BOROLI TEESTA

শঙ্কা কাটিয়ে তিস্তায় ফিরল বোরোলি

জেলা

তিস্তায় বোরোলির দেখা মিলল আবার। খুশি মৎস্যজীবী থেকে ক্রেতারা। ছবি: প্রবীর দাশগুপ্ত

দীপশুভ্র সান্যাল, জলপাইগুড়ি

দীর্ঘ প্রায় আট মাস পর তিস্তায় ফিরল বোরোলি। প্রতি বছর বর্ষা এলেই তিস্তায় উঠে আসে সুস্বাদু বোরোলি মাছ। গত বছর সিকিমের পাহাড়ে ধস আর জলে বিষক্রিয়ায় মরে গিয়েছিল তিস্তার বহু মাছ। ফলে আশঙ্কা ছিল ফের কবে মিলবে বোরোলি।
শীতের আগ পর্যন্ত ভালো মাত্রায় দেখা মেলে এই মাছের। উত্তরবঙ্গের অন্যতম জনপ্রিয় মাছ এই বোরোলি। মূলত তিন থেকে চার মাস এই মাছ বেশি থাকে তিস্তায়। তবে, বর্ষা এলেই বেড়ে যায় বোরোলি মাছের আগমন। দেখা মিললেও মৎস্যজীবীরা বলছেন বোরোলি মিলছে কম।
উত্তরবঙ্গবাসী তো বটেই, পাশাপাশি এখানে ঘুরতে আসা পর্যটকেরাও এই মাছের স্বাদে মুগ্ধ। তাই এই ভরা বর্ষায় এখানে ঘুরতে এলেই বোরোলি মাছ চেখে দেখেন না এমন কেউ নেই। এ কারণেই প্রত্যেক বছর তিস্তার বোরলি মাছের চাহিদা থাকে তুঙ্গে। 
এবছর জুন থেকেই বর্ষা প্রবেশ হয়েছে উত্তরবঙ্গে। তবে নাগাড়ে বৃষ্টির কারণে এবং পাহাড় থেকে নেমে আসা জলরাশির কারণে তিস্তার জল ঘোলা, কমেছে বোরোলির সংখ্যা। মাছ কমলেও চাহিদা কমেনি। স্বভাবতই আকাশ ছোঁয়া বোরোলি মাছের দাম।
উত্তরবঙ্গের রুপালি শস্য, বোরোলি মাছ যে প্রায় ছয় ইঞ্চিও লম্বা হতে পারে তা ধারণা ছিল না অনেকেরই। তাই এবছর বাজারে প্রথম ক’দিন মাছ কেনার হিড়িক দেখা যায়নি ক্রেতাদের মধ্যে। অনেকেই ভেবেছিলেন এগুলি বোধহয় অন্য মাছ, বোরোলির মত দেখতে।
তিস্তা-করলার মোহনায় মাছ ধরতে আসা হারান দাস বলছেন, ‘‘গত বছর সিকিমের বন্যায় ঘোলা জলে বিষক্রিয়ায় আর পলিতে চাপা পরে তিস্তার বহু মাছ মরে গিয়েছিল। অনেকে ভেবেছিলেন আর হয়ত কোনোদিন তিস্তায় বোরোলি মাছ পাওয়া যাবে না। এবার বর্ষা প্রায় এক মাস আগে শুরু হয়েছে। তিস্তার জল সমানে বাড়ছে গত এক মাস ধরে। এখন জল কিছুটা কমতেই আবার আমাদের জালে ধরা পড়ল বোরোলি।’’
দাস বললেন, ‘‘তবে এখন পাহাড়ে সমানে বৃষ্টির ফলে জল ঘোলা। তাই বোরোলির পেট হলুদ, জল পরিষ্কার হলে রুপালি বোরোলির পেটটা সাদা হয়ে যাবে। তবে এই মাছ পাওয়া যাবে সেটা পুজোর পর।’’
পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জননেতা জ্যোতি বসুর প্রিয় মাছও ছিল বোরোলি। তা নিয়ে চর্চা রয়েছে এখনও। উত্তরবঙ্গেই তিস্তা, তোর্সা ইত্যাদি যে অল্প কয়েকটি নদীতে পাওয়া যায় এই মাছ তার পার্শ্ববর্তী শহরের বাজারগুলোতে তিন-চার ইঞ্চি মাপেরগুলিরই কেজি প্রতি দাম হাজার টাকার এপার ওপার। তাও একদম টাটকা বোরোলি পাওয়ার সম্ভাবনা কম বিষপ্রয়োগ বা ইলেকট্রিক শক আর বরফে সংরক্ষণের ফলে।
প্রবল বর্ষায় তিস্তার জল বাড়ায় জলপাইগুড়ির তিস্তা পাড়ের জুবিলী পার্ক থেকে বাঁধ ধরে প্রায় আট কিলোমিটার। নদীতে জল বাড়লে মাছ আর ভেসে আসা গাছের সংখ্যা বেড়ে যায়। আর এবার তো টেমাই আর নানাধরনের জাল নিয়ে স্থানীয়রা রীতিমতো মাছ ধরার উৎসবে মেতে উঠেছেন। কিছু মৎস্যজীবীর কাছে ছয় ইঞ্চি সাইজেরও বোরোলি দেখা গেল। 
মৎস্যজীবীরা বললেন, যে বোরোলি যত বড়, চর্বির আধিক্যের জন্য তার পেটের রঙ তত হলুদ। ভাজা, পাতলা ঝোল আর সরষে বোরোলি তো অসাধারণ।
মৎস্যজীবীদের কাছ থেকে নিতে হলে যেতে হবে সকাল দশটা বা বিকেল চারটের মধ্যে। তারপর সব বোরোলি চলে যাবে আড়তদারদের কাছে। খুব বড় সাইজেরগুলি আটশো টাকা কেজি। যেগুলি বাজারে বারোশো টাকায় বিক্রি হয়। 

Comments :0

Login to leave a comment