চন্দন মুখোপাধ্যায়
জলপাইগুড়ি জেলার কাঠালগুড়ি চা বাগান, ১৮৯৭ সালের ১৬ আগস্টের সকাল। বাগানের ম্যানেজার হৃদয়নাথ ঘোষকে পাওয়া গেল তাঁর বাংলোর মেঝেতে, গলার নলিকাটা অবস্থায়। সন্দেহের তালিকায় প্রথমেই উঠে এল তাঁর গৃহভৃত্য রঞ্জন সিং ওরফে কাঙালির নাম। ঘটনাস্থলে রক্তাক্ত আঙুলের ছাপের নিরিখে কাঙালিকে খুনি সাব্যস্ত করল পুলিশ। আজকের দিনে এটা সাধারণ একটা বিষয়, কিন্তু সেদিন ছিল না। সরকারিভাবে পৃথিবীতে সেই প্রথমবার কোনও অপরাধের সমাধানে ব্যবহৃত হলো আঙুলের ছাপ। এই সমাধান সম্ভব হয় একটি মাত্র কারণে, সে বছরেরই মার্চ মাসে কলকাতায় স্থাপিত হয়েছিল পৃথিবীর সর্বপ্রথম ‘ফিঙ্গার প্রিন্টস ব্যুরো’। এর পিছনে প্রধান ভূমিকা ছিল দুই বেঙ্গল পুলিশকর্মীর সাবইনস্পেক্টর আজিজুল হক আর হেমচন্দ্র বসুর। তাঁদের তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন স্যার এডওয়ার্ড রিচার্ড হেনরি, তৎকালীন বেঙ্গল পুলিশের আইজি, পরবর্তীকালে লন্ডন পুলিশের কমিশনার। এই দুইজনের নামে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুলিশে দু’টি সর্বোচ্চ পদক চালু আছে। এই গর্বের বাংলার পুলিশের মেধা, কর্মক্ষমতা এবং সামগ্রিক যোগ্যতাকে বিশ্বের দরবারে সম্মান দিয়ে স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড পুলিশের সাথে একই আসনে বসানো হতো।
আজ সেই বাংলার পুলিশ দলদাস, তোলাবাজ হয়ে একদিকে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক সরকার বিরোধী আন্দোলন ভাঙতে নির্মমভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। কোথাও সিপিআই (এম) নেতাকে ধর্মঘট করার অপরাধে প্রকাশ্যে চর মারছে, কন্যাসমা ধর্মঘটী ছাত্রীকে শারীরিক নিগ্রহ করছে, সুদীপ্ত গুপ্তদের খুন করছে, অন্যদিকে সরকারি দলের আধখানা নেতার ধমকে টেবিলের তলায় লুকিয়ে পড়ছে। তাহলে কি এই বাংলার পুলিশ মেধাহীন, মেরুদণ্ডহীন হয়ে পড়েছে? সব পুলিশ কি এই দলে নাম লিখিয়েছে? না, আজও পুলিশবাহিনীর বিভিন্ন স্তরের অনেকে আছেন সঠিকভাবে আইন মেনে কাজ করতে চান, কিন্তু পুরস্কারের বদলে এই সরকার সবরকমভাবে তাদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে। ২০১১সালে সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথেই পুলিশের সর্বোচ্চ স্তরে প্রথম বার্তা গেল সরকার না চাইলে কোনও অপরাধের তদন্ত বা পুলিশি ভূমিকা যেন না থাকে। হয় মানো নয় শাস্তি পাও।
৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবে কয়েকমাস পার করেছেন, পার্ক স্ট্রিট দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনাকে ‘তার নতুন সরকারকে কলঙ্কিত করার জন্য একটি সাজানো ঘটনা’ বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেন সেদিন এটা দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা হিসাবে ঘোষণা করে সবেমাত্র তদন্ত শুরু করেছেন, দ্রুত কলকাতা পুলিশের যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (অপরাধ) পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ ট্রেনিং কলেজে ডিআইজি (প্রশিক্ষণ) হিসেবে পাঠানো হয়েছিল। এরপর বছর ঘুরতে না ঘুরতেই শিলিগুড়ির পুলিশ কমিশনার, কে জয়রামনকে ‘শিলিগুড়ি জলপাইগুড়ি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের’ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা থাকাকালীন আর্থিক কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে