামী রবিবারের মধ্যে পুলিশ সমাধান করতে না পারলে সিবিআই-কে দিয়ে দেওয়া হবে। ১৩ তারিখে হাইকোর্টই যদিও তদন্তভার তুলে দেয় সিবিআই’র হাতে। ১৪ তারিখ তদন্ত শুরু করে সিবিআই।
১৬ দিন পেরিয়ে গেছে? তদন্তের অগ্রগতি কোথায়? নতুন গ্রেপ্তার কোথায়? ইতোমধ্যে নয়জনের পলিগ্রাফ টেস্ট করেছে সিবিআই। প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের দু’দফায় পলিগ্রাফ টেস্ট হয়েছে। ধৃত সিভিকেরও পলিগ্রাফ পরীক্ষা হয়েছে। অন্যদিকে এই নিয়ে টানা ১৪ দিন সিবিআই জেরার  মুখে সন্দীপ ঘোষ। প্রতিদিন সকালে সিজিও কমপ্লেক্সে সিবিআই অফিসে ঢোকা ও রাতে সেখান থেকে জেরা শেষে বেরোনো যেন রুটিন হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্দীপ ঘোষে। মোট ১১০ ঘণ্টার বেশি জেরা হয়েছে। সাম্প্রতিককালে সিবিআই’র কোনও তদন্ত প্রক্রিয়ায় টানা দু’সপ্তাহ ধরে এক ব্যক্তিকে ১০০ ঘণ্টার বেশি জেরা রীতিমত বেনজির। কিন্তু তারপরেও গ্রেপ্তারের রাস্তায় কেন হাঁটছে না সিবিআই? 
সিবিআই সূত্রেই  জানা গেছে, সেদিন ঘটনার পরে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে আর জি করে হাসপাতালে এবং সেমিনার রুমে এমন কতজনের উপস্থিতি মিলেছে যা রীতিমত সন্দেহজনক। তাঁরা প্রত্যেকেই আবার প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের ঘনিষ্ঠ বলেই পরিচিত। কেউ বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসক, কেউ মালদহ মেডিক্যাল কলেজের কেউ এসএসকেএম’র চিকিৎসক কেউবা আবার ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ডাটা এন্ট্রি অপারেটর— ঘটনার কিছু পরেই তাঁরা কীভাবে চলে এলেন আর জি করে? মৃতার বাবা-মাকে ঢুকতে না দেওয়া হলেও তাঁরা কীভাবে চার তলার সেমিনার রুম দীর্ঘক্ষণ দখল করে রাখলো, সেখানে বৈঠক করল ? পুলিশকে খবর দেওয়ার আগেও তাঁদের কে খবর দিল? তাঁরা এত তাড়াতাড়ি সেখানো পৌঁছালো কী করে? বর্ধমান, মালদহের চিকিৎসকরা কী কলকাতাতেই ছিলেন ? সাত সকালেই কেন সেদিন ছুটতে আসতে হয়েছিল ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ সুদীপ্ত রায়কে?  কেন তাঁদের আসতে হলো? সন্দীপ ঘোষ তাঁদেরই কেন ডাকলেন তড়িঘড়ি?  ডাটা এন্ট্রি অপারেটরের কাজ কী ঘটনাস্থলে? তাঁকে কেন নিয়ে আসা হলো? মোবাইলের খুঁটিনাটিতে সে সড়গড়, সেরকম কোন কাজে কী ব্যবহার করা হয়েছিল? মৃতার মোবাইল কী ঘাঁটা হয়েছিল? উঠছে একাধিক প্রশ্ন।
ফরেন্সিকের রিপোর্ট আর সাত জনের পলিগ্রাফ পরীক্ষা থেকে উঠে আসা তথ্যের ওপরেই কী নির্ভর করছে সিবিআই তদন্তের গতি, অভিমুখ? ইতিমধ্যেই সিবিআই’র তরফে দাবি করা হয়েছে চারতলার সেমিনার রুমের ক্রাইম স্পট সম্পূর্ণভাবে বিকৃত করা হয়েছে। শুধু এই অভিযোগে নিজেদের অপদার্থতা ঢাকতে পারে সিবিআই?
এরই মধ্যে আবার ধর্ষণ ও খুনের তদন্তের পাশাপাশি সন্দীপ ঘোষের অধ্যক্ষ থাকাকালীন আর জি করে কোটি টাকার দুর্নীতি চক্র, মৃতদেহ নিয়েও কারবার, টেন্ডার দুর্নীতির একের পর এক ভয়াবহ অভিযোগ সামনে আসছে। সেই তদন্তও চলছে সমান্তরালভাবে। সিবিআই দুর্নীতির মামলায় ইতিমধ্যে জেরা করেছে সন্দীপ ঘোষ ও দেবাশিস সোমকে। সিবিআই আর জি করে নৃশংসভাবে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় জেরা করেছে সন্দীপ ঘোষ ও দেবাশিস সোমকে। আবার একই সঙ্গে কোটি কোটি টাকার টেন্ডার কেলেঙ্কারি থেকে হাসপাতালে বর্জ্য পাচার সহ একাধিক কেলেঙ্কারিতেও যুক্ত থাকার তথ্য প্রমাণ মিলেছে এই দু’জনের বিরুদ্ধে। তাহলে কী কোনও যোগসূত্র রয়েছে? তাহলে কী দুর্নীতি চক্র ফাঁসের কোন আশঙ্কার পরিণতিতে এমন নৃশংশভাবে ধর্ষনের শিকার হয়ে খুন হতে হলো নির্যাতিতাকে। তা কী পরিকল্পিত? হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রাতিষ্ঠানিক কোনও দুর্নীতি বা নির্দিষ্ট কারো কোন ঘটনা বা কোন চক্রের কথা কী জেনে গেছিল?

