কার্বন বাতাসে কম মেশে এমন প্রযুক্তির সহায়তা দেওয়া দরকার উন্নয়নশীল দেশগুলিকে। সহজ ঋণ যাতে এই দেশগুলি পায় তার জন্য একসঙ্গে কাজ করা হবে। বিশ্ব উষ্ণায়ন ঠেকাতে পারে, এমন প্রযুক্তির সমন্বয় প্রসঙ্গে এই ঘোষণা করল দিল্লি জি২০ শীর্ষ বৈঠক।
প্রয়োজনীয় অর্থের দায়িত্ব কোন দেশ কতটা নেবে, তা নির্দিষ্ট করা যাবে কিনা, নির্ভর করছে বৈঠকে আলোচনার ওপর। বিভিন্ন অংশের মত, যৌথ বিবৃতি দেওয়া হলে বোঝা যাবে পুরোটাই কেবেল নিয়মমাফিক ঘোষণা কিনা। এগনোর নির্দিষ্ট পথনিশানা আদৌ জি-২০’র আছে কিনা তার আভাস মিলতে পারে আলোচনার পর। বিশ্বে উৎপাদনের বিচারে কুড়িটি দেশের এই গোষ্ঠীর অবদান ৮৫ শতাংশ, আবার বিশ্ব উষ্ণায়নে দায়ী গ্যাসের ৮০ শতাংশ বাতাসে মিশছে এই দেশগুলি থেকেই।
গোষ্ঠীর মধ্যেই বৈষম্য রয়েছে। ভারতে দারিদ্রের হার অন্য দেশগুলির চেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য খাতে সরকারি ব্যয় জাতীয় উৎপাদনের অংশ হিসেবে সবচেয়ে কম। প্রশ্ন ভারতের মতো অর্থনীতিকে কী শিল্পোন্নত দেশের সঙ্গে সমান মাত্রায় দায় নিতে বলা হচ্ছে ঘোষণাপত্রে? গত বছরের নভেম্বরে মিশরের শরম অল শেখে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলন যদিও ভিন্ন নির্দেশিকা দিয়েছিল। দূষণের জন্য প্রধানত দায়ী শিল্পোন্নত বিশ্বকেই জলবায়ু বান্ধব জ্বালানি রূপান্তর প্রক্রিয়ায় প্রধান আর্থিক দায়িত্ব নিতে নির্দেশ দিয়েছিল। বিশ্ব উষ্ণায়নে দায়ী প্রযুক্তি এবং জ্বালানির ব্যবহার কমাতে শিল্পোন্নত দেশগুলিকে দায়িত্ব নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল প্যারিস জলবায়ু চুক্তিতে। আট বছর আগে, ২০১৫’তে সেই চুক্তি গৃহীত হয়। কিন্তু শিল্পোন্নত বিশ্ব প্রযুক্তি হস্তান্তরের দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসেনি।
দিল্লি শীর্ষ বৈঠকে বিশেষ প্রস্তাবনা তৈরি হয়েছে ‘জ্বালানি রূপান্তরে কম খরচে লগ্নি’ বিষয়ে। এই প্রস্তাবনায় হিসেব, বছরে ৪ লক্ষ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে হবে প্রতি বছর। জ্বালানির ব্যবহারে পুনর্বীকরণ যোগ্য শক্তিতে জোর দিতে হবে। ঘোষণায় বলা হয়েছে, ‘‘পুনর্বীকরণ যোগ্য বিদ্যুতের ব্যবহার তিন গুন করার চেষ্টা করবে জি২০। একদিকে চালু প্রযুক্তিকে পরিবেশ বান্ধব করার কাজ হবে। আরেকদিকে মৃদু নির্গমন সহায়ক নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসার করার চেষ্টা হবে। দেশগুলির নিজের নিজের লক্ষ্য অনুযায়ী ২০৩০’র মধ্যে রূপান্তর ঘটিয়ে পুনর্বীকরণযোগ্য শক্তির ব্যবহার তিনগুন করা হবে।’’
নথিতে বলা হয়েছে, ‘‘ ২০৩০’র আগে উন্নয়নশীল দেশগুলিকে ৫.৮-৫.৯ লক্ষ কোটি ডলার খরচ করতে হবে। কয়লার মতো জ্বালানির ব্যবহার কমাতেই দরকার হবে এই অর্থের। জাতীয় স্তরে দেশগুলি যে লক্ষ্য ঠিক করেছে তার জন্যও এই অর্থ দরকার। পাশাপাশি দূষণমুক্ত নতুন প্রযুক্তিতে রূপান্তরের জন্য বছরে ৪ লক্ষ কোটি টাকা দরকার। উল্লেখ্য, ভারতের সারা বছরের পণ্য ও পরিষেবার উৎপাদনের মূল্য বা জিডিপি’র অঙ্ক ২০২৩’এ প্রায় ৩.৭৫ লক্ষ কোটি ডলার। প্রতি বছর বিশ্বের তারও দেড়গুন অর্থ খরচ করতে হবে জলবায়ুর জন্য।
২০৩০’র মধ্যে সে কাজ করা গেলে ২০৫০ সালে ‘নেট জিরো’ নির্গমনের লক্ষ্যে পৌঁছানো যাবে। ‘নেট জিরো’ অর্থে কার্বনের মতো উষ্ণায়নে দায়ী গ্যাস ততটাই বাতাসে মিশবে যতটা পৃথিবী শোষ করে নিতে পারে। লক্ষ্যণীয়, পেট্রোলিয়াম বা কয়লার মতো জীবাশ্ম জ্বালানির পিছনে ভরতুকি কমানোর দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে ঘোষণাপত্রে।
পরিবেশ আন্দোলনে যুক্ত বিভিন্ন অংশের নজর রয়েছে শীর্ষ সম্মেলনের পর বিবৃতির সম্ভাবনা ঘিরে। যদি বিবৃতি হয়, ধনী বিশ্ব কতটা দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে নিচ্ছে, কতটা গোষ্ঠীর অন্য দেশগুলির ওপর চাপাচ্ছে তা বোঝা যাবে বলে মত এই অংশে
Comments :0