মালদার তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জি কিরণ কুমারকে গ্রেপ্তার করার কয়েক ঘণ্টা পরে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসাবে ৩০ নভেম্বর ‘বাধ্যতামূলকভাবে পোস্টিং অপেক্ষায়’ রাখা হয়। বরখাস্ত হওয়ার আগে শিলিগুড়ির তৃণমূল বিধায়ক, প্রাক্তন এসজেডিএ চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য এবং তৃণমূলের জলপাইগুড়ি জেলা প্রধান চন্দন ভৌমিকের মতো রাজনীতিবিদদের কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এবং সরাসরি উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের নাম এই কেলেঙ্কারিতে চলে আসে, তার ফলেই এই শাস্তি।
এটা একটা দিক, অন্যদিকে ধীরে ধীরে গোটা রাজ্যজুড়ে পুলিশের সংখ্যা কমাতে কমাতে এমন জায়গায় দাঁড় করিয়ে দিল, যাতে পুলিশ চাইলেও দ্রুত কাজ করতে না পারে। ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট ২০১৯, ২০২২, ২০২৫ এ দেখা গেল, বিচার ব্যবস্থার চারটি মাপকাঠি—পুলিশ, জেল, আদালত ও আইনি সাহায্যের নিরিখে সামগ্রিকভাবে দেশের ১৮টি বড় ও মাঝারি রাজ্যগুলির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ২০২২ পর্যন্ত ১৭তম স্থানে ছিল, বর্তমানে, ১৮তম (শেষ) স্থানে রয়েছে। এখন রাজ্য পুলিশের ৪৪ শতাংশ কনস্টেবল পদ খালি পড়ে রয়েছে। ২০১৯-এর রিপোর্টের সময় দেখা গিয়েছিল, প্রায় ৩১ শতাংশ, ২০২২ এর রিপোর্ট অনুযায়ী ৪১ শতাংশ পদ খালি পড়ে ছিল। পুলিশের অফিসার পদে চারটির মধ্যে একটি পদ খালি পড়ে রয়েছে। গ্রামীণ এলাকায় থানা পিছু জনসংখ্যা ৩ লক্ষ ৬ হাজারের বেশি আর শহরাঞ্চলে ১ লক্ষ ২৩ হাজারের বেশি মানুষ নির্ভরশীল। পশ্চিমবঙ্গ এই মাপকাঠিতেও শেষ সারিতে। কেরলের গ্রামে গড়ে প্রতি ২৫ হাজার মানুষের জন্য একটি করে থানা রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ-জনসাধারণের অনুপাত ভারতের মধ্যে সর্বনিম্ন শুধু নয় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। সরকারিভাবে ‘ব্যুরো অব পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’-এর তথ্য বলছে পশ্চিমবঙ্গে প্রতি লক্ষ জনসংখ্যায় ১৬৭ জন পুলিশ থাকার কথা, যা ২০২২ সালে ছিল ১০১, বর্তমানে মাত্র ৯৭.৬৬ জন। সরকারিভাবে ২০১১ সালের পর থেকেই প্রতিবছর পুলিশ কমছে, কারণ কোনও নিয়োগ হচ্ছে না। বর্তমানে প্রায় লক্ষাধিক পুলিশের পদ শূন্য। তাই বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে দু’টো বড় ইভেন্ট একসঙ্গে সামলানোর জনবল নেই কলকাতা বা পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের। তাই অনেক সময়ই বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বা হিংসার আবহে আদালতের নির্দেশে রাজ্যে এসেছে কেন্দ্রীয় বাহিনী।
ইন্ডিয়া জাস্টিস রিপোর্ট ২০২৫ এই বৈষম্য তুলে ধরে দেখানো হয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশিং এবং ন্যায়বিচার দেবার ক্ষেত্রে সব রাজ্যের মধ্যে খারাপ পারফর্ম করার কারণগুলির মধ্যে রয়েছে, কম কর্মী নিয়োগ এবং পুলিশ বাহিনীতে উচ্চ শূন্যপদের হার। প্রতিবেদনে বিচারাধীন বন্দিদের অনুপাত উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে, যা বিচার ব্যবস্থাকে আরও চাপে ফেলে। রিপোর্টে আরও দেখানো হয়েছে পশ্চিমবঙ্গে পুলিশ-জনসাধারণের অনুপাত কম থাকার ফলে মূল প্রভাব পড়ছে : ১) পুলিশ বাহিনীর উপর চাপ, ২) জননিরাপত্তার উপর প্রভাব, ৩) ন্যায়বিচার প্রদানে ব্যাঘাত। রিপোর্টে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, এই সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য বহুমুখী পদ্ধতির প্রয়োজন, যার মধ্যে রয়েছে বর্ধিত নিয়োগ, উন্নত প্রশিক্ষণ এবং পুলিশ বাহিনীতে আরও বেশি সম্পদ বরাদ্দ। এই রিপোর্ট বৃহত্তর জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য সামগ্রিক পুলিশি ব্যবস্থার সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার উপরও জোর দেয়। কিন্তু যে সরকার এই গোটা কাঠামো ধ্বংস করার পরিকল্পনা নিয়েছে সে কি এই সংস্কার করবে? উলটে এই ব্যবস্থার বিপরীতে এক নতুন বাহিনীর জন্ম দিল, সরকারি অর্থে দলের সংগঠিত বাহিনী সিভিক ভলান্টিয়ার্স। ১ মার্চ, ২০১৩-এর একটি সংযুক্ত স্মারকলিপি পশ্চিমবঙ্গের বিশেষ পুলিশ মহাপরিদর্শক (সদর দপ্তর) কলকাতা বাদে সমস্ত জেলা পুলিশ সুপার এবং পুলিশ কমিশনারদের কাছে জারি করেছিলেন। ১ মার্চ, ২০১৩-এর স্মারকলিপিতে সম্বোধনকারীদের ‘সরকারি আদেশ অনুসারে নির্দিষ্ট সংখ্যক সিভিক পুলিশ স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের জন্য অবিলম্বে পদক্ষেপ নেওয়ার এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ অধিদপ্তর নিশ্চিত করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। স্বেচ্ছাসেবকদের ১মার্চ, ২০১৩-এর স্মারকলিপির একটি অংশ হিসাবে তৈরি একটি টেবিলে নির্দেশিত পদ্ধতিতে বিভিন্ন জেলা, কমিশনারেট এবং জিআরপি ইউনিটের জন্য নিয়োগ করার কথা ছিল। ২০১৩ সালে রাজ্যে ১,৩০,০০০ হাজার ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার’ নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই বছরের ১০ অক্টোবর কাজ শুরু করে ‘সিভিক পুলিশ ভলান্টিয়ার’। ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে অনেক বিতর্কের জেরে বাহিনীর নাম থেকে ‘পুলিশ’ শব্দটি ছেঁটে ‘সিভিক ভলান্টিয়ার্স’ করে রাজ্য। প্রথমে শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক থাকলেও এখন অষ্টম শ্রেণি উত্তীর্ণ হলেই হয়। ওই বাহিনী গঠনের পরে নিজেদের সংগঠিত করতে এবং দাবিদাওয়ার জন্যে ওরা ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সিভিক ভলান্টিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন’ তৈরি করে। সে বছরের ১০ জুলাই রানি রাসমণি রোডে অনেকগুলি দাবিদাওয়া নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে সংগঠকরা বলেন ‘অনেক দাবি করেও আমরা কাগজ পাইনি। আমাদের জন্য বাজেট বরাদ্দ হয় না। বিভিন্ন খাত থেকে টাকা নিয়ে অনিয়মিত দিনে বেতন দেওয়া হয়। যানবাহন নিয়ন্ত্রণ বা মেলায় ভিড় সামলানো আমাদের কাজ। কিন্তু থানার বড়বাবুর বাজার করা, তাঁর মেয়েকে স্কুলে পৌঁছনো থেকে যাবতীয় অপকর্মের দায়ভাগী হই আমরা। (রাজনীতির) দাদাদের কাজও করতে হয়। এটা তো এক ধরনের শোষণ! আমাদের মধ্যে অনেকে এমএ পাশও আছেন। অন্য চাকরি নেই বলে এমন শোষণ কি ঠিক?’ আরো অনেক দাবি ছিল সেদিনের সভার। সরকার ক্ষিপ্ত হয়ে উঠল। এক ধাক্কায় তখন অনেককে সাসপেন্ড করে বুঝিয়ে দেওয়া হয় সিভিক বাহিনী তৈরি করা হয়েছে সংগঠিত দলীয় বাহিনী তৈরি করতে। ভয়ে সিভিকরা আর খুব বেশি ‘সংগঠিত’ হতে পারেননি। পুলিশের বিকল্পে হাজির করা হলো এক ভয়ংকর ‘সিভিক রাজ’। বাম আমলে অস্থায়ী হোমগার্ড নিয়োগ করা হয়েছিল, যা আজকাল তৃণমূল নেতারা প্রচার করে, কিন্তু একজন হোমগার্ডের দৈনিক মজুরি ৫৬৫ টাকা, যোগ্যতা মেনে নিয়োগ হতো। সেখানে সিভিকদের ৩১০ টাকা। হোমগার্ডদের নিয়োগপত্র, অবসরের সময়ের কিছু সুযোগ-সুবিধা রয়েছে। কিন্তু সিভিক ভলান্টিয়ার মানে ‘কাগজ’ ছাড়াই কাজ। আজ ‘না’ বললে কাল থেকেই চাকরি নেই। এই সময়ে মরিয়া বেকার বাহিনীর সামনে হাজির করা যেকোনো কাজ তারা করতে রাজি হয়ে যাচ্ছে।
বিগত বছর হাওড়ার আমতায় ছাত্র নেতা আনিস খানের মৃত্যুর পর আনিসের বাবা আদালতে অভিযোগ করেছিলেন যে, তার ছেলেকে পুলিশের পোশাক পরা ব্যক্তিরা এবং সিভিক স্বেচ্ছাসেবকরা হত্যা করেছে। ২০১৮ সালের শুরুতে, উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যমগ্রামে স্বেচ্ছাসেবকের সাথে সংঘর্ষে একজন ব্যবসায়ী নিহত হন। ২০২৩ মার্চ মাসে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলায় চুক্তির ভিত্তিতে আদালতের কর্মী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেয় রাজ্য। ২০২৩ এর ৩ সেপ্টেম্বর সেই মামলাতেই প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম বলেন, ‘সর্বত্র কী ভাবে চুক্তির ভিত্তিতে কর্মী নিয়োগ করা যেতে পারে? এখানে পুলিশও চুক্তির ভিত্তিতে নিয়োগ করা হয়। দেশের কোথাও আমি এমন দেখিনি।’ গত ১৭ সেপ্টেম্বর আর জি কর মামলার শুনানিতে সুপ্রিম কোর্টেও প্রশ্ন ওঠে চিকিৎসকদের জন্য সাত দিনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘অস্থায়ী’ নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগের প্রস্তাব নিয়ে। ‘রাত্তিরের সাথী’ বাহিনী নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় বলেন, ‘‘অভিযুক্ত পুলিশের একজন সিভিক ভলান্টিয়ার। নিরাপত্তার জন্য সিভিক ভলান্টিয়ারদের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তো? নিরাপত্তার অভাব ছিল বলেই তো ওই সিভিক ভলান্টিয়ার সারা হাসপাতাল ঘুরে বেড়িয়েছেন। আবার আপনারা নিরাপত্তার দায়িত্বে অস্থায়ী কর্মী রাখবেন?’’ রাষ্ট্র চিরকাল পুলিশকে ব্যবহার করে, তার প্রতিবাদের ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয় শৃঙ্খলার নামে। সারা দেশে বামফ্রন্ট সরকার প্রথম পুলিশের ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়, নিজেদের দাবি আদায়ের জন্যে, সেখানে সরকারের বিরোধী সংগঠন করার অধিকারও ছিল। তৃণমূল, সরকারে এসেই জনগণের রক্ষক পুলিশকে, দলদাস পুলিশ বানাতে চেয়েছে। পুলিশকে দিয়ে অসৎ কাজ করালে পুলিশও নানা অসৎ কাজে লিপ্ত হয়ে যায়, প্রলোভনে অভ্যস্ত হয়ে যায়। সেই ছবি আজ প্রতিদিন দেখতে পাই। এটাই আজকের শাসকদল চেয়েছে।
আশির দশকে গোবিন্দ নিহালনি পরিচালিত ‘অর্ধ্ সত্য’ ছবিতে দেখেছিলাম সৎ পুলিশকর্মী কীভাবে অসৎ রাজনীতিজীবীর শিকার হয়ে হিংস্র হয়ে ওঠেন। এ তো আমাদের সমাজেরই ছবি। অথচ এই বাহিনী প্রাকৃতিক বা অন্য দুর্যোগের সময় প্রাণের বাজি রেখে মানুষের প্রাণ রক্ষা করে। এই পুলিশবাহিনী ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে মানুষকে রক্ষা করতে গিয়ে আহত বা নিহতও হয়ে যায়। তাঁদের মৃতদেহও কিন্তু নাগরিকেরই দেহ, অসহায় উপার্জনজীবীর দেহ। আর এভাবেই সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমাদের ক্ষোভ আমাদেরই প্রতিবেশী পুলিশ কর্মচারীটির প্রতি বা সিভিক ছেলেটির ওপর উগরে দিই। এটাই স্বাভাবিক আর এটাই এই সরকারের পরিকল্পনা।
Comments :0