স্বাধীন বিচারব্যবস্থা ভেঙে পড়লে অন্ধকারের অতলে তলিয়ে যেতে হবে। বিচারপতি নিয়োগের সুপারিশ ফেলে রাখা আসলে গণতন্ত্রের ওপর আক্রমণ।
কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের ভূমিকার বিরুদ্ধে এই ভাষাতেই আক্রমণ শানালেন সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি রোহিংটন ফলি নরিম্যান। কেন্দ্রীয় আইন মন্ত্রী যে ভাবে শীর্ষ আদালতকে আক্রমণ করছেন তাকে ‘কুৎসা’ আখ্যা দিয়েছেন এই প্রবীণ বিচারপতি।
হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি পদে নিয়োগের সুপারিশ পাঠায় সুপ্রিম কোর্টের সবচেয়ে অভিজ্ঞ বিচারপতিদের নিয়ে গড়া কলেজিয়াম। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে কেন্দ্র বারবার আটকে রেখেছে একের পর এক সুপারিশ। নাম ফেরত পাটিয়েছে কলেজিয়ামকে। ফের একই নাম কলেজিয়াম পাঠিয়েছে।
সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনায় প্রকাশ্যে নেমেছেন রাজ্যসভার চেয়ারম্যান এবং উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ও।
মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ে আলোচনাসভায় রিজিজুকে বেছে নেন নরিম্যান। সরাসরি বলেন, ‘‘দেশের আইন মন্ত্রী জেনে রাখুন বিচারব্যবস্থার দু’টি মৌলিক দিক রয়েছে। এক, কমপক্ষে পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে গড়া হয় সাংবিধানিক বেঞ্চ। এই বেঞ্চ সংবিধান সংশোধন সংক্রান্ত বিবাদে রায় দেন। দুই, সংবিধানের ১৪৪ ধারা অনুযায়ী সুপ্রিম কোর্ট সংবিধানের ব্যাখ্যা দিলে তা পালন করতে হয় সরকারকে।
২০১৫’তে বিচারপতি নিয়োগে জাতীয় কমিশন করার পক্ষে সংবিধান সংশোধন বিল পাশ হয় সংসদে। কিন্তু এই আইন সংবিধান সম্মত নয় বলে খারিজ করে কেন্দ্র। বিচারপতিদের কলেজিয়ামই বিচারপতিদের নিয়োগ করবে কেন, এই প্রশ্ন বিজেপি’র বাইরের বিভিন্ন অংশের আছে। স্বাধীন বিচারব্যবস্থার পক্ষে সরব বিভিন্ন অংশেরও রয়েছে। কিন্তু কেন্দ্রের সংশোধনীতে বাছাই প্রক্রিয়ায় সরকারের পছন্দের ‘বিশিষ্টদের’ রাখা হয়। সরকারি হস্তক্ষেপের শঙ্কাও তৈরি হয়। আইন নিয়ে বিবাদের আগে থেকেই সুপ্রিম কোর্টের কলেজিয়ামের সুপারিশ ফেলে রেখেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। কেন্দ্রের ধারাবাহিক আক্রমণের লক্ষ্য বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া, বিরোধী বিভিন্ন অংশই এই মতে সরব।
নরিম্যান বলেছেন, ‘‘সংবিধানের মূল চরিত্র খারিজ করা যায় না সংসদে সংশোধনী পাশ করিয়ে। ১৯৮০ থেকে ‘মূল চরিত্র’ অটুট রাখার দৃষ্টিভঙ্গি বারবার প্রয়োগ করেছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি নিয়োগ আইন বাতিলের ক্ষেত্রেও তা করা হয়েছে।’’
সংবিধানের অন্যতম মূল চরিত্র হলো সরকার, বিচারবিভাগ এবং আইনসভার মধ্যে ক্ষমতার পৃথকীকরণ।
সুপ্রিম কোর্টের উদ্দেশ্যে নরিম্যানের পরামর্শ, ‘‘বিচারপতি নিয়োগ ঘিরে নিয়ম পালনের কিছু আলগা দিক রয়েছে। সাংবিধানিক বেঞ্চ গড়ে তা বাঁধার চেষ্টা করুন। যেমন সুপারিশ পাঠানোর ৩০ দিনের মধ্যে তা প্রয়োগ করতে হবে সরকারকে, এই দায়িত্ব নির্দিষ্ট করুন।’’
Comments :0