আর জি কর এবং সরকার
ফাঁসি চাই, মুখ্যমন্ত্রী বলছেন। বিলও আনা হবে বিধানসভায় জানিয়েছেন। কিন্তু ব্যাক ডেটেড সই করে আর জি করকাণ্ডে ধিক্কৃত অধ্যক্ষকে মিডিয়ার সামনে সাজানো ইস্তফার চার ঘণ্টার মধ্যেই কেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজে বদলি করে দেওয়া হলো? অধ্যক্ষে কেন প্রাইজ পোস্টিং দেওয়া হলো? কেন স্বাস্থ্য ভবনে এক বছরের সময় ধরে অভিযোগ পাওয়ার পরেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সন্দীপ ঘোষের বিরুদ্ধে? কেন তাঁর ঘনিষ্ঠ চিকিৎসকের সংস্থা মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্টের সব বরাত পেত? কেন তদন্ত শেষ করার আগেই পরিবারকে টাকার অফার দিতে হয়? কেন প্রতিবাদীদের হেনস্তা করা হচ্ছে? কোনও বাংলাদেশের প্রসঙ্গ তুলে পরিকল্পিতভাবে প্ররোচনা ছড়ানো হচ্ছে? কেন নাগরিকদের ভয় দেখানো হচ্ছে? আর জি করে দলীয় বাহিনী হামলা চালালোর পরেও কেন মিথ্যাচার? কেন প্রতিবাদীদের মিছিলে হামলা? কেন সরকার এই ঘটনায় কার্যত একটা পক্ষ নিচ্ছে? প্রতিবাদ ঠেকাতে কেন প্ররোচনা দিচ্ছেন দলীয় দুষ্কৃতীদের?
    
অসংখ্য প্রশ্ন। সবই অধরা। উত্তর চাইছেন বেঁচে থাকা সব মূল্যবোধ, বিবেক। উত্তর চাইছি আমরাও। সব উত্তর নিছক প্রশ্নেই মেলে না। কেড়ে আনতে হয়। লড়াই করতে হয় উত্তরের জন্য। এই বাংলা এখন সেই লড়াইয়ের রাস্তায়, রাগে, ক্ষোভে, ঘৃণা, গানে, কবিতায়,মিছিলে। ‘‘হাত দিয়ে বলো সূর্যের আলো রুধিতে পারে কি কেউ?..’’

 

Comments :0

Login to leave a